আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভিক্ষাবৃত্তি একটা মনোস্তাত্তিক বিপর্যয়ের নাম।

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি ভিক্ষুক বা ভিক্ষা কথাটা শুনলেই আমাদের মনে ভেসে উঠে এক ধরনের মানুষের চেহারা যারা দীনহীন অবস্থায় অত্যান্ত কাত কন্ঠে অন্যের কাছে সাহায্য চাইছে - চাইছে অর্থ অথবা খাবার। এই যে মানুষটা অন্যের কাছে সাহায্য চাইছে - সে কি আসলে তার বাঁচার সম্ভাব্য সবগুলো উপায় নিয়ে ব্যর্থ হয়ে আরেকজন "মানুষের" কাছে হাত পাতছে? বেশীর ভাগ উত্তর হবে - না! বেশীর ভাগ রাস্তার ভিক্ষুক তাদের পেশা হিসাবে ভিক্ষা করে। তাদের জন্যে এই অপমানজন উপার্জনের উপায় থেকে কি বের করে দেওয়া যায় না? চেষ্টা করলে অনেকটুকু সাফল্য সম্ভব। দেখা যাক এই রাস্তার ভিক্ষুকরাই কি একমাত্র ভিক্ষক - নাকি এই ভিক্ষাবৃত্তিটা একটা সামাজিক নর্ম হয়ে আছে। (২) ব্যক্তিগত ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িত কতজন মানুষ? সরকার একটা উদ্যোগ নিয়েছিলো তাদের জরীপ করার - কিন্তু এই ভিক্ষকদের ছবি দেখিয়ে বিদেশ থেকে অর্থ এনে বিলাসী গাড়ী চালানো এনজিওরা হাইকোর্টে রিট করে তা বন্ধ করে রেখেছ।

ধরা যাক ঢাকায় ১০ হাজার প্রান্তিক ভিক্ষুক আছে যাদের কোন সহায় সম্বল নেই এবং শাররীক এবং মানসিক ভাবে কর্মক্ষমতা নেই। তাদের পূর্নবাসন করার মতো ক্ষমতা কি বাংলাদেশ সরকারের নেই। ১ কোটি লোকে শহরে ১০ হাজার মানুষকে দুই বেলা খাবার যোগার করার মতো অবস্থা কি নেই? অবশ্যই আছে। অভাব শুধু মানসিকতার এবং উদ্যোগে। একদল মানুষ আরেকদল মানুষকে করুনা করে নিজেরা আত্নতৃপ্তিতে ভোগার সুযোগ হারাতে রাজী নন।

ভাল করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে - একজন মানুষ যখন হাত পেতে আরেকজনের কাছ থেকে কিছু গ্রহন করে - সেখানে মানবতা কতটা ভুলন্ঠিত হয়। লক্ষ্য করা দরকার - দান আর ভিক্ষা এক কথা নয়। দন তখনই মহান হয় - তা স্বউদৌগে প্রদান করা হয়। (২) আরেকদল ভিক্ষুক আছে - যারা ধর্মের নামে ভিক্ষা করে। আশকোনায় (হাজিক্যাম্পের কাছেই) একটা মসজিদ দেখে রীতিমতো হা হয়ে ছিলাম অনেক্ষন।

কারন মসজিদের ভিতর আর বাইর পুরোটাই দামী মোজাইক আর চকচকে চীনামাটির তৈরী - রীতিতো আলো ঝলক দিচ্ছে - আর তা আশ পাশে সারি সারি বস্তি। মসজিদের বাইরে একটা বিরাট দান বাক্স আর মাইকে মসজিদে দান করে দোজাহানের অশেষ নেকী হাসিলের জন্যে আহ্বান জানানো হচ্ছে। আসলে কি সেই বস্তির পাশে চকচকে একটা মসজিদ দরকার ছিলো? পুরিপুরি ভিক্ষার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা মসজিদ কি আসলে কোন কল্যানে আসবে? আল্লাহ ঘর বানানো নামে বান্দার কাছে সাহায্য চাওয়া কি ঠিক? এইটা এক ধরনের ভিক্ষাবৃত্তি - তার ধারাবাহিকতা দেখি দেশের বাইরেও - টরন্টোয় বাঙ্গালী পাড়ার মসজিদ তিনটি আর লরেন্স/মিডল্যান্ড এ পাকিস্তানীদের ব্যবস্থাপনায় একটা মসজিদ ছাড়া আর কোন মসজিদে নামাজের পর গলা ছেড়ে "ভিক্ষুকের মতো" মসজিদের জন্যে দানের আহ্বান করতে দেখিনি। কিন্তু বাকী মসজিদগুলো বেশ ভালই চলছে - আর বলাই বাহুল্য সেইগুলো চলছে "দান" এর অর্থেই। তফাৎটা শুধু "ভিক্ষাবৃত্তির" মানসিকতার।

