আলো নয় আধার খুজি ,সত্যের জন্যে নয় মিথ্যের বিরুদ্ধে যুঝি।
[link|http://www.somewhereinblog.net/blog/mehedi_buet/29247247|**বিভ্রম - ১[সম্পাদিত]]
৩
যখন মাহিমের ঘুম ভাঙ্গলো তখন সকাল। ঘুম ভেঙ্গেই শুরু হল অবাক হওয়ার পালা,সে শুয়ে আছে হাসপাতালের কোন একটি পার্সোনাল কেবিনের বেডে। তার গায়ে হাসপাতালের রোগীদের পোশাক,বাঁ হাতে স্যালাইনের নল লাগানো,মাথায় ব্যান্ডেজ,সম্পূর্ন শরীরে ব্যাথা। বেডের পাশে এক স্তূপ যন্ত্রপাতি মৌমাছির মত গুনগুন শব্দ তুলছে একটু পর পর,আর কিসব বিচিত্র রিডিং দিচ্ছে।
এমন সময় ডাক্তার ঢুকলেন ক্যাবিনে 'আপনার জ্ঞান ফিরেছে দেখছি,তা কেমন বোধ করছেন এখন?'।
'জ্বি ভাল না,সম্পূর্ন শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা, মাথাটাও কেমন যেন ঝিম ঝিম করছে। আমি এখানে কিভাবে?কি হয়েছিল আমার?'
-পুলিশের কাছ থেকে পালাতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করেছিলেন আপনি,কপাল ভাল যে বেচে গেছেন। ঠিক ২দিন পর জ্ঞান ফিরল আপনার।
আমি?আর পুলিশের কাছ হতে পালাচ্ছিলাম?কি বলছেন এসব?আমি এমন কি করেছি যে পুলিশের কাছ থেকে পালাতে যাব?আমার তো কিছুই মনে পড়ছে না...
মাহিমের কথা শেষ না হতেই হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকলেন একজন মাঝবয়েসী লোক।
লম্বা চওড়া সুঠাম দেহের অধিকারী,কপালের পুরু ভাঁজ আর দৃঢ় চোয়াল কেমন যেন একটা কাঠিন্য এনে দিয়েছে চেহারায়। 'বাছাধনের জ্ঞান ফিরেছে দেখা যায়,তা কি ভেবেছিলে?দু দু'টো খুন করে এভাবেই পার পেয়ে যাবে?আমায় ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যাবে?এত্ত সোজা না বুঝলা?এবার তোমাকে বুঝাব পুলিশী ডলা কারে বলে খালি একবার কিছুটা সুস্থ হও,তোমারে বুঝাব খুন করার মজা কত?' মাহিমের দিকে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে কথাগুলো বলল লোকটি। লোকটার কথার কিছুই বুঝে উঠতে পারল না মাহিম,কি বলছে লোকটা? খুন? কিসের খুন? কার খুন? সে কেন কাউকে খুন করতে যাবে?এরকম হাজারো প্রশ্ন ঘুরতে লাগল মাহিমের মাথায়। বিস্ময়ের ঘোর কিছুটা কাটিয়ে উঠে অস্ফূট স্বরে বলল 'আপনি এসব কি বলছেন?আমি কাকে খুন করেছি?আর আমার এ অবস্থা কি করে হল?মেরীয়ান কোথায়?'। মাহিমের প্রশ্নে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল মাঝবয়েসী লোকটা 'কিছুই মনে পড়ছে না,না চান্দু?তোমার অভিনয়ের প্রসংশা আগেই শুনেছিলাম,এখন দেখছি লোকে একেবারে মিছে তারিফ করেনি তোমার।
সমস্যা নেই চিন্তা কর না,আমার হাতের দু-এক ঘা পড়লেই ও বিদ্যে কই উবে যাবে হাতড়েও খুজে পাবে না। আমার সাথে অভিনয় না?আমি কে?আমি এখানে কেন?আমার তো কিছুই মনে পড়ছে না,আমি কিচ্ছু করিনি-ঢের দেখেছি এসব। ওসব ভনিতা আমার সাথে চলবে না। এখনই দু-হাত দিয়ে তোমার ভনিতা ছুটিয়ে দিতাম,কিন্তু পাছে আবার মানবাধিকার সংস্থাগুলো ঝামেলা করে বলেই প্রকাশ্যে ওকাজটি করলাম না। একবার তোমায় হাজতে ঢোকাই তারপর দেখবে অফিসার হাডসন কি জিনিস?'ভৎসর্না করল লোকটা।
