আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অমানুষ বচন-১

বাহির পানে চোখ মেলি শুধু, হৃদয় পানে চাই নি

পারস্য আমাকে বরাবরই বড়ই আকর্ষন করে। এর কারন অনুসন্ধানে লিপ্ত হয়ে আমি বেশ কিছু তত্ত্ব আবিষ্কার করেছি। তার মধ্যে আমার জাতি পরিচয়ের সাথে যেটি সবচেয়ে বেশি যায় সেটি হল, আমার শৈশবের একটা সময় পর্যন্ত আমি পারস্যকে প্যারিসের অন্য নাম ভাবতাম এবং পারস্য বলতে ফ্রান্সকে বুঝতাম (!)। যেহেতু একবার বাঙ্গালি হয়ে জন্মেছি, এ জন্মে পশ্চিম থেকে কিছু আসলে তাকে তো আর খাট ভাবতে পারি না (ref: ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল, হুমায়ূন আজাদ)। আরেকটি কারন হতে পারে, মধ্যবিত্ত বাঙ্গালির বাচ্চা মানুষ প্রকল্পের অমোঘ ঔষধ “রূপকথার” প্রভাব।

আর ও একখানা তত্ত্ব আছে। কোন একভাবে আমি জানতে পেরেছিলাম, মাতুলের পূর্বপুরুষ পারস্য হতে এসেছিলেন (সত্যতা নিরূপন সাপেক্ষ), এবং আর্যরাও সেখান থেকে এসেছিলেন। এরপর আর যায় কই, আমি তো আর্য হয়ে গেলাম। তবে কোনটাই একক ভাবে খুব জোরাল কারন কিনা তাতে সন্দেহ আছে। সেই সন্দেহ দূর করতে আরো কিছু শব্দ ব্যয় করা সমীচিন মনে করছি না, কারন সেটা সম্ভবত বিরক্তিই বাড়াবে।

(এরই মাঝে কেউ বিরক্ত হয়ে গেলে একান্ত দুঃখিত) ভূমিকায় অবতীর্ন পারস্য বিষয়ক আকর্ষনের তাত্ত্বিক আলোচনা দেখে যেকোন সাধারন পাঠক মনে করতে পারেন, লোকটা পারস্য সম্পর্কে অনেক জানেন। আর অসাধারণ পাঠক মনে করবেন, দেখিতো,এত থিওরি কবচাইতেছে, লোকটা এই এই জিনিস জানে কিনা। আমার অতি দূর্ভাগ্য, আমি এই সাধারন কিংবা অসাধারন কোন শ্রেণির পাঠকেরই আশা ভংগ না করে থাকতে পারছি না। তার কারন এই লেখার উদ্দেশ্য পারস্য নিয়ে বিশ্লেষন নয়। দ্বিতীয়ত, এবং খুবই গুরূত্বপূর্ন কারন হলো- আমি আসলে পারস্য নিয়ে তেমন কিছুই জানিনা।

আমার আকর্ষনের কোন প্রায়োগিক রূপ নেই। যেকোন rational পাঠকই তবে চক্ষুশুল করে এখন বলবেন, (সাধারন-অসাধারন নির্বিশেষে), “তবে রে!! Blog এ আইসা stunt বাজী”। তবে ভাই, শেষ বিচারের আগে এই বান্দার কথাটা শেষ করতে দিয়েন। যারা কষ্ট করে এতদূর পড়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই hsc পাস করেছেন। সেক্ষত্রে তাদের অবশ্যি মনে আছে, বেগম রোকেয়ার যে দুটি প্রবন্ধ আমরা পড়েছিলাম (অর্ধাংগিনী ssc তে এবং hsc তে জাগো গো ভগিনী) তার কোন একটি তে তিনি নারীর স্বাধীনতের কথা বলতে গিয়ে পারস্যের নারী স্বাধীনতার model এর কথা বলেছেন।

উপরের পারস্য সঙ্ক্রান্ত এত বিষদ ভূমিকার কারন মূলত এই পারস্যের নারীদের স্বাধীনতার মডেলটি। সেখানে বেগম রোকেয়া বলেছিলেন, আধুনিকতার লোভে পারস্য পুরুষ নারীকে পর্দা থেকে বের করে নিয়ে এসেছে,এবং নারী সানন্দে অবগুণ্ঠন থেকে বের হয়ে এসেছে। কিন্তু নারীর মন সেখানে এখনও স্বাধীন হয় নি। পারস্য সভ্যতার ইতিহাসে একটি মাইল ফলক। বিদ্যা বুদ্ধি, জ্ঞান, শৌর্যে পারস্য সর্বদাই অগ্রগ্রামি ছিল।

এবং, আধুনিক কাল ছাড়া এ অঞ্চলের মানুষ জাতিগত ভাবে বরাবরই উদার ছিল, যদিও সেটা এখন ইতিহাস। সেখানের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, কোন এক প্রয়োজনে নারীকে পর্দা থেকে বের করে আনলো ঠিকই, কিন্তু নারী করেই, মানুষ হিসেবে নয়। ফলে যা হবার তাই, নারী রয়ে গেল পরাধীন মনের, একটি বংশগতি রক্ষা এবং surplus হিসেবে কিছু মানসিক শান্তি সরবরাহ কারী gadget। আজকের বাংলাদেশে, নারীর এই gadget হিসেবে ব্যাবহৃত হবার প্রচলনটাই সবচেয়ে prominent, তবে আরো কিছু modification করে। নারী তার প্রকৃতি প্রদত্ত্ ক্ষমতার বলে শুধু বংশবৃদ্ধি (মা/স্ত্রী) কিংবা একাকীত্ব দূর করার বস্তু হিসেবেই শুধু না (প্রেমিকা), ক্ষেত্র বিশেষে পরিবারের বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবেও কাজ করছে(কর্মজীবি নারী, কী গাল ভরা শব্দ)।