এই ভিক্ষা বৃত্তির উপর গড়ে উঠা মসজিদগুলোতে প্রায়ই অর্থ নিয়ে কোন্দল লাগে - মামলা করে এক দল আরেকদলের নামের - এই মামলার খরচের এক অংশ "ভিক্ষা" অর্থ থেকেই যোগানো হয়। ভিক্ষা করে বিশাল চকচকে মসজিদ গড়ার কতটা যোক্তিকতা আছে তা বলার আগে যদি কেউ টরন্টোর বড় রাস্তা দিয়ে গাড়ী চালানোর সময় বিশাল বিশাল চার্চগুলো দিকে তাকায় - তাহলে হয়তো কিছু উত্তর সেখানে পাওয়া যাবে। তখন মসজিদ বানানো আর মসজিদ আবাদ করার মধ্যে তফাৎটা বুঝা সহজ হবে। (৩) বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি জন্মের পর থেকেই রাষ্ট্রীয় ভাবে ভিক্ষাবৃত্তিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। হাস্যকর ভাবে চকচকে স্যুট পড়ে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী দেশ দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন সাহায্যের জন্যে।

কিন্তু এখন তো দন বদল হয়েছে। কিন্তু মানসিকতা কি বদলিয়েছে? একটা দেশকে ভিক্ষাবৃত্তির থেকে বের হওয়ার জন্যে নিজেদের সম্পদকেই গুরুত্ব দিতে হয়। আর সরকারের জন্যে একটাই পথ - তা হলো কর সংগ্রহ করা। বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র কয়েক লক্ষ মানুষ কর দেয়। আর বিদেশ ভ্রমন করে কয়েক কোটি।

যদি বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যারা করযোগ্য তারা সঠিকভাবে কর দিতো তা হলে কি বাইরের কাছে হাত পাততে হতো? শুধুমাত্র বিদ্যুৎ আর পানির বিল ঠিকমতো পরিশোধ করলে বিদ্যুৎ আর পানি সমস্যা সমাধানের জন্যে কারো কাছে ধর্না দিতে হতো কি? (৪) মুলত ভিক্ষাবৃত্তি একটা মানসিক অবস্থা ( সাইকোলজিক্যাল স্টেইজ) - যেখানে আত্নসন্মান আর আত্নমর্যাদাবোধ কাজ করে না। নিজের সম্পদ আর সাধ্যের মধ্যেই নিজেদের ব্যবস্থাপনাকে নিম্চিত করে - তার থেকে আসনে আগানোর মাধ্যমেই ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বের হওয়ার পথ আছে। সবচেয়ে আগে দরকার - আত্নসন্মান আর আত্নমর্যাদা বোধের উন্মেষ। যেমন নিজেকে মানুষ হিসাবে সন্মান করাবো আর তেমনি আরেকজন মানুষকে হাত প্রসারিত করে নিজেকে অসন্মানিত হতে দেবো না। ঠিক তেমনি সামাজিকভাবেও নিজেরা সচেতন থেকে ভিক্ষার মাধ্যমে কোন অগৌরবের স্থাপনা না বানিয়ে - নিজেদের সাধ্যের মধ্যেই নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ রাখবো।

রাষ্ট্র হিসাবেও একই কথা - প্রশাসনযন্ত্রকেও নিজেদের সাধ্যের বাইরে কোন চিন্তা না করে নিজেদের সম্পদকেই কাজে লাগানো আর সম্পদ সংগ্রহের বিষয়ে সচেতন হওয়া আর সুযোগ পেলেই অন্য রাষ্ট্রের মানুষ যখন বিপদাপন্ন হয় তাদের যথাসাধ্য সাহায্যের হাত প্রসারিত করার মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তির মানসিকতা থেকে বের হওয়া যাবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.