'আমার আসলেই কিছু মনে পড়ছে না,আমি তো সেন্ট পাবলো হসপিটালের ওয়েটিং লাউঞ্জে বসে ছিলাম...'আকুতি ফুটে উঠল মাহিমের কন্ঠে। 'ডাক্তার সামলাও তোমার অভিনেতা সামলাও' বলে ক্যাবিন ত্যাগ করল লোকটা। ডাক্তার মাহিমকে শান্ত হবার উপদেশ দিলেন এবং সিডেটিভ ইঞ্জেকশন দিলেন। অল্পক্ষণের মধ্যেই মাহিম তার সকল প্রশ্ন ও বিস্ময় নিয়ে ঘুমের গর্ভে বিলীন হল।
পরেরদিন সকাল,মাহিমের ক্যাবিনে বসে আছেন AIC এর চৌকস এজেন্ট এবং সাইকিয়াট্রিস্ট ক্যাথেরিন কার্লাইল।
ক্যাথেরিনের বাবা ছিলেন আর্মির মেজর জেনারেল,সেই সুবাদে ছোটবেলা থেকেই আর্মি স্কুলেই পড়েছে ক্যাথেরিন। ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসেস জয়েন করার আগে শখের বসেই পড়েছিল সাইকোলোজী,তখন কি আর ক্যাথেরিনও ভেবেছিল যে এই সাইকোলোজিই তাকে তর তর করে তুলে দেবে সাফল্যের শিখরে। মাত্র ২৬ বছর বয়সেই ক্যাথেরিন এখন একজন প্রথিতযশা AIC এজেন্ট।
মাহিমের ঘুম ভেঙ্গেছে,আশেপাশে চোখ বুলাতেই নজরে পড়ল রুমের সোফায় বসে থাকা ক্যাথেরিন। কালো স্যূট সাদা শার্ট আর কালো ফ্রেমের চশমায় কোন হলিউডি গোয়েন্দা সিনেমার নায়িকা বলেই মনে হচ্ছে ক্যাথেরিনকে।
খুব মনযোগ দিয়ে একটা ফাইলের পাতা উল্টাচ্ছে। ফাইল থেকে চোখ ফেরাতেই মাহিমের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল ক্যাথেরিনের। কিন্তু একি! এ মেয়ের চোখ তো কোন হলিউডি নায়িকার চোখের মত নয়,এ মেয়ের চাহনিতে কেমন যেন এক শীতলতা যেন এ নারীর হৃদয় রক্তে নয় বরফে ঠাসা,যেন এ নারী হুইটনী হাউস্টোনের 'i will always love u' শুনতে শুনতে অবলীলায় প্রেমিকের কফির কাপে বিষ ঢালতে পারে,চোখ সরিয়ে নিল মাহিম।
ক্যাথেরিনঃ ঘুম ভাঙ্গল তাহলে,তোমার ফাইলটিই দেখছিলাম। ভালই তো খেলছিলে,সুন্দরী প্রেমিকা, মেয়রের টাকা, একেবারে স্টেজের রাজা থেকে বাস্তবের রাজা হয়ে যাওয়া রাতারাতি।
কিন্তু শেষে এসে আত্মঘাতী ভূল নাকি দূর্ঘটনা?তা যাই হোক বাকী জীবনটা তোমাকে জেলেই কাটাতে হবে।
-আপনারা এসব কি বলছেন তার কোনটাই আমার মাথায় ঢুকছে না। আপনারা নিশ্চই কোথাও একটা বড় ধরনের ভুল করছেন। আমি কাউকে খুন করিনি,আর আমি কোন অভিনেতাও নই আর নাই আমি অভিনয় করছি। আমি এই হাসপাতালে এসেছিলাম মেরীয়ান নামক একজনের ফোন পেয়ে রীতি নামের একটি মেয়েকে সাহায্য করতে।
আমার যতদুর মনে পরে আমি হাসপাতালের ওয়েটিং লাউঞ্জে ঘুমোচ্ছিলাম। আর যখন ঘুম ভাঙ্গল তখন দেখলাম আমার এই অবস্থা। কিন্তু আমার এই অবস্থা কি করে হল তার কিছুই আমার মনে পড়ছে না।
ক্যাথেরিনঃ হুমম্ ডাক্তার তবে ঠিকই বলছিলেন যে তোমার কিছু মনে পড়ছে না। অবশ্য তোমার ব্রেনের স্ক্যানও সেইরকম একটা আশঙ্কার কথাই বলে।
তোমার ব্রেনের হাইপোক্যাম্পাস এক্সিডেন্টের ফলে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। হাইপোক্যাম্পাস কি জান?
