আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিভ্রম মাত্রা (২য় পর্ব সহ)



(১) ‘ডাক্তার সাহেব, আমাকে বাঁচান। আমি বাঁচতে চাই’, মিঃ দ’য়ের করুণ অনুনয় কান্নার মতো শোনাল। ততোক্ষণে বিকেলের মৃদু রোদ জানালা দিয়ে চেম্বারের নাম ফলকে অদ্ভুত আভা ফেলেছে। ফলকের অক্ষর গুল দূর থেকেও পড়া যায়- ‘ডাঃ ক, মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞ, সিনিয়র কনসাল্টেন্ট..’। চেম্বারের ভিতরে ডঃ ক পড়েছেন কঠিন ঝামেলায় তার এই নতুন রোগীটিকে নিয়ে।

তার ত্রিশ বছরের ডাক্তারি জীবনে তিনি কখনো এরকম রোগী দেখেননি। ডঃ ক’এর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দিল। স্বভাবগতভাবে এর মানে হল ডঃ ক এখন গভীর চিন্তা মগ্ন। ডঃ ক এর ধারনা মিঃ দ একধরণের সিজোফ্রেনিয়া রোগে ভুগছেন। ধরণটা হতে পারে ‘বহু-ব্যক্তিত্ব বিশৃঙ্খলা’ (মাল্টিপল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার) বা ‘কর্তৃত্বময় বিভ্রম’ (গ্রান্ডিওজ ডিল্যুশন)।

মিঃ দ বিভিন্ন চরিত্র বা ব্যক্তিত্ব একই সাথে ধারণ করেন। বরং সঠিক ভাবে বললে -অন্য চরিত্র তাকে ভর করে। যখন যে চরিত্রটি তার উপর সওয়ার হয়, তিনি তার মতো কথা বলেন, আচরণ করেন। সবচেয়ে ভয়ের কথা, তিনি একই সাথে অনেকগুল ব্যক্তিত্ব ধারণ করতে পারেন। এ অবস্থার অবসান হলে, আবার তিনি সব বেমালুম ভুলেযান।

পেশায় একজন নামকরা বহুজাতিক কোম্পানির সফল এক্সিকিউটিভ। বছর খানিক হল তিনি এই ঝামেলায় ভুগছেন। মিঃ দ-এর এটি দ্বিতীয় সেশন। ডঃ ক চিন্তার রেশ টানলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনার এই অবস্থা কখন বা কিভাবে আরম্ভ হয়?’ ‘ঠিক নেই।

তবে খেয়াল করে করে দেখেছি যখনি আমি কোন অন্যায় করি, সাধারণত তখনি এটি শুরু হয়। ‘ ‘যেমন ..?’ ‘যেমন আজ আমাদের কোম্পানি সরকারের সাথে তেল গ্যাস উত্তোলনের নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে..। ‘ ‘এর সাথে অন্যায়ের কি সম্পর্ক?’ ‘সম্পূর্ণ দেশের স্বার্থ বিরোধী চুক্তি। বলতে পারেন দেশ বিক্রি। আমি পারসেন্টেজ দিয়ে উপর লেভেল ম্যানেজ করেছি।

‘ ‘হু.. বিবেকের দংশন। ‘ ডঃ দ মনে মনে ভাবলেন, তাও ভাল এই অসুস্থ চাঁড়ালটার বিবেকবোধ এখনো নিম্ন স্তরের হলেও বর্তমান। আমাদের নেতাদেরতো তাও নাই। ‘ডঃ সাহেব, এইতো, এইতো শুরু হচ্ছে..’, বলতে বলতে মিঃ দ তার সামনে চেয়ারে এলিয়ে পড়লেন। (২) মিঃ দ-এর নিশ্বাস জোরে জোরে পড়ছে।

নাকের ছিদ্রগুল ফুলেফুলে উঠছে। ডঃ ক চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘মিঃ দ আপনি ঠিক আছেন তো?’ বলেই ডঃ ক অবাক হয়ে দেখলেন তার সামনের সব কিছু কেমন ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে তারও বিভ্রম ঘটছে। মিঃ দ উঠে বসলেন, তারপর দাঁড়িয়ে গেলেন, তারপর শুরু করলেন- ‘দেখুন কোন শক্তি নেই এই ইউনিভার্সে আমাকে আমার বাস্তুচ্যুত করে। ‘ ‘আপনি..?’ ‘হ্যাঁ আমিই সেই... এই মহাবিশ্বের সুদূরতম গ্রহ আক্রাসের এককালের সমরনায়ক ও দেশপ্রেমিক শাসক মহান জী –এর স্ত্রী।

