আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টার্মিনালে উপচেপড়া ভিড় বিড়ম্বনার ঈদ যাত্ø

রাজধানীর টার্মিনালগুলোয় শুরু হয়েছে ঘরমুখী মানুষের ঈদ যাত্রা। যানজট, দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনাকে সঙ্গী করে নাড়ির টানে গ্রামের বাড়ি যেতে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে তারা। গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় ভোর থেকে ভিড় বাড়তে থাকে টার্মিনালগুলোয়। অনেকে সেহরি খেয়ে রওনা হয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। সকাল ১০টার মধ্যেই তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না বাস, রেল ও লঞ্চ টার্মিনালে। নির্ধারিত সময়ে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ না ছাড়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা শ শ যাত্রীকে খোলা আকাশের নিচে পরিবার-পরিজন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তাদের একটাই আশঙ্কা সময়মতো বাড়ি ফিরতে পারব তো? এ ছাড়া যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে আকস্মিক পরিদর্শনে যান। তিনি দূরপাল্লার বাস সার্ভিসের খোঁজখবর নেন। এ সময় সাংবাদিকদের বলেন, মহাসড়কের অবস্থা এবার মোটামুটি ভালো। তবুও টানা বর্ষণ হলে বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে বলে তিনি সংশয় প্রকাশ করেন। গতকাল রাজধানীর গাবতলী, সদরঘাট ও কমলাপুর রেল স্টেশন ঘুরে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। টার্মিনালে আগত ঘরমুখী যাত্রীরা বলছেন, মহাসড়কে তীব্র যানজট। পথে বেহাল সড়কের ভোগান্তি। এর মধ্যেই বাড়ি ফিরতে হবে। কারণ প্রিয়জনদের ছাড়া ঈদের আনন্দ তো জমে না। কথাগুলো বলছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম। তার বাড়ি রংপুরে। তিনি আরও বলেন, সকাল সাড়ে ৯টার বাসের টিকিট কেটেছিলাম। দেড় ঘণ্টা পর ১১টায় ওই বাস টার্মিনাল ছাড়ার কথা। এ ছাড়া গতকাল পরিবহন ব্যবসায়ীরা সরকারের আইন উপেক্ষা করে পুলিশের নাকের ডগায় বাস, ট্রেন ও লঞ্চের ছাদে যাত্রী নিয়ে টার্মিনাল ছেড়ে যায়।

প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে ঘরে ফেরার শুরুতেই গতকাল ভোর থেকে ঢকা-চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও খুলনার মহাসড়কগুলোয় শুরু হয়েছে অসহনীয় যানজট। বাস কোম্পানিগুলো বলছে, মহাসড়কের বেহাল দশার কারণে বাসের গতি ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটারের বেশি চালানো যায় না। এ জন্য সময় লেগে যাচ্ছে দ্বিগুণ, কোথাও কোথাও তিন গুণ। জানতে চাইলে সোহাগ পরিবহনের ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন বড় ধরনের আশঙ্কা করে বলেন, যে গন্তব্য ৬-৭ ঘণ্টার ছিল এখন ওই পরিমাণ দূরত্ব যেতে ১০-১২ ঘণ্টা লাগছে। আবার কোথাও কোথাও ১৪-১৫ ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। হানিফ এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার রুহল আমিন বলেন, গতকাল গাবতলী থেকে সকাল ৮টায় যে বাস চট্টগ্রাম ছেড়ে যায় বেলা ১১টায় ওই বাস দাউদকান্দি ব্রিজ এলাকায় গিয়ে যানজটের কবলে পড়ে। ওই বাসটি চট্টগ্রাম যেতে ৭ ঘণ্টার স্থলে ১২ ঘণ্টা লেগেছে। একইভাবে সকাল সাড়ে ৭টায় এস আর পরিবহনের যে বাস গাবতলী থেকে রংপুর ছেড়ে যায় ওই বাস সকাল ১০টায় টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় আটকে থাকে। ওই বাসটি যেতে ৬ ঘণ্টার স্থলে ১০ ঘণ্টা লেগে যাবে বলে কাউন্টার থেকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া সায়েদাবাদ ও গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে ১০-১২টি