আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অমানুষ



ধর্মীয় জিহাদের ডাকে সাড়া না দেওয়ায় ঈশ্বরদীতে বাবাকে খুন করে ছেলে থানায় আত্মসমর্পণ করেছে। এদিকে চোখের সামনে স্বামীর মৃত্যু দেখেও কাঁদতে পারেননি স্ত্রী। সোমবার সকালে ঈশ্বরদী পৌর এলাকার পিয়ারপুর গ্রামে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটে। বাবার হত্যাকারী মনিরুজ্জামান মাসুমের (২৩) স্বীকারোক্তি এবং পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত গাড়িচালক মজিবর রহমান (৭২) প্রতিদিনের মতো গত রোববারও সন্ধ্যার পর বাড়িতেই ছিলেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাবার সঙ্গে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে মাসুম একটি নানচাকু দিয়ে তার গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করে।

এ সময় মাসুমের মা লুৎফুননেছা ছাড়া অন্য কেউ বাড়িতে ছিলেন না। বাবাকে খুন করার পর মাসুম তার মাকে ধমক দিয়ে চুপ থাকতে বলে। বাড়ির সব দরজা-জানালা বন্ধ করে বাবার লাশ শুইয়ে রেখে সে মাকে বলে, 'যদি চেঁচামেচি করিস তাহলে তোকেও তোর স্বামীর কাছে চিরতরে পাঠিয়ে দেব। ' প্রাণভয়ে লুৎফুননেছা স্বামীর মৃত্যুর পর কাঁদতে পর্যন্ত পারেননি। রাতভর ঘরে বন্দি থাকার পর গতকাল সকাল ৯টায় মাসুম তার মাকে একটি রিকশায় উঠিয়ে রেলগেট এলাকায় এসে বলে, 'তুমি তোমার বাবার বাড়ি চলে যাও, আমি থানায় যাচ্ছি।

' এই বলে রিকশা থেকে নেমে থানায় এসে বাবাকে খুন করার কথা পুলিশের কাছে সে অকপটে স্বীকার করে। এ সময় ঈশ্বরদী থানার ওসি সামিউল আলম তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে হাজতে আটকে রেখে পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। পুলিশ পিয়ারপুর এলাকায় যাওয়ার পর এলাকাবাসী এ ঘটনা প্রথম টের পায়। ঘটনার আকস্মিকতায় প্রতিবেশীরাও হতবাক হয়ে যান। এলাকাবাসী জানান, রোববার সন্ধ্যায় এ খুনের ঘটনা ঘটলেও বাড়ির আশপাশের লোকজন তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি।

পুলিশ ওই বাড়ি থেকে মজিবর রহমান ড্রাইভারের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। সে সময় শত শত উৎসুক মানুষের ভিড় জমে। এলাকাবাসী জানান, এর আগে ওই বাড়িতেই ভাই মাসুমের অত্যাচারে বোন রোকসানা নিজ শরীরে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যা করে। তার আর এক বোনও অসুস্থ হয়ে মারা যায়। মুক্তি, শাহেনা, সারিনা, ইতিসহ সব বোনেরই বিয়ে হয়ে গেছে।

তবে ভাই মাসুমের ভয়ে তারা খুব একটা এ বাড়িতে আসেন না। এমনকি এক বোনের স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পরও তিনি বাবার বাড়িতে না থেকে রহমান কলোনিতে বাসা ভাড়া করে থাকেন। ঘাতক মাসুম ঈশ্বরদী থানায় পুলিশ ও সাংবাদিকদের কাছে তার জবানবন্দিতে বাবাকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে মাসুম বলে, 'ধর্মীয় জিহাদের ডাকে সাড়া না দেওয়ায় আমি আমার বাবাকে আল্লাহর হুকুমে খুন করেছি। ' এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত মজিবর রহমানের স্ত্রী লুৎফুননেছা বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।

পুলিশ জানায়, ঘাতক মাসুমের কথাবার্তায় সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। সে কোনো জঙ্গি দলের সদস্য কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ..

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।