‘ ‘তা আপনি দাঁড়িয়ে কেন, বসুন? আপনার নামটা কিজানি ...’ ‘ এই বেয়াদব চুপ! আমাকে ‘মহাশয়া’ বলে ডাকবি। জানিস লোকে আমায় গ্রহনেত্রী বলে ডাকে?... মানে আপনি কি জার্নালিস্ট? যেই হোননা কেন, মেজাজ খুবি খারাপ। ’ ‘না মানে, মহাশয়া, আপনি অহেতুক আমার উপর রাগ করছেন। আমি শুধু আপনার মনোবেদনার কারণটা জানতে চাই। ‘ ‘কারণ অনেক।

গ্রহের মানুষেরা আমায় ভালবেসে আমাকে দেশপতির জন্য নির্ধারিত প্রাসাদটি লিখে দেয়। পরে আমি নিজেই গ্রহপতি নির্বাচিত হই। কিন্তু কিজানি কি হল। আমায় কারচুপির গণ-মতায়নে (নির্বাচনে) পরাজিত করে ওই অশুভ শক্তি আমায় বাস্তুচ্যুত করল?’ ‘দেখুন মহাশয়া, আপনার গ্রহের খবরটি আমি পড়েছি। আপনার বা আপনার মত গ্রহরাজনীতিবিদদের সমস্যা হল, আপনারা ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে গ্রহের জনতা থেকে দূরে সরেযান।

চাটুকারদ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে নিজেদের মনে করেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ডাক্তারি পরিভাষায় বলে ‘নার্সিজম’। আপনিতো নিজেই বলতে পারতেন, ওই প্রাসাদ আমি চাইনে, ও গ্রহজনতার সম্পত্তি। এক সময় আমার দরকার ছিল, এখন নেই। আপনার স্বামীকে আক্রাসবাসী ভালবেসেছিল, কারণ তিনি মৃত্যুর সময় নিজের জন্য কিছু রেখে যাননি, সম্পদের পাহাড় গড়ার জন্যতো নয়।

‘ মহাশয়া তার প্রয়াত মহান জী-এর কথা ভেবে ডুকরে উঠলেন। এমন সময়ে হঠাৎ মিঃ দ চেয়ারে বসে পড়লেন। তার নিশ্বাস আর ঘন হল। তিনি বলতে শুরু করলেন ‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। স্বাধীনতার সংগ্রাম।

...এই দেশ আমায় ভালবাসে, এই মাটির সোঁদা গন্ধ আমায় হাতছানি দেয়। আমি গণতন্ত্র দিতে চেয়ে ছিলাম...কম্বল চোর নয়.. একনায়কতন্ত্র নয়..আমার ঝাঁঝরা বুকে কান পাতো...প্রতিটি স্পন্দন সাক্ষী দেবে...দয়া করে আর গুলি করবানা...’। বিরতি দিয়ে মিঃ দ-এর গলা কেঁপে গেল। আর এক কণ্ঠ ডুকরে বলল ‘ফালানীরে তুই অইহানে যাসনা, তরে মাইরা ফালাব...’। আর একটি রাশভারী কণ্ঠ বলল,’আজ আমরা আমাদের মহান প্রতিবেশী গ্রহ ইন্ডিগো বিগব্রাদারোর সাথে সম্পর্কের নতুন দুয়ার উন্মোচন করেছি।

তাঁরা আমায় কথা দিয়েছেন আমরা ঋণ পাব, সহজ-শর্ত, বিনা সুদে ঋণ..’। অন্য আরেকটি কণ্ঠ প্রশ্ন করলো, ‘ঋণের শর্তগুল দেখেছেন?’ রাশভারী কণ্ঠ কেঁপে গেল। কণ্ঠটি পরিবর্তিত হল। মনে হল কেউ শেক্সপিয়ারের ম্যাকবেথ থেকে পড়ে শোনাচ্ছে .... I heard a voice cry 'Sleep no more! Macbeth does murder sleep', the innocent sleep..,’ The sound frightens him, and Macbeth asks himself, "Will all great Neptune's ocean wash this blood, Clean from my hand?"

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।