মিনিবাসের ভেতরে ও ছাদে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী ও কর্মজীবী নারী-পুরুষকে যাত্রা করতে দেখা গেছে। আজকালের মধ্যে যানজটের এ চিত্র আরও কতটা ভয়াবহ হবে তা নিয়ে শুরু হয়েছে পরিবহন মালিকদের দুশ্চিন্তা। ফেরিঘাটেও পড়েছে লম্বা সারি। ঘরমুখী মানুষের ভিড়ে স্বাভাবিক ট্রিপগুলোর পরিণতি হয় বিশেষ সার্ভিসে। সুযোগ বুঝে অতিরিক্ত ট্রিপও দিয়েছে কিছু বাস। দুপুরের পর থেকে কমলাপুর রেল স্টেশন, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ও আন্তজেলা বাস টার্মিনালগুলোয় ভিড় পরিলক্ষিত হয়। প্রিয়জনের সানি্নধ্য পাওয়ার আনন্দ প্রথম দিনেই বিড়ম্বনায় পরিণত হয় বাসযাত্রীদের। বিশেষ করে ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-খুলনা এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের। পাশাপাশি কমলাপুর রেল স্টেশন থেকেও প্রতিটি আন্তনগর ট্রেন ৩০ থেকে ৫০ মিনিটি দেরিতে ছেড়ে গেছে। সকাল ৭টা ৪০ মিনিটের চট্টগ্রামের মহানগর প্রভাতি সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ছেড়ে গেছে। সিলেটগামী উপবন দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের পরিবর্তে ১টা ১০ মিনিটে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যায়। গতকাল কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি ট্রেনের ছাদে শত শত যাত্রীকে টিকিট না পেয়ে ভ্রমণ করতে দেখা গেছে। অসহনীয় যানজট ও বেহাল সড়কের কারণে দূরপাল্লার বাস কোম্পানিগুলো দিনের বেলায় চলাচল কমিয়ে দিয়েছে। এ সুযোগে ঢাকা শহরে চলাচলকারী লোকাল বাসগুলো দূরপাল্লার যাত্রী বহন করতে শুরু করে। গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুলে এসব দৃশ্য চোখে পড়েছে। এ ছাড়া একশ্রেণীর পরিবহন মালিক পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে অাঁতাত করে স্বল্পদূরত্বে চলাচল-উপযোগী মিনিবাসে হাঁকডাক করে যাত্রী তুলছেন। সেখানে কোনো অগ্রিম টিকিটের ঝামেলা নেই। আগে এলে আগে পাবেন- ভিত্তিতে আসন বিক্রি হচ্ছে। কয়েকটি বাসে যাত্রীদের দাঁড়িয়ে যেতেও দেখা গেছে। লোকাল বাসে দূরের পথে যাত্রী নিরাপদ কি না- জানতে চাইলে পরিবহন শ্রমিকরা একজোট হয়ে উত্তর না দিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়ার চেষ্টা চালান। মারমুখী ভঙ্গিতে তারা বলেন, 'যাত্রী নিয়া যে যাইতাছি, এইটাই বেশি। বেশি কথা বইলা মাইনষের বাড়িতে ঈদ করা আটকায়েন না'। ফেনী যেতে ঈদের আগের দিনের টিকিট চাইলে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে তিশা পরিবহনের কর্মী জসিম বলেন, 'অগ্রিম টিকেট দিয়া কী হইব? বাড়ি গেলে অহনই টিকেট কাইট্যা গাড়িতে উইঠ্যা পড়েন।' কুমিল্লার যাত্রী আবুল হোসেন বলেন, ভালো বাসগুলোর কোনোটাতেই সিট নেই। রাস্তা যে পরিমাণ খারাপ তাতে সব বাসেই দেরি হবে। এতটা পথ, এ ধরনের বাসে ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে যেতে কষ্ট হবে না? উত্তরে চৌদ্দগ্রামের যাত্রী তাহমিনা আকতার বলেন, 'বাড়ি যাইতে পারতাছি হেইতেই আল্লার কাছে লাখ লাখ শোকর।' মহাখালী বাস টার্মিনালে টিকিট আছে কি না- জানতে চাইলে বলা হয়, 'এখন গেলে চলেন টিকেট আছে। ঈদের তিন দিন আগ পর্যন্ত টার্মিনালে এলেই বাস পাইবেন। এর পরের টিকেট নাই।' সড়কপথের বেহাল দশার কারণে রেলপথে তিন গুণ চাপ বেড়েছে। জানতে চাইলে রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আবু তাহের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ঈদে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১০৭টি কোচ (বগি) মেরামত করে ট্রেনে যুক্ত করা হয়েছে।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.