আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি তোমাদের বাংলাদেশের জাতিসত্তা বিবর্জিত,আজন্মপাপী,বঞ্চিত,লাঞ্ছিত এক সংখ্যালঘু হতভাগা হারাধন বলতেছি .....

একটু ভাবতে হবে.......... আমি জানি সেই সাতচল্লিশ থেকে একাত্তর পরিক্রমায় তোমাদের এই ভূখন্ডে আমার জন্মটাই আজন্মপাপ আর অভিশপ্ত । আমার এই পাপের প্রায়শ্চিত্ত আর গ্লানি আমি যুগ থেকে যুগে বয়ে চলছি। বিশ্বাস কর অনেক ঝড় তুফানের পরেও নাড়ির টানের ভালবাসায় এই মাটির অন্ধমোহ তবু ছাড়তে পারি নি। বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি নি আমার অভিশপ্ত জন্মের রক্তের ঋণের সাথে । সাতচল্লিশের দাঙ্গায় ওরা ধর্মের দোহায় দিয়ে আমার পূর্ব পুরুষদের অনেককে পিটিয়ে মেরেছিল ।

বাধ্য করেছিল জন্মভূমির দাবি ছেড়ে আজানা মরুভূমির যাযাবর বাসিন্ধা হতে । সেইবার সবকিছু হারিয়েও আমি দেখেছি আমার পরিবার সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে একটি নিরাপদ ভবিষ্যতের আলিঙ্গন ত্যাগ করেছিল শুধু জন্মভূমির প্রতি ভালবাসার দায়বদ্ধতার তাড়নায় । আর এই ভালবাসার প্রতিদানে একাত্তরে ওরা আবারো আমার কপালে সিল লেগে যাওয়া সিঁদুরের দোহায় দিয়ে আমার চোখের সামনেই আমার পিতামহকে জবাই করে মেরেছিল। জ্বালিয়ে দিয়েছিল আমার পূর্বপুরুষের শেষ সৃতি ও মাথা গোঁজার একমাত্র সম্বল বাড়িটা । সেইবারও জন্মভূমির এমন অমোগ সংকটে চোখ বুঝে সহ্য করতে পারি নি।

হাতে তুলে নিয়েছিলাম অস্ত্র । মাতৃভূমিকে শত্রু মুক্ত করে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এক বুক আশায় নতুন একটি স্বপ্নের মোহ নিয়ে ফিরে আসতেই দেখি আমার স্বপ্নের জোড়া তালি দেয়ার মত কোন কিছুই অবশিষ্ট ছিলনা । ধর্মীয় পুরানো হায়েনারা আমার পরিবারের সদস্যদের সারিবদ্ধ বৃভৎস লাশ শকুনের খাবার বানিয়ে রেখেছিল । নিজ হাতে এত গুলো প্রিয় মানুষের চিতাই আগুন দেয়ার পর হয়ত রক্তের বন্ধনের শূন্যতা বেশ পীড়া দিয়েছিল, কিন্তু আমি হারাধনের তবু কোন অক্ষেপ ছিল না, সংকোচ ছিল না, ক্ষোভ ছিল না কারণ এত রক্ত আর ত্যাগের বিনিময়ে হলেও আমি একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি । কিন্তু কে জানত এই রক্ত আর ভালবাসার অশ্রু জড়িয়ে থাকা মাতৃভূমি কোন দিনও আমার হবে না ।

যে চেতনা আর আদর্শে বলিয়ান হয়ে এতটা বছর এই মাটি কামঁড়ে ধরে ছিলাম । নিজের স্বার্থ আর ভবিষ্যতের মোহ জলাঞ্জলি দিয়ে মাতৃভূমিকে ভালবেসেছিলাম অথচ আজ এতটা বছর পরে এসে সেই ট্র্যাজেডি বিদ্ধ প্রশ্ন আমাকে আঘাত করতেছে। কেন , কি জন্য, কিসের মোহে, তিলে তিলে নিজেকে উৎসর্গ করেছে তুমি হারাধন ?? কি পেলে তুমি ? তোমার মাথার উপরে চেয়ে দেখ কোন আকাশ নেই আছে এক ধুঁ ধুঁ মরূদ্যান । তোমার কোন দেশ নেই । কোন সীমানা নেই ।

সংবিধানে তোমার কোন অস্তিত্তেই নেই । যে দেশের জন্য তোমার এত গর্ভ এত অহংকার সে দেশের ত্রি সীমানাই তুমি একজন আগন্তুক মাত্র । এই যে সেই দিন পুরানো শকুন গুলো আবারো তুমি হারাধনের বাড়িতে আগুন দিল,লুটপাত করল,বেদম প্রহার করল । ভেঙ্গে দিল তোমার স্বাদের প্রতিমা,জ্বালিয়ে দিল মন্দির । কই তোমার সাহায্যে তো কোন দরদী বন্ধু এগিয়ে আসে নাই ? দুই একটা সংবাদের শিরোনামে তোমার অসহায়ত্ত্ব নিয়ে ওরা রাজনীতি করেছে মাত্র হয়ত কিছু দায়ছাড়া সহানুভূতি তোমার কপালে জুটেছে ।

কিন্তু ওরা কি খবর নিয়েছে কিভাবে আজকে চারটা দিন তুমি তোমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খোলা আকাশে রাত্রি যাপন করতেছ ? কিভাবে এত গুলো অসহায় মুখের খাবার যোগান দিচ্ছ? কতটা নিরাপত্তাহীনতাই, ভয় আর আতংকে তুমি সময় কাটাচ্ছো কেউ কি খবর নিয়েছে? তুমি মরলে প্রধানমন্ত্রী শোক জ্ঞাপনের সময় নেই । মানবতাদরদীদের কোন এনজিও অর্থায়ন করবে না তাই তাঁদের ও তুমি পাশে পাবে না। দেশে প্রয়োজনে আরো দশটা বিনোদন পার্ক হবে কিন্তু তোমার আর নতুন ঘর তোলা হবে না হারাধন। শাহবাগে প্রয়োজনে আরো কোটি মোম জ্বালানো হবে কিন্তু তুমি হারাধনের আজন্ম আধাঁর ঘরের বাতি কখনো জ্বলবে না । তিন মিনিটের নিরাবতা পালনের শান্তির মহীসোপানে তলিয়ে যাবে দেশ কিন্তু তোমার ষার্ট উর্ধ বৃদ্ধ মা যে এই হায়েনাদের থাবায় চির স্তব্দ হয়ে নিঃশব্ধ বিদায় নিল এই খবর পৃথিবী জানবে না ।

একদিন হয়ত এই বহু হিসেব নিকেশের গণজাগরণ বিদ্ধেষী ধর্মাদ্ধ পেতাত্তাদের ত্রাসের অগ্নিকুণ্ডে তুমি নিজেই হারিয়ে যাবে, কিন্তু তুমি সংখ্যালঘু হারাধনের এই নিঃস্বার্থ দেশপ্রেম, এই মমতা, এই ত্যাগ আমাদের আয়েশী ইতিহাসের বইয়ে কখনো চাপা হবে না। হয়ত কেউ জানবেও না। শুনে রাখ হারাধন, এই দেশে রাজাকারের মুক্তিযোদ্ধা হওয়া খুবই সহজ কিন্তু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার দেশপ্রেমিক হয়ে বেঁচে থাকাটা বেশ কঠিন । দুই চারটা বড় বড় কথা লেখা ছাড়া তোমার জন্য আর কিছুই করতে পারলাম না, পারলে আমায় ক্ষমাকর হারাধন । ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.