-হুমম ব্রেনের যে অংশ লং টাইম মেমোরি স্টোরেজ হিসেবে কাজ করে। আমি একজন মাইক্রোবায়োলোজিস্ট,সাইকোলজিও পড়েছি কিছু। ব্রেনের কিছু টুকিটাকি তো জানি ই। আর 'আমার কিছুই মনে পড়ছে না' সে কথাটাও ভুল।
আমার সবকিছুই মনে আছে শুধুমাত্র এক্সিডেন্ট আর আপনাদের কাল্পনিক খুনের কথা ছাড়া।
ক্যাথরিনঃ বাহ্ তুমি দেখছি মাইক্রোবায়োলজিস্ট,আবার শখের সাইকোলজী পড়ুয়াও। তাহলে তো আমার কাজ আরো বেশী সোজা হয়ে গেল। তা বল দেখি,শুনি তোমার কি কি মনে আছে...
-তা নাহয় বলব কিন্তু তার আগে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিন। আপনি কে?আর আগে যে লোকটা এসেছিল সে কোথায়?মেরীয়ান কোথায়?
ক্যাথেরিনঃ আমি Australian intelligence corps এর এজেন্ট কাম সাইকিয়াট্রিস্ট ক্যাথেরিন কার্লাইল।
তোমার কেসটা আপাতত আমিই দেখছি। আর যে লোকটার কথা বলছ তিনি AFP এর অফিসার হাডসন,উনিই তোমাকে গ্রেফতার করেছিলেন। বাকী প্রশ্নগুলোর উত্তরও পাবে তুমি,তবে তার আগে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর চাই। তোমার যা যা মনে আছে সব খুলে বল,দেখি আমরা আর কি কি ভুল করছি তোমার ব্যাপারে।
-আমি মাহিম রিজওয়ান,বাংলাদেশী মাইক্রোবায়োলজিস্ট।
এক মাস আগে চাকরি নিয়ে সিডনীতে আসি...
মাহিম তার সিডনীতে আসা থেকে শুরু করে ঐদিন হাসপাতালের লাউঞ্জে ঘুমিয়ে পড়ার আগ পর্যন্ত সব কিছু খুলে বল্ল।
ক্যাথেরিনঃহুমম্ ইন্টারেস্টিং স্টোরি। তোমার গল্পের সত্য-মিথ্যায় পরে আসি। আগে আমি তোমাকে একটা গল্প বলি, শোন।
-আমার গল্প শোনার মত ধৈর্য্য বা ইচ্ছা কোনটাই নেই।
ক্যাথেরিনঃ তারপরও যে শুনতে হবে,আমি এতক্ষন বসে ধৈর্য্য-সহকারে তোমার গল্প শুনলাম আর তুমি আমারটা শুনবে না?
-ঠিক আছে বলুন
ক্যাথেরিনঃ গতবারের মেয়র ইলেকশনের সময়কার কথা। জোরেসোরে মেয়র পদপ্রার্থীদের প্রচারকার্য চলছে। আগের দুবারের মত সেবারও শক্তিশালী অবস্থানে মেয়র কেল্ভিন জেফারসন। তিনি জানতেন জনসমর্থন তার চেয়ে তরুন নেতা ফিলিপ টেইলরের দিকেই বেশী। কিন্তু তিনি ভাল করেই জানতেন নির্বাচন কিভাবে জিততে হয়।
তবে যতক্ষন না প্রয়োজন পরে তিনি হাত নোংড়া করবেন না। এমন অবস্থায় রোজেল ভ্রমনের সময় তার নজর কাড়ে রোজেল এ প্রচারকার্যের দায়িত্বে নিয়োযিত এক তরুন উচ্ছল কর্মী। তার দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হয়ে সম্পূর্ন নির্বাচনী প্রচারনার ভার কেল্ভিন অর্পন করেন তার উপর। সে কর্মীর নাম মেরীয়ান মনরো। মেরীয়ান তখন মাত্র কলেজ শেষ করেছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রী ছিল মেরীয়ান,তাই বরাবরই রাজনীতির প্রতি একধরনের আকর্ষন ছিল আর ছিল ক্ষমতার প্রতি প্রচন্ড লোভ। মেরীয়ানের বুদ্ধিমত্তা ও প্রচার দক্ষতার জোড়ে আবার জনপ্রিয়তা ফিরে পেতে শুরু করেন কেল্ভিন। এই নির্বাচনের পথ ধরেই ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠ হতে থাকে কেল্ভিন এবং মেরীয়ানের সম্পর্ক,এক পর্যায়ে ভালবাসতে শুরু করে তারা পরস্পরকে। কেল্ভিনের নির্বাচনে জয়ের পর ৪২ বছর বয়েসী কেল্ভিন বিয়ে করেন ২২ বছরের তরুনী মেরীয়ানকে। যদিও অনেকের মতে মেরীয়ানের দিক হতে বিয়েটা ছিল অর্থ ও ক্ষমতা একসাথে পাওয়ার সহজ উপায়।