কিন্তু, প্রশ্নটি যদি হয়, তাদের কে কি মানুষ হিসেবে treat করা হয়, নারীর পরিচয় ছাপিয়ে,? উত্তর হবে, নীরবতা। প্রশ্নটি যদি হয়, তারা কি মুক্ত? উত্তের হবে, আরো নীরবতা। আমার এই পর্যন্ত লেখা পড়ে অনেক মেয়েই অনেক কষ্ট পাবেন, দুঃখ করে বলবেন, “ কবে সেই দিন আসবে যেদিন সমাজে পরিবর্তন হবে?”- খুব ভারী কথা। অনেক ছেলে তাদের সহমর্মি হবেন। খুব হাসি পায়, বড্ডই হাসি পায়।

আমাদের সমাজকে যদি ব্যবচ্ছেদ করি, তাহলে খুব মোটা দাগে ৪ ভাগে ভাগ করা যাবে। (আমার মতে) ১/ গ্রামীন পরিবার এবং শহরে বাস করা অতি দ্ররিদ্র ( এই দুইয়ের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা কাছাকাছি) ২/ শহরের গন্ধ লাগা গ্রামীন পরিবার ৩/ শহুরে মধ্যবিত্ত ৪/ উচ্চবিত্ত আমার আলোচনা টা মূলত ২ আর ৩ নম্বর ভাগ নিয়ে। কারন ২ আর ৩ ই মূলত সমাজের পরিবর্তনের reflection(আমার মতে)। আমাদের আশে পাশে তাকালেই আমরা দেখতে পারব, আজকের নারীরা ৫০ বছর আগের থেকে কত এগিয়ে( !)। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছে, অনেকেই উচ্চ শিক্ষা নিচ্ছে, চাকরী করছে, আরো কত হাঙ্গামা।

কিন্তু, আপনি যদি তার ব্যক্তি জীবনের একটা সুরতেহাল করেন, একটা জিনিস খেয়াল করবেন, জৈবিক ভাবে জন্ম নেয়া female human সামাজিক ভাবে একটা নারীই থেকে যায়, মানুষ হতে পারে না (আমি এটা দাবী করছি না এদেশের male human যে খুব আহামরী মানুষের পরিচয়ে মহান, তাদের gender identity ছাপিয়ে) , তাদেরকে হতে দেয়া হয় না, এবং আমার সবচেয়ে খারাপ লাগে, তারা হতে চায়ও না। শেষ কথাটি অনেককে আঘাত করতে পারে, তবে এটা আমি deduction থেকে বলছি, profess করছি না। যখন একজন female কে একজন male ,(সেটা যেই সামাজিক সম্পর্কেরই হোক) তার পরাধীনতার দেয়াল ভাঙ্গতে বারংবার শেকলে আঘাত হানতে বলে, এবং সেই female সেই পরাধীনতাকে মেনে না নিতে চেয়েও সেই পরাধীনতার বিরুদ্ধে কোন বিদ্রোহ করে না, তাহলে ধরে নিতে হবে হয় সে পরাধীনতা মেনে নিতে বাধ্য , অথবা সে পরাধীন থাকতেই চায়। যদি সে বাধ্যই হয়, তাহলে তো সে নারীই থাকল, আর মানুষ হল না। রয়ে গেল বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া, কর্মজীবি নারী, কিংবা নারী ডাক্তার বা প্রকৌশলী, কিংবা শুধুই রমনী।

আমার কাছে মনে হয়েছে, আজকের যুগের মধ্যবিত্ত মেয়েরা, পাশ্চাত্যে নারীর যে স্বাধীন রূপের চিত্রায়ন মানসপটে করেছে (পাশ্চাত্যে নারী পন্য হোক কিংবা ভোগ্যই হোক, স্বাধীনতা নিয়ে মানসিক বৈকাল্যের সেখানে প্রাদুর্ভাব আছে) তার চাপে স্বাধীন হওয়ার লেবাস নেয় outfit, style, get up, fashion, trends, jargons, career ইত্যাদির মাধ্যমে। কিন্তু মানসিক যে দাসত্ব, সেই কারাগারের চাবি আর খুজে পাওয়া যায় না। আমাদের বিচার বিভাগ নিয়ে একটা কথা প্রচলিত আছে, আমাদের বিচারকদের যতই স্বাধীনতা দেয়া হোক না কেন, তারা নাকি স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারবেন না তাদের মানসিক পরাধীনতার জন্য। নেপোললিওন থাকলে বলতেন আমাকে স্বাধীন মা দাও, আমি তোমাদের স্বাধীন বিচারক দিব। আজকাল প্রায়ই দেখি, পরিবার মেয়ের সাথে “অন্যান্য এবং অতীতের তুলনায়” অধিক স্বাধীনতা প্রদানের যুক্তিতে মেয়ের মনকে আরো দক্ষ দাসী করে বড় করছে।

শেকল তো শুধু বাধেই, এরা আফিম দিয়ে ভুলাচ্ছেও। এবং এটা করাও একটা ফ্যাশন। সবাই ভাবছে, কী এগোচ্ছেই না সমাজটা। এটা দেখতে ভালোই লাগে, মাঝে মাঝে মনে পড়ে মানুষের ঘেন্না নামের একটা অনুভূতি আছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।