আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি চেষ্টা ও সফলতার গল্প

কাজ করি সত্তিকারের মানুষের তরে ।

জামালপুর শহরের পিছিয়ে পড়া এলাকার মধ্যে ডাকপাড়া ও বানিয়া বাজার অন্যতম। বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধান ছাড়াই চলে আসছিল দিনের পর দিন। সমস্যাগুলো যেন একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে আলিঙ্গন করে থাকে, আর ডেকে নিয়ে আসে আরো বহু। সামাজিক সমস্যা থেকে শুরু করে বাল্য বিবাহ ও যৌতুকের মত ভয়ানক ব্যধি কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল এই ডাকপাড়া ও বানিয়া বাজার বস্তি এলাকাকে।

এই এলাকায় ছিল না স্যানিটেশন, ছিল না পয়ঃ ও পানি নিস্কাশনের সঠিক কোন অবস্থা, ছিল না উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা। সমস্যা যখন প্রকট তখনই জামালপুর পৌরসভার উদ্যোগে স্টিপ-২, ইউ.জি.আই.আই.পি-২ সহ বেশ কটি প্রকল্পের মাধ্যমে জামালপুর শহরের বিভিন্ন সি.বি.ও ও বস্তির সাথে ডাকপাড়া ও বানিয়া বাজার কে সম্পৃক্ত করা হলো। আমিও প্রথমে স্টিপ-২ ও পওে সি.বি.ও এর প্রকল্পের সাথে যুক্ত হয়ে একজন সাধারণ সদস্য হিসাবে নিজেকে সম্পৃক্ত করলাম । অতীত দুর্দশা/সমস্যা বর্ণনাঃ আমার স্বামী ব্যবসায়ী হলেও ০৪ জন সন্তান নিয়ে সংসার পরিচালনা করা খুবই কষ্টকর হয়ে যেত। অনাহার ছিল নিত্যদিনে সঙ্গি।

বর্ষায় চালচুঁয়ে পরে সাড়ারাত পানি, সেই পানিতে সবাই ভিজে একাকার হয়ে বসে থাকি দিনের আলোর অপেক্ষায়। দিনের আলোও ফুটে না রাতে অন্ধকারও কাটে না। এদিকে সন্তানদের আহারের ব্যবস্থা করবো নাকি বস্ত্রের ব্যবস্থা করবো সে নিয়েই চলত জীবন যুদ্ধ। তার ভিতর একদিন বিষফোঁড়ার মত চেপে ধরল স্বামীর ব্যবসার মন্দাভাব। তখন দিকবিদিক দিশেহারা অবস্থা।

এই দিশেহার অবস্থাই আমাকে এনে দিয়ে ছিল এক অসিম শক্তি, যা জেগে উঠেছিল কখন আমি নিজেও বুঝতে পারিনি। কিছু করার প্রচেষ্টা তখন থেকেই শুরু, শুরু হলো এক নতুন ট্রেনের দ্রুততার সাথে পারি দেওয়ার খেলা। আমিও ভাসিয়ে দিলে নিজেকে। সুযোগ প্রাপ্তিঃ স্টিপ-২ প্রকল্প সঞ্চয়ি সদস্যদের স্যানিটেশনের আওতায় নিয়ে এলো। শুধু আমাকেই নয় সম্পূর্ণ মুসলিমাবদ বস্তিকে।

পানি নিস্কাশনের জন্য তৈরী করা হলো ড্রেন। চলাচলের জন্য ফুটপাথ, মেয়েদের সম্ভ্রম বাঁচিয়ে গোছল করার জন্য বাথরুম। অন্ধকারকে পিছেঠেলে দিনের আলোয় চলাচলের জন্য লাগানো হল স্ট্রিট লাইট। এসবের পরও আমি পেলাম আমার নতুন ট্রেনের টিকেট ১০,০০০.০০ টাকা ঋণ। সেই ঋণ নিয়ে আমি শুরু করলাম হস্তশিল্পের ব্যবস্যা।

কিন্তু পন্য তৈরী করলেই হবে না চাই তার ব্যবসায়ীক প্রসার। আমার স্বামী তার শ্রম আমাকে দিয়ে পরিচিত করে দিল বিভিন্ন হস্তশিল্প ক্রেতাদের সাথে। তৈরি হয় নতুন পন্য আর গুচতে থাকে আমার দৈন্যতার কাহিনী। সময়ের ব্যাবধানে যখন স্টিপ-২ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে আসে তখনি সুযোগ হয়ে উঠে আরো একটি নতুন প্রকল্পের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার । স্টিপ-২ প্রকল্পের ঋণ আর নতুন প্রকল্প ইউ.জি.আই.আই.পি-২ এর পরার্মশ ও সহযোগীতা ।