দাম্পত্য জীবনের কিছুদিন যেতেই মেরীয়ান ও কেল্ভিনের রাজনৈতিক মতাদর্শের অমিল তাদের দু'জনেরই অক্ষিগোচর হয়। ধীরে ধীরে নিজের রাজনৈতিক জীবন থেকে মেরীয়ানকে দূরে ছুড়ে ফেলেন কেল্ভিন। মেরীয়ান হয়ে পরে নিঃসঙ্গ। অন্যান্য নিঃসঙ্গ উচু শ্রেনীর মহিলাদের মত সেও সমাজসেবা,থিয়েটার আর আর্ট গ্যালারীর প্রদর্শনীতে ব্যাস্ত করে তোলে নিজেকে। কিন্তু এ জীবন কখনোই কাম্য ছিল না মেরীয়ানের।
সে সুযোগ খুজতে থাকে এ বৃত্ত থেকে বাইরে আসার। সেটা তার জন্য খুবই সহজ হত যদি সে কেল্ভিনকে ডিভোর্স দিত। কিন্তু সেটা তার পক্ষে সম্ভব নয় কেননা কেল্ভিনকে স্বেচ্ছায় ত্যাগ করলে সাথে সাথে তার অর্থ ও ক্ষমতাকেও ত্যাগ করতে হবে। এমন সময় সিডনী সেন্ট্রাল থিয়েটারে মাসব্যাপী অনুষ্ঠানের জন্য আসে একটি এশিয়ান থিয়েট্রিকাল দল। সে দলেরই একজন ছিল বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত লিয়াম মাহফুজ।
প্রথম দিনের শো তেই লিয়ামের অভিনয় খুব ভাল লাগে মেরীয়ানের। শো এর পর নিজে গিয়ে দেখা করে সে লিয়ামের সাথে। এরপর থেকে লিয়ামের সবগুলো শো মুগ্ধ নয়নে দেখেছে মেরীয়ান। প্রতিবার নিজে গিয়ে প্রশংসা করেছে লিয়ামের অভিনয়ের,কোন কোন দিন একসাথে ডিনারও করেছে তারা দুজন। এভাবেই আস্তে আস্তে ঘনিষ্ঠতার পথে হাটতে থাকে তাদের সম্পর্ক।
একসময় লিয়াম ও মেরীয়ান স্বপ্ন দেখে একসাথে ঘর বাধার। এশিয়ান শিল্পীদের দলটি সিডনি ছেড়ে চলে গেলেও লিয়াম থেকে যায় মেরীয়ানের টানে। মেরীয়ান কেল্ভিনকে ডিভোর্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু লিয়াম তাকে তাড়াহুরো করতে নিষেধ করে। সে মেরীয়ানকে বোঝায় যে একটি নতুন ও সুন্দর জীবন শুরু করতে তাদের যেটা সবচেয়ে বেশী দরকার তা হচ্ছে টাকা। এ কথায় অতি সহজেই সম্মত হয় মেরীয়ান।
তারা দুজন মিলে কেল্ভিনের অর্থ আত্মস্যাৎ করার ফন্দি আঁটতে থাকে। একই সাথে লিয়ামেরও ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে আসে। তারা দুজন সিদ্ধান্ত নেয় কেল্ভিন আর মেরীয়ানের জয়েন্ট একাউন্টের সম্পূর্ন অর্থ আত্মস্যাৎ করে পালিয়ে অন্যকোন দেশে নিজেদের নতুন জীবন শুরু করার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে একাউন্টের সকল অর্থ তুলে নেয় মেরীয়ান। কিন্তু এ কথা জেনে যায় কেল্ভিন।
পালানোর প্রস্তুতি যখন শেষ ঠিক সেই মুহূর্তেই মেরীয়ানকে পাকড়াও করে সে। এদিকে মেরীয়ানের দেরী দেখে উদ্বিগ্ন লিয়াম পা বাড়ায় জেফারসন ম্যান্সনের দিকে। দেয়াল টপকিয়ে ঢুকে পরে সে ম্যানসনের ভিতরে। তখন স্টাডিতে মেরীয়ান আর কেল্ভিন তর্ক করছে। তর্কের এক পর্যায়ে মেরীয়ানের গায়ে হাত তোলে কেল্ভিন।
জানালা দিয়ে এ দৃশ্য দেখে নিজেকে সামলাতে না পেরে জানালা গলে স্টাডিতে ঢুকে পরে লিয়াম। এক ধাক্কায় কেল্ভিনকে মেরীয়ান থেকে দূরে ছুড়ে ফেলে সে। কেল্ভি্নের উঠে দাড়াতে কিছুটা সময় লাগে,ততক্ষণে টাকার ব্যাগ নিয়ে পালাতে উদ্যত হয় ওরা দু'জন। পথ আগলে দাঁড়ায় কেল্ভিন, উচ্চস্বরে সিকিউরিটি গার্ডদের ডাক দেয়। লিয়ামের হাতে বেরিয়ে আসে একটি পয়েন্ট টু টু রিভলভার,সে তাকে এবং মেরীয়ানকে নিরাপদে অস্ট্রেলিয়া ত্যাগ করার ব্যাবস্থা করে দিতে বলে।
কেল্ভিন তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে বলে 'তোমরা যে জাহান্নামে খুশি যাও,তবে আমার উপার্যিত অর্থের একটি কানা-কড়িও তোমাদের সাথে যাবে না'। ততক্ষণে গার্ডরা স্টাডির দরজায় আঘাত হনতে শুরু করেছে। কিন্তু লিয়াম কিছুতেই টাকার ব্যাগ হাতছাড়া করতে নারাজ। এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঘাবড়ে যায় মেরীয়ান,সে লিয়ামকে টাকা ছাড়াই চলে যাবার জন্য বলে। কিন্তু মেরীয়ানের শত অনুযোগের পরও লিয়াম টাকার ব্যাগ হস্তগত করতে মেয়রের সাথে ধস্তাধস্তিতে লিপ্ত হয়।
ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে লিয়াম গুলি করে মেয়র কেল্ভিনকে। এ ঘটনায় যেন সম্বিত ফিরে পায় মেরীয়ান,এ লোক তো তাকে ভালবাসেনি সে ভালবেসেছে তার অর্থকে,সে তাকে চায়নি সে চেয়েছিল শুধুমাত্র কেল্ভিনের টাকা। কেল্ভিনের নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে নিজের এমন ভুলে কুকড়ে ওঠে মেরীয়ান,সে কিনা একটা খুনীকে ভালবেসেছিল?আর সেই ভুলের মাশুল গুনল কেল্ভিন। লিয়াম টাকা নিয়ে পালাতে চাইলে বাধ সাধে মেরীয়ান। ততক্ষনে স্টাডির দরজা ভাঙ্গার জন্য আঘাত হানছে সিকিউরিটি গার্ডেরা।
বেপরোয়া লিয়াম বাচার কোন পথ না দেখে গুলি করে মেরীয়ানকে,নিমিষেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মেরীয়ানের নিথর দেহ। লিয়াম জানালা গলে একছুটে দেয়াল টপকে বাইরে চলে আসে। তার পিছু নেয় মেয়রের ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান হাডসন। লিয়ামকে লক্ষ্য করে কয়েকবার গুলি ছোড়ে হাডসন। জীবন বিপন্ন দেখে শেষমেষ টাকা ভর্তি ব্যাগ ফেলেই ছুটতে শুরু করে লিয়াম।
কিন্তু শেষরক্ষা হয় না,রাস্তার মোড়ে পৌছতে না পৌছতেই একটা সাদা ক্যাডিলাক সজোরে ধাক্কা দেয় লিয়ামকে,জ্ঞান হারায় লিয়াম,বন্দি হয় অফিসার হাডসনের হাতে।
-এ গল্প আমাকে শোনানোর মানে কি?,লিয়ামের উৎসুক প্রশ্ন।
ক্যাথেরিনঃকিছুই বোঝনি? মনে পড়ছে না কিছু?
-নাহ্। কোন একটা সিনেমায় হয়তো বা এরকম একটা দৃশ্য দেখেছিলাম
ক্যাথেরিনঃ হা হা হা...সিনেমাই বটে,পড়বে সবই মনে পড়বে তোমার লিয়াম মাহফুজ,আমার কাজই তো তোমাকে সব মনে করানো।
চলবে......।
।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।