ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রুটে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসা যাওয়া করে। এর মধ্যে অফিস যাত্রী আর ছাত্র ছাত্রীই বেশী। কিছুদিন পূর্বেও নারায়ণগঞ্জ বাস ষ্ট্যান্ডগুলি ঢাকায় তুলনামূলক একটু নিরাপদ নির্ঝঞ্ঝাট ছিল। যদিও একে কোনরূপ ষ্ট্যান্ড বলা চলে না। অন্তত বাসের ক্ষেত্রে।
তবুও চলে যাচ্ছিলো। বিশেষ করে যে সব মেয়েরা ঢাকায় পড়াশুনা করে তারা আসিয়ান সার্ভিসে একটু নিরাপদ বোধ করে।
হঠাৎ করে কতৃপক্ষ বাস ষ্ট্যান্ড পরিবর্ত্তন করে নিয়ে গেছে গুলিস্থান মসজিদের কাছে। যেখানে অনেক আগে ঢাকা নারায়ণগঞ্জের একটি আধুনিক বি আর টি সি বাস ষ্ট্যান্ড ছিল।
ব্যবসায়িক কাজে আমার প্রায়ই ঢাকা যাওয়া আসা করতে হয়।
আমার চলাচল বাস কিংবা রিক্সায়। প্রায় যেটা চোখে পরে কোন কোন বাসের হেল্পার আর রিক্সাওয়ালা মেয়েদের নিয়ে বেশ ফান করে। সুযোগ পেলে একটু বেশী এগোয়। বিশেষ করে একটু কম বয়েসের মেয়ে যারা, তাদের নিয়ে। যেহেতু তারা এখনও প্রতিবাদী হয়ে উঠে নি।
আমার চোখে পরলে এইসব লোকদের যতটুকু সম্ভব ভদ্রতা শিখাতে চেষ্টা করি। হতে পারে নিস্ফল তবুও চেষ্টা করি। একবার একটু বেশী চেষ্টা করে ফেলেছিলাম তার তিক্ত অভিজ্ঞতা এখনও ভুলি নি। একই অপরাধে একজন বাস যাত্রীকেই মেরেছিলাম। পরে বাসের সকল যাত্রী আমাকেই মারার জন্য উদ্যত হয়।
কারণ তারা ভিতরের ঘটনা কি দেখে নি। ঠিক সেই অসহায় মুহুর্তে যাকে নিয়ে এই কুরুক্ষেত্র সে মেয়েটি নিশ্চুপ বসে ছিল। যেন তার কিছুই হয় নি। সে যাত্রায় ড্রাইভারই আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল।
আজকে গুলিস্থানে স্থানান্তরিত আসিয়ান বাসষ্ট্যান্ডে বিক্ষিপ্ত অসংখ্য নানামুখিগামী মানুষের ভিড়ে দাঁড়িয়েছিলাম, যখন ঘটনাটি ঘটে।
মেয়েটিকে দেখলাম একটি সি এন জি নিয়ে বাস থেকে একটু দূরে এসে নামছে। কাঁধে বইয়ের মস্তঝোলা। মুখে ক্লান্তি। চারিদিকে অসংখ্য মানুষের ভীড়। যার যার কাজে সকলেই ব্যস্ত।
ঠিক তখনই মেয়েটির কাছে দৌড়ে গেল দুটি অমানুষ। যার যার বাসে উঠানোর ছলে দুজনেই টানছে। ব্যপারটি আমাদের সহনীয়। আমরা প্রায়ই দেখি। তাই ব্যপারটি নিয়ে তেমন কেউ লক্ষ্য করছিল না।
আমি দেখলাম খুব অল্প সময়ে তাদের যে ফানটুকু করার ছিল তা করে চলে গেল। আরও দেখলাম একটু দূরে ঐ লোকদুটু একসাথে হাসা হাসি করছে। মেয়েটি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে রইলো কিছুক্ষণ। সি এন জি ড্রাইভার এই ঘটনায় সে খুব মজা পেয়েছে বলে মনে হল। আসে পাশের মানুষগুলি ব্যস্ত।
মহা ব্যস্ত। যার যার বাড়ী যাবার তাড়া। হকারদের মাল বিক্রির হাকাহাকি। পুলিশদের বাড়তি কাজে অধিক মনোযোগ। কিংবা কেউ কেউ অকারণে এই ভীড়ের মধ্যে মজা নিয়ে ঘুরছে।
কিন্তু মেয়েটি!
বাকরূদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
হয়তো কিছু পরেই তার চোখে জল এসেছিল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।