কর্মকান্ড গ্রহনঃ ১০,০০০.০০ টাকা ঋণ নেওয়ার পর মার্কেট থেকে কাপর এবং সুই সুতা নিয়ে নিজেই শুরু করি সেলাইয়ের কাজ। যারা কাপরের উপর ডিজাইন ছাঁপ দেয় তাদের কাছে ছাপানো পর থেকে একটি জামা কিংবা বেড কভার সম্পূর্ণ হতে সময় লেগে যায় বেশ কিছু দিন। এই ভাবে প্রথম চালান আমি মার্কেটে বিক্রয় করে বেশ ভালে লাভ পাই এবং পুনরায় শুরু করি কাজ। লাভের টাকা সংসারের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করেও কিছু টাকা থেকে যায়, সেই টাকাও ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করে পাই বেশ সুফল। আস্তে আস্তে আমি আমার ব্যবসায় এলাকার অন্যান্য মেয়েদের নিজেই ট্রেনিং দিয়ে আত্মনির্ভর করার প্রচেষ্টা করতে থাকি।

একি সাথে নতুন প্রকল্প ইউ.জি.আই.আই.পি-২ এর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পরিচিত হতে থাকি নতুন নতুন মানুষের সাথে, ফলে তৈরী হতে থাকে নতুন নতুন সুযোগ । প্রাপ্ত সুফলঃ প্রাপ্ত সুফলের ভিতর উল্লেখ্য যোগ্য ১০০০০.০০ টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে আমি প্রথম তৈরী করি ৬টি থ্রিপিস, ৮টি টুপিস, ২টি নস্কিকাথা ও একটি বেড কভার। তৈরী কাপর বিক্রয় করে পাই ১৩৫০০.০০ টাকা। ১০০০.০০ টাকা সংসারে ব্যয় করে বাদবাকী সবই বিনিয়োগ করি। এভাবে ৬ মাস চলার পর আমার বিনিয়োগের পরিমান দাড়ায় ৩০০০০.০০ টাকা।

বর্তমানে আমি প্রতিমাসে ৪০০০০.০০ টাকা বিনিয়োগ করে ২০জন মেয়েদের তাদের পারিশ্রমিক প্রদানের পরও আমার নিজের কাছে থেকে যায় ৫০০০.০০ টাকা। লাভ দিয়ে আমার সংসারের চাহিদা মিটে যায় এবং অতীতের সেই ভয়াবহ দূরদশার কথা চিন্তা করে এখনও গাঁ শিউরে উঠে। এখন আমি স্বপ্ন দেখি নতুন দিনের, নতুন সম্ভাবনার । এমন একটা সময় ছিল যখন কোন এনজিও, প্রকল্প এর নাম শুনলেই মনে হত যাদের কাজ নেই তারাই এসব আজেবাজে মিটিং করে সময় পার করার ব্যাবস্থা মাত্র । আর আজ আমার সে ধারনাটা পাল্টে জীবনে নিয়ে এসেছে নতুন কওে স্বপ্ন দেখার প্রেরনা ।

প্রভাব ও প্রত্যাশাঃ আমার সফল উদ্যোগ লক্ষ্য করে এখন ডাকপাড়া ও বানিয়া বাজার এলাকার অনেক মেয়ে নিজেরা হস্তশিল্পের কাজে মনোনিবেশ করেছে। মেয়েরা এখন নিজেরাই স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে নিজ চেষ্টায়। প্রত্যাশা করি জামারপুর পৌরসভার এই প্রকল্প উদ্যোগের মত আরো উদ্যোগের। একটি সফল উদ্যোগ এনে দিতে পারে অনেক অবহেলিতের বেঁচে থাকা প্রত্যাশা। মানবিক দৃষ্টিকোন বৃদ্ধির পাশাপাশি মনের দৃঢ়তা বৃদ্ধির জন্য চাই জনসতেনতামূলক প্রকল্প।

চাই সুদমুক্ত সফল উদ্যোক্ততাদের জন্য ঋণ, যাতে উদ্যোগীদের বিনিয়োগ ভাবনা থেকে মুক্ত থাকতে পারে। চাই তেরীকৃত পন্য বাজারজাত করার কেন্দ্র, যাতে পন্যদির সঠিক দাম পেতে কোন সমস্যা না হয়। আজ আমরা এতটাই সচেতন যে, পৌরসভার বা কোন প্রকল্পের যে কোন ডাকে হাজার মানুষের সাঢ়া জাগে । উপসংহারঃ অতীতের দিকে চেয়ে আজ মুচকি হেসে বলতে ইচ্ছে করে, আজ আমি সফল তাই আমার দিকে দৈন্যতা হাত বাড়াতে পারে না। আজ আমার সন্তানেরা পাচ্ছে খাদ্য, বস্ত্র ও পারছে পড়াশোনা করতে।

সন্তানের হাসি কাছে ম্লান হয়ে যায় অতীত। এলজিইডি, জামালপুর পৌরসভা, স্টিপ-২ প্রকল্প ও নতুন প্রকল্প ইউ.জি.আই.আই.পি-২ আজ আমাকে যে সুযোগ করে দিয়েছে তার জন্য আমি অনেক কৃতজ্ঞ। দারিদ্রতা নিরসনে ক্ষুদ্রঋণের সুদের মাত্রা আরো কমিয়ে এনে জনগনকে উদ্যোগী করা প্রয়াস রাখার আহ্বান রাখছি। আহব্বান জানাছি নতুন করে বাচার স্বপ্ন দেখাতে আমার মত নতুন কোন নারীকে ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.