আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিভ্রম মাত্রা



‘ডাক্তার সাহেব, আমাকে বাঁচান। আমি বাঁচতে চাই’, মিঃ দ’য়ের করুণ অনুনয় কান্নার মতো শোনাল। ততোক্ষণে বিকেলের মৃদু রোদ জানালা দিয়ে চেম্বারের নাম ফলকে অদ্ভুত আভা ফেলেছে। ফলকের অক্ষর গুল দূর থেকেও পড়া যায়- ‘ডাঃ ক, মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞ, সিনিয়র কন্সাল্টেন্ট..’। চেম্বারের ভিতরে ডঃ ক পড়েছেন কঠিন ঝামেলায় তার এই নতুন রোগীটিকে নিয়ে।

তার ত্রিশ বছরের ডাক্তারি জীবনে তিনি কখনো এরকম রোগী দেখেননি। ডঃ ক’এর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দিল। স্বভাবগতভাবে এর মানে হল ডঃ ক এখন গভীর চিন্তা মগ্ন। ডঃ ক এর ধারনা মিঃ দ একধরণের সিজফ্রেনিয়া রোগে ভুগছেন। ধরণটা হতে পারে ‘বহু-ব্যক্তিত্ব বিশৃঙ্খলা’ (মাল্টিপল পারসনালিটি ডিসঅর্ডার) বা ‘কর্তৃত্বময় বিভ্রম’ (গ্রান্ডিওজ ডিল্যুশন)।

মিঃ দ বিভিন্ন চরিত্র বা ব্যক্তিত্ব একই সাথে ধারণ করেন। বরং সঠিক ভাবে বললে -অন্য চরিত্র তাকে ভর করে। যখন যে চরিত্রটি তার উপর সওয়ার হয়, তিনি তার মতো কথা বলেন, আচরণ করেন। সবচেয়ে ভয়ের কথা, তিনি একই সাথে অনেকগুল ব্যক্তিত্ব ধাণন করতে পারেন। এ অবস্থার অবসান হলে, আবার তিনি সব বেমালুম ভুলেযান।

পেশায় একজন নামকরা বহুজাতিক কোম্পানির সফল এক্সিকিউটিভ। বছর খানিক হল তিনি এই ঝামেলায় ভুগছেন। মিঃ দ-এর এটি দ্বিতীয় সেশন। ডঃ ক চিন্তার রেশ টানলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনার এই অবস্থা কখন বা কিভাবে আরম্ভ হয়?’ ‘ঠিক নেই।

তবে খেয়াল করে করে দেখেছি যখনি আমি কোন অন্যায় করি, সাধারণত তখনি এটি শুরু হয়। ‘ ‘যেমন ..?’ ‘যেমন আজ আমাদের কোম্পানি সরকারের সাথে তেল গ্যাস উত্তলনের নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে..। ‘ ‘এর সাথে অন্যায়ের কি সম্পর্ক?’ ‘সম্পুর্ন দেশের স্বার্থ বিরধী চুক্তি। বলতে পারেন দেশ বিক্রী। আমি পারসেন্টেজ দিয়ে উপর লেভেল ম্যানেজ করেছি।

‘ ‘হু.. বিবেকের দংশন। ‘ ডঃ দ মনে মনে ভাবলেন, তাও ভাল এই অসুস্থ চাঁড়ালটার বিবেকবোধ এখন নিম্ন স্তরের হলেও বর্তমান। আমাদের নেতাদেরতো তাও নাই। ‘ডঃ সাহেব, এইতো, এইতো শুরু হচ্ছে..’, বলতে বলতে মিঃ দ তার সামনে চেয়ারে এলিয়ে পড়লেন। (চলবে..)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।