আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আদর্শের পিরিচে কাঁদা লইয়া ছুড়তে থাকেন, ভারতের কিছুই ছিড়তে পারবেন না

হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন, কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র

শুরুতেই বলে নেই যে গতকাল সীমান্তে ভারতীয় আগ্রাসন বিরোধী মানব বন্ধনে আমি অংশগ্রহণ করি নাই। বিভিন্ন কারণে ব্লগে অনিয়মিত থাকা এবং তারপরে ফিরে এসেই হুটহাট মানব বন্ধনে অংশ নেয়ার ঘোষনা, তারপর আবার ঠিক মানব বন্ধনের আগের দিনের ফিফার পোস্টের পর স্বিদ্ধান্তহীনতা আর সব শেষে গতকাল সকালে মানব বন্ধনে অংশগ্রহণ না করার স্বিদ্ধান্ত নেয়ার মাঝে যেইসব কারনগুলা কাজ করেছে ব্লগে তার বিস্তারিত ফিরিস্তি গাইতে চাইনা। শুধু এইটুকুই বলতে চাইযে সহযোদ্ধার ওপর পূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস না রাখতে পারলে আমি এক সাথে লড়াইয়ের ময়দানে নামি না। মানব বন্ধনের আগের দিন তায়েফ আহমাদের সাথে বেশ কয়েকবার ফোনে কথা হয়েছে। ফিফার পোস্টের পর যেসব প্রশ্ন এবং অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে ব্লগে এবং ফোনালাপে সেসবের সদুত্ত্বর তিনি আমাকে দিতে পারেন নাই।

এর বেশি কিছু এবিষয়ে বলতে চাই না। মানব বন্ধনের আহবায়ক এবং যুগ্ন আহবায়ক দুজনেই জামাত-শিবিরের সাথে জড়িত, উপস্থিত আরো অনেকেই হয়তো জামাত-শিবিরের সাথে জড়িত ছিলেন। তারপরও, বিষয়টা না জেনে বা পুরোপুরি অনুধাবন না করে অন্তরের টানে, দেশের প্রতি ভালোবাসায় এবং কোন রকম পার্টি স্বার্থ ছাড়াই যারা মানব বন্ধনে উপস্থিত ছিলেন তাদের প্রতি আমার কোন অভিযোগ নাই, বরং অভিনন্দন। সত্য স্বিকার করতে দোষের কিছু নাই, সময়োপযোগি আন্দোলন সংগ্রাম চিহ্নিত করে রাজনীতির মাঠ দখল করতে এদেশের প্রগতিশীলরা বহুবার ব্যর্থ হয়েছেন, এইটা ঐতিহাসিক সত্য। আর স্বস্তা বূলি এবং ক্রিয়া তৎপড়তা দিয়ে সেই মাঠ দখল করেছে লীগ, বিএনপি, জামাত ইসলামি ইত্যাদি জনবিমূখ রাজনৈতিক দল।

রাজনীতি নিয়া দুই চার কথা না বললে আমার এই পোস্টের মর্মার্থ বোঝা যাবে না। গত কয়েকদিনে তর্ক বিতর্ক এবং কাদা ছোড়াছুড়ির একটা মজার ব্যাপার ছিল, কেউ দাবি করছিল যে এই মানব বন্ধন রাজনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট, আবার কেউ বা এহেন জাতীয় ইস্যুতে রাজনীতি টানায় ঘৃণা প্রকাশ করছিলেন, গোটা মানববন্ধনকে একটি অরাজনৈতিক আন্দোলন হিসাবে দাবি করে আসছিলেন। এহেন বিতর্ক ব্লগারদের রাজনৈতিক অসচেতনতার বহিঃপ্রকাশ ভিন্ন অন্য কিছু না। প্রকৃতপক্ষে ভারতের আগ্রাসন একটা রাজনৈতিক বিষয়, এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদও একটা রাজনৈতিক বিষয়। “মানব বন্ধন” জিনিসটা রাজনৈতিক কর্মসূচিরই অংশ, সেইটা কোন পার্টি দিক অথবা ব্লগারদের কোন গোষ্ঠি।

যেকোন রাজনৈতিক আন্দোলন বা কর্মসূচী সেইটা ব্যক্তি হোক বা গোষ্ঠির সেইটার কোন না কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ, ভাষা ইত্যাদি থাকে। আমরা মনে করি বিএনপি এবং আওয়ামীলীগের কর্মসূচী রাজনৈতিক, আমাদেরটা না। এই কারণেই আমাদের প্রতিবাদ, কর্মসূচী এখন সেইটা মানব বন্ধন হোক বা পোস্টারিং এইটা কোন সূফল বয়ে আনবে নাই। প্রচলিত পার্টির বাইরে জনগণও রাজনীতি করতে পারে, এহেন রাজনৈতিক সচেতনতা না থাকলে জনগণের হাতে কখনো ক্ষমতা আসবেনা, ক্ষমতা পার্টির হাতেই থাকবে। আবারো বলছি ভারতের আগ্রাসন একটা রাজনৈতিক বিষয়, এই আগ্রাসনের বিরোধীতাও একটা রাজনৈতিক বিষয়।

এই কারণে, এই বিরোধীতার রাজনৈতিক মতাদর্শগত মন্ত্র সম্বন্ধে পরিস্কার ধারণা না থাকলে এই আন্দোলন মাঠে মারা যাবে, আন্দোলনের ফশল যাবে প্রতিক্রিয়াশিলদের ঘরে। মানব বন্ধন কোন রাজনৈতিক সংগঠন ডাকলেই তাতে উপস্থিত থাকা যাবে না এইটা হইলো ভুয়া কথা। সেই রাজনৈতিক সংগঠন যদি জনতার পক্ষের শক্তি হয় তাতে অংশগ্রহণ করায় অবশ্যই কোন অন্যায় নাই। তবে, জামাত শিবির বা তাদের সমর্থক কেউ এহেন রাজনীতির সাথে জড়িত না এই বিষয়ে বেশিরভাগ ব্লগারই আমার সাথে একমত হবেন বলে মনে করি। পুরো ঘটনায় লাভ কারো হয় নাই।

মানব বন্ধন আয়োজকরা ট্যাগিং পেয়েছেন, বিরোধীরা ট্যাগিং পেয়েছেন, অনেক নামকরা ব্লগারকে নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। তবে, আসল ক্ষতিটা বোধহয় সবচেয়ে বেশি হয়েছে যেই প্লাটফর্মকে কেন্দ্র করে আমরা কথা বলার, ঐক্য করার, বিরোধীতা করার, ভার্চুয়াল রাজনীতি করার সুযোগ পাই, সেই বাংলা ব্লগ, বিশেষ করে সামহোয়ারইনব্লগের। গত কয়েকদিনে মানব বন্ধন নিয়ে প্রশ্ন তুলে ভাদা হয়েছেন দেশী পোলা, ফিউশন ফাইভের মতো ব্লগার, গতকাল থেকে ছাগু ট্যাগিংএ পরছেন শামসির, কৌশিকএর মতো ব্লগাররা, খোদ ব্লগ মালিক জানা’ও এখন আর এই নোঙড়া ট্যাগিংএর বাইরে নাই। তায়েফ আহমাদ জনপ্রিয় ব্লগার, নিজের কোন রাজনৈতিক দল সংশ্লিষ্টতার কথা তিনি কোনদিন ব্লগে ঘোষনা করেন নাই, জামাত শিবিরের প্রচলিত ধারার প্রোপাগান্ডাও কখনো করেন নাই। এখন তার যদি বিশেষ কোন রাজনৈতিক দলের সাথে কোন ধরণের সাংগঠনিক বা আদর্শগত সম্পর্ক থাকে সামহোয়ারইনব্লগ কর্তৃপক্ষের তা জানার কথা না।

একটা পোস্ট স্টিকি করতে গিয়ে সেই ব্লগারের চৌদ্দ পুরুষের খবর নিতে হবে এমন কোন কথা নাই। আমার মনে আছে, মামুন হাওলাদার হত্যাকান্ডের বিচার দাবিতে এবং ইভটিজিং বিরোধী যে মানব বন্ধন আমরা ডেকে ছিলাম সেই পোস্ট এক সপ্তাহ স্টিকি পোস্ট হিসেবে ঝুলেছে সামুতে, আমি তখন খুব বেশি পরিচিত ব্লগার ছিলাম না। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না রূপগঞ্জে সামরিক আগ্রাসন বিষয়ক পোস্টও সামুতে স্টিকি পোস্ট হিসাবে ছিল, যেইখানে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে কথা বলতে বাংলাদেশের যে কোন প্লাটফর্মই ভয় পায়। জনগণের স্বার্থে ভালো কোন কাজে যুক্ত হওয়ার, তাকে প্রোমট করার স্বদিচ্ছা এবং নিখাদ স্বদেশ প্রেম না থাকলে এসব পোস্ট কখনো স্টিকি পোস্টে যায়গা করে নিত না। ফেলানির হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে মানব বন্ধনকে এহেন আদর্শিক অবস্থান থেকেই স্টিকি করেছিল সামু কর্তৃপক্ষ, আমি অন্তত সেটাই বিশ্বাস করি।

ফিউশন ফাইভের পোস্টএর পর প্রতারিত অনুভব করেছেন অনেক ব্লগারই। একি কথা খাটে সামু কর্তৃপক্ষের ক্ষেত্রেও। অথচ স্টিকি পোস্টের সূত্র ধরে অনেকেই এখন পুরো দোষ চাপাতে চাচ্ছেন ব্লগ কর্তৃপক্ষের ঘাড়ে। এ ধরণের দায়িত্বজ্ঞানহীন কাদা ছোড়াছুড়ি আর ট্যাগিং এমনিতেই বহুধা বিপদ আর অপমানে জর্জরিত এই দেশের মানুষকে আরো কত বিপদ আর অপমানে জর্জরিত করবে সেই চিন্তা শ্রেফ ব্যক্তি আবেগ আর অহং স্বর্বস্ব বেশিরভাগ ব্লগারেরই নাই। সবশেষে দুইটা কথা বলি।

