আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তোমাদের এই নগরীতে

একটি বানানভুলসর্বস্ব ব্লগ

বার্মা যাত্রাকালে ঝড়ের পর যাত্রীদের দুর্দশা দেখে শ্রীকান্ত বলেছিলেন, “সাড়ে বত্রিশ ভাজার মত আমরা মিশিয়া গিয়াছিলাম, এই মাত্র যে যার কোটে ফিরিয়া আসিয়াছি”। ঢাকা শহরের অবস্থাটাও ঠিক তেমনি, কিন্তু কেউ কারো কোটে এখনো ফিরে যেতে পারেনি। ঢাকা শহর ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ এর মত নগরবাসীকে নিজের পাকস্থলীতে পাচার করে দিয়েছে। এখন শুধু ভিতরে হজম হবার অপেক্ষা। ঢাকার প্রতি আমার অনীহা সর্বজনবিদিত।

এখানে পা রাখার পর থেকেই আমার শহরটার প্রতি বিতৃষ্ণা ভাইরাসের মত আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। তবুও আমি মাঝে মাঝেই ঢাকা আসি শুধু একটা কারণে। রাজশাহীর বিশুদ্ধ বাতাসে যখন আমি অক্সিজেনের আধিক্য অনুভব করি ঠিক তখনই একটু হাওয়া বদলের জন্য সীসা আর কার্বন মনোক্সাইড যুক্ত বাতাসের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। শাস্ত্রে আছে যে বিশুদ্ধ বাতাস মানুষের আয়ু বৃদ্ধি করে, কিন্তু এত বেশি আয়ু দিয়ে কি করব কখনও বুঝতে পারিনা, তাই ঢাকায় আগমন। ঢাকা আসলে আমি নিকুঞ্জে ইয়ার-দোস্তদের বাসায় উঠি।

ট্রেন থেকে নেমে ওই এলাকায় ঢোকার পরই আমার মনে হয় আমি কোন এক আধুনিক ধ্বংসস্তুপে পদার্পণ করেছি- ভাঙ্গা রাস্তা, এখানে-সেখানে কন্সট্রাকশন এর সরঞ্জামাদি, যেন এখানে এক দল স্বেচ্ছাসেবী রেস্টোরেশন এর কাজ করতে করতে ফান্ডের অভাবে কাজ ফেলে চলে গেছে, রাস্তার পাশের বালুর স্তুপ দমকা হাওয়ার সাথে ষড়যন্ত্র করে নগরবাসিকে মরুঝড়ের অনুভূতি দিতে চেষ্টার বিন্দুমাত্র ত্রুটি রাখেনা। “রাস্তা মানেই অবারিত নদী”-কথাটা বোধহয় শিরোনামহীন এই এলাকার রাস্তা দেখেই লিখেছিল, দুই কদম পর পর জলটলমল গর্তগুলো নদীমাতৃক দেশের নাগরিকদের নদী বাহুল্যতার অহংকারে পানির অফুরন্ত সাপ্লাই দিতে কোন কার্পণ্য করেনা। আমি কোন নির্দিষ্ট একটা এলাকা ছোট করে দেখাতে চাইনা। প্রতিটি এলাকাই বড় এবং হাড়ির সব ভাতই মোটামুটি সমান সিদ্ধ। তবুও তলানির চালগুলো বেশী নরম আর উপরের কিছু ভাত এখনও ভালভাবে সিদ্ধ হয়নি।

শহরটা অস্থিরমতি কিশোরের মত সদা ধাবমান, প্রতি মুহূর্তেই মরীচিকার মত একটু একটু করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, শহরবাসীরাও ছোট্ট শিশুর মত আলো-ছায়ার সেই চির অধরা ফুল ধরার জন্য চরমভাবে মগ্ন। সবাই ব্যস্ত, সবাই ছুটছে, সবাই অন্যের আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এমনকি রিক্সাগুলোও দানবীয় চারচক্রযানগুলোকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে দ্বিধা করেনা। কোন বহুতল দালানের ছাদ থেকে মাইলব্যাপী থেমে থাকা যানগুলোকে সারি বেধে থাকা পিঁপড়ার সাথে তুলনা করলে খুব একটা ভুল হবে বলে আমি মনে করিনা। যাই হোক, এতক্ষন পর্যন্ত যা বলেছি তার ফলাফল এই হতে পারত যে ঢাকাবাসিরা আমাকে এখান থেকে খুব জলদিই বিতাড়িত করে।

সেটার প্রয়োজনীয়তা বোধহয় হবেনা কারণ আমি খুব শ্রীঘই নিজের ছোট্ট শহরে ফিরে যাচ্ছি, তবে আবার কোন একদিন তোমাদের শহরে আসব, “আবার হবে দেখা, তোমাদের এই অচিন নগরে"।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.