আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত, মর্মান্তিক মৃত্যু এবং জনরোষ

<<মধ্যরাতের হাইওয়ে>>

বর্তমানে বাংলাদেশে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচিত, তার মধ্যে একটি হল "আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর"। অবশেষে সরকারের বোধদয় হয়েছে। সরকার আড়িয়ল বিল হতে বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশের মানুষের ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ তিনি করবেন না। তাকে আপাত সাধুবাদ।

খুব বেশিদিনের ঘটনা নয় এটি। এইতো কিছুদিন। আর এর জন্য কত ঘটনা ঘটে গেল। একজন পুলিশকে প্রাণ দিতে হল। বহু সংখ্যক মানুষকে আহত হতে হল।

ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়ি চলাচল বন্ধ হল। এর সবই শুধু মাত্র একটি অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের কারণে। আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর হলে কি পরিমাণ ক্ষতি হত, এটি নির্মাণের আদৌ কোন যৌক্তিকতা ছিল কিনা কিংবা এ স্থানেই কেন, অন্য কোথাও নয় কেন? এমন সব বিষয় নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়ে গিয়েছে। সরকার বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটেনি। পরবর্তী প্রস্তাব পদ্মার চর।

একটা বিষয় খুবই অবাক লাগে। এখন ২০১১ সাল চলছে। মানুষ তার চিন্তা-চেতনার দিক থেকে কত এগিয়ে গিয়েছে। বিজ্ঞানের নিত্য নতুন আবিষ্কার মানুষের জীবনকে করেছে স্বাচ্ছন্দ্যময়। চিন্তা-চেতনাকে দিয়েছে গতি।

তারপরেও কেন, আমাদের দেশের নীতি-নির্ধারকগণ সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে পারছেন না। বালকসুলভ আচরণ করে তারা কেন নিজেদেরকে অযোগ্য প্রমাণ করছেন আর বিরোধীদলের হাতে আন্দোলনের ইস্যু তুলে দিচ্ছেন? আমাদের বর্তমান সরকার দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করার স্বপ্ন দেখছেন। সে লক্ষ্যে অনেক কাজও হয়তোবা করেছেন এবং করছেন। কিন্তু তাদের মেধা ও মননে, চিন্তা-চেতনা যদি এখনও সেই এনালগ পদ্ধতিতেই চলতে থাকে, তবে কিভাবে দেশকে ডিজিটালাইজড করবেন? আশ্চর্য হতে হয়, কোনরূপ জরিপ ছাড়া, কোনরূপ প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া, কোন বিষেষজ্ঞের সাথে আলাপ-আলোচনা ছাড়াই এত বিশাল একটা জায়গা অধিগ্রহণ করে, এত বিশাল পরিমাণ টাকা ব্যয় করে বিমানবন্দর নির্মাণের কথা বলা হয়। আবার সেটা গায়ের জোরে করার শপথও করা হয়।

(পূর্ত মন্ত্রীর ভাষায়- রক্ত দিয়ে হলেও....) আরে বাবা, দেশের জন্য কাজ করবেন, রক্ত দেয়ার কথা আসছে কেন? আবেগ দেখান? জনগণের ভিতর থেকে ইমোশন আদায়ের চেষ্টা করেন না জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য এমন কথা বলেন? তাছাড়া, এই বিমানবন্দরকে জায়েজ করার জন্য টিভি-চ্যানেলগুলোতে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রীর যে সাক্ষাৎকার এবং আলাপ দেখলাম, তাতে এতটুকু সন্দেহ করা অযৌক্তিক হবে না যে , তিনি বা তারা আদৌ ওই পদের যোগ্য কিনা? দেশের যে কোন উন্নয়নের পক্ষে দেশবাসী থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা যদি হয় অযৌক্তিকভাবে, তবে সেখানে জনগণের কি করার আছে? সব জায়গায় আশা করি আপনারা বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র খুজবেন না। আড়িয়ল বিল নিয়ে বিভিন্ন লেখালেখিতে অন্তত এতটুকু ধারণা হয়েছে যে, এটা সেখানকার মানুষের আন্দোলন। বিরোধী দল বহু পরে এই আন্দোলনে সম্মতি ব্যক্ত করেছে।

তারও বহু পূর্ব থেকেই সেখানকার মানুষেরা এই আন্দোলন চালিয়ে আসছিল। এখন আবার সেই এলাকার হাজার হাজার মানুষের নামে মামলা দিয়েছেন। অদ্ভুত ! সত্যিই অদ্ভুত!! মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, আপনার কাছে বিনীত আবেদন, দেশের মানুষকে বুঝতে চেষ্টা করুন। একটি ভুল সিদ্ধান্ত কি পরিমাণ নারকীয় পরিস্থিতি বয়ে আনতে পারে, তা আশা করি মনে রাখবেন। অন্তত বাকী সময়টুকু।

বৃহত্তর এর স্বার্থে আঘাত লাগলে, সেটা কিভাকে দাবানলে পরিণত হতে পারে, তা আমরা বাংলাদেশীরা খুব ভাল করেই জানি।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.