আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মনকে বল না.... সুজিত দাশ



'কেউ যেন ভুল করে কল খুলে গেছে- মাঝরাতে আপনি উঠে দেখলেন জল...জল! জল। কথা বলছে শ্যওলায় পাথরে। ' এটা যদি কবিতা হয়- আমি যে ঘরে থাকি- টিনের চাল- আমাদের টেপাকল,ট্যাপকল নয়-তাই যে মাত্র আমি এই কবিতা পড়লাম পৌঁছে গেলাম তেমন কোনো হোটেলের দোতলার করিডরে যেখানে ভুল করে কেউ কল খুলে গেলে আমি শুনতে পাব জল... কি মনে হল আমার? ঝরনার কথা? এই কবিতার কবির তেমন মনে হয়েছিল বলেই তিনি কবিতাটা লিখে ফেলেছিলেন তখনি! যে গভীর বিষন্নতার মধ্যে বসবাস করলে নিরন্তর ঝরতে থাকা জলের কথা শোনা যায় আমি তো নাও বাস করতে পারি সেই মুহুর্তে। ধরা যাক আমি রেগে আছি!'জল লিখে তিনটি পুটকি দিলে ওই বিষন্নতাটা ফোটে, পুটকিগুলোর মানে যে কত কী না বলা রয়ে গেল- সেই না বলা বিষাদ এখন আমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। যদি পুটকি না দিয়ে এক্সক্লেমেশান দিই তাহলে? আজকাল কিন্তু আমি জল খোলা দেখে বিষন্ন না হয়ে রেগে যাব! ভাবব অপচয়! ভাবব সেই নির্বোধের কথা যে এর কারণ।

কারণ, এমুহুর্তে আমি সব কিছু নিয়েই ক্রুদ্ধ! ১০ বছর পর যখন কয়লা সব শেষ হয়ে যাবে প্রকৃতিতে, জল তখন বিদ্যুত খরচ করে দোতলায় আনাই যাবে না- হোটেলের ঘরে তখন রেড়ির তেলের প্রদীপ জ্বলবে- আমি সেই দিনটার কথা আর আজকের অপচয় ভেবে অন্য একটা কবিতা লিখব- রেগে গেছি বলে। কিন্তু যদি হোটেলের ঘরে আমি মদ খাই সন্ধ্যা রাতে- সঙ্গে বান্ধবী, আমি রেগেও যাব না, বিষন্নতাও আমায় ছুতে পারবে না। আমি যে একটা দাঁড়ি টানব- সেটাও কি একটা কবিতা নয়? চতুর্থ একজন আছে যে কিনা মাঝরাতে উঠে জলটা শুনতেই পাবে না। ফের আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়বে, সে কবি নয়। কবি যে তিন জনকে বলছি তাদের তো এক ওই জল শুনে তিন ভাবে সাড়া দিল মন- কবিতা এখানেই অনেক- এখানেই কবিতা আসলে যোগ! আমি যার দ্বারা যুক্ত হলাম প্রথমে নিজের সঙ্গে-পরেই কবির সঙ্গে।

মাঝখানে জল আর জল... সমুদ্রে গেলেই আমি এক পৃথিবী লবনাত্মতায় ডুবে যাই! ওই উথাল পাথাল হাওয়া ঢেউ আমার নারীহীন জীবনে ঘন যৌনতার অনুষঙ্গ। মেয়েদের গায়ে যেমন লোভনীয় আঁশটে গন্ধ থাকে বলে আমার ধারনা, সমুদ্র এখন আমার তাই। আগে কিন্তু তা ছিল না। দশ বছর আগে যখন আমি প্রথম সমুদ্রে যাই- মেয়েরা আমার কাছে কাগজের মত মনে হত- যা সমুদ্র কখনও নয়- তখন সমুদ্র ছিল এক মুর্তিমান অস্থির চিরবিদ্রোহির প্রতিরূপ। পরিস্থিতি অনুযায়ি তাহলে মন যে ভাবে প্রস্তুত থাকছে- বাইরের ঘটনাবলী সেভাবেই কবিতা ঘটাচ্ছে।

এবার যদি আমি মনকে বলি , মাঝরাতে জল শুনে বিষন্নতা - নেহাতই মধ্যবিত্তের বিষাদ! ওটা ছাড়! মনের ওপর সেটা কেমন বলাৎকার হবে ভাবুন তো! ওই মেয়েটিকে দেখে আমার কামনা জাগবে কেন! আমি না বিদ্রোহের গান গাই! ওকে বোন ভাবা উচিত- এটা যেমন বোকা বোকা নিয়ন্ত্রণ, সিঙুর হোক লালগড় হোক আমি তো জল দেখে বিষন্নতার কবি- আমি রেগে উঠব কেন- এটাও সমান ধাস্টামো। কবিতা কে জোর করে যারা একদল মোদকের গামলায় ডুবিয়ে রাখতে চান, তারা যেমন শয়তান, কবিতাকে যারা অস্ত্র ভাবেন- তারা আরও বেশি ভোঁতা!

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.