সামুতে অর্থহীন অশুদ্ধ বাংলা ও বাংলিশ শব্দ পরিহার করি
আমাদের সমাজে উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত সব পরিবারেই গৃহস্থালির কাজের জন্য গৃহপরিচারিকা রাখা হয়, যাদের অধিকাংশই শিশু-কিশোর। এদের কাজের কোন বাঁধাধরা নিয়ম নেই। বাংলাদেশ চাইল্ড রাইটস ফাউন্ডেশনের এক জরিপে দেখা গেছে শুধু ঢাকা শহরেই প্রায় দেড় লাখ গৃহপরিচারিকা বাসা-বাড়ির গৃহস্থালির কাজের সঙ্গে যুক্ত।
গৃহপরিচারিকা ভৃত্য নয়, তাদের পরিচয় মানুষ। গৃহপরিচারিকা ছাড়া আমাদের চলে না।
বিশেষ করে চাকরিজীবী পরিবারগুলোতে গৃহপরিচারিকা নেই এমন একটি বাসাও সম্ভবত খুঁজে পাওয়া যাবে না শহরগুলোতে। বাসা পাহারা দেয়া থেকে শুরু করে সংসারের অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজকর্ম তারা করে থাকে। অথচ তাদের কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় না, পান থেকে চুন খসলেই শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন।
গৃহপরিচারিকারাও মানুষ, তারাও কোন না কোন বাবা-মার সন্তান এ কথা আমরা বেমালুম ভুলে যাই। আমাদের দেশে গৃহকর্মীদের অনেক ছোট করে দেখা হয়।
যার ফলে ফ্লাট বা এপার্টমেন্টগুলোতে গৃহকর্মীদের জন্য আলাদা কোন কক্ষ রাখা হয় না। তাদের থাকতে হয় রান্না ঘরের মেঝেতে অথবা বারান্দার এক কোণে।
একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমরা মানবাধিকার ও শিশু অধিকারের কথা বলি কিন্তু বাস্তবে কতটুকু এর প্রয়োগ হচ্ছে তা ভেবে দেখা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী মূলত দরিদ্র। গ্রামীণ এ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে অর্ধাহার আর অনাহার নিত্যদিনের ঘটনা।
তাই ক্ষুধায় জর্জরিত বাবা-মা একটু ভালো খাবার, একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার আশায় তাদের আদরের সন্তানকে তুলে দেন কোন এক ধনী পরিবারে।
ঢাবি শিক্ষকের স্ত্রীর বিরুদ্ধে কাজের মেয়ে নির্যাতনের অভিযোগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের চেয়ারম্যান শিক্ষক এবিএম সিদ্দিকুর রহমান নিজামীর স্ত্রী আফরিন সুলতানা নির্যাতন করতেন বলে বাসার ১০ বছরের কাজের মেয়ে আফরোজা নিজেই বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে। আফরোজা অভিযোগ করে, দুইদিন আগে শিক্ষককের মেয়ে ছাপিন তার হাতে গরম পানি ঢেলে দেয়। ফলে তার হাত পুড়ে যায়। এছাড়াও কাজ করতে দেরি করলেই মারধর করে শিক্ষকের স্ত্রী।
প্রায় দিনই তাকে মার খেতে হয়। তবে শিৰকের স্ত্রী আফরিন সুলতানা নির্যাতনের ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, কয়েকদিন ধরে কাজের মেয়েটি তার কথা শুনত না। তার মেয়ে ছাপিন ও কাজের মেয়ে আফরোজা এক সঙ্গে গরম পানি দিয়ে গোসল করতে গেলে আফরোজা গরম পানিতে হাত দেয়। ফলে তার হাত পুড়ে যায়। সে দুপুরে জামাকাপড় নিয়ে পালাতে যায়।
ছোট একটি অবুঝ শিশু তার মায়ের ভালোবাসার অচঁল ছেড়ে চলে আসে অচেনা-অজানা শহরে। সেখানে তার পরিচয় হয় গৃহকর্মী। শুরু হয় নতুন জীবন। ভোরের আগে ঘুম থেকে ওঠা তো চাইই চাই, সঙ্গে সকালের নাস্তা তৈরি, থালা বাসন ধোয়া, কাপড় ধোয়া, খাবার তৈরি, ঘর মোছা সব কাজের ভার পরে ওই শিশু গৃহপরিচারিকার ওপর। সারাদিনের হাড়ভাঙা কাজ শেষে কপালে জোটে দুই বেলা সামান্য খাবার, তা দিয়ে অনাহার কাটিয়ে কোনভাবে বেঁচে থাকা যায়।
এত কাজের মধ্যে কোন ভুলক্রটি হলে তো কথাই নেই। গৃহকত্র্রী বসে যান বিচারকের আসনে। বকাঝকা, চড়-থাপ্পড় দিয়ে শুরু হয় বিচার। তারপর চলতে থাকে খাবার না দেয়া, লাঠি দিয়ে পেটানো, ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে দেয়া, গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেয়ার মতো বর্বরতা। নির্যাতন শেষে গৃহকর্মীকে ফেলে রাখা হয় ঘরের এক কোণে অথবা টয়লেটে।
শুধু তাই নয়, এদের অনেকেই আবার শিকার হয় যৌন নির্যাতনের। গৃহকর্তা বা বখাটে সন্তানদের যৌন নির্যাতনের হাত থেকে অনেক সময় রেহাই পায় না এসব শিশু গৃহপরিচারিকারা। কিন্তু বিত্তশালী এই মানুষ নামের নরপশুরা আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে ঠিকই বেড়িয়ে যায়। এত অত্যাচারের পরও তারা মুখ বুজে কাজ করে একমুঠো ভাত আর একটুখানি আশ্রয়ের আশায়।
আমরা কি একবারও ভাবতে পারি না নিজের সন্তানটিকে যে আদর ভালোবাসা দিয়ে বড় করছি, সেই আদর ভালোবাসা পাবার অধিকার গৃহপরিচারিকা শিশুটির রয়েছে।
গৃহকর্মী আমাদের সমাজের একটি অংশ। তাদেরকে ছোট করে না দেখে আমাদের উচিত একজন মানুষ হিসেবে দেখা, তাদের কাজের স্বীকৃতি দেয়া।
এ ছাড়াও গৃহপরিচারিকা নির্যাতনের বিরুদ্ধে সমাজের সবাইকে সচেতন করতে হবে। আমাদের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। শাসন নয়, তাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।
তাহলেই গৃহকর্মীদের নির্যাতনের হার অনেকাংশে কমে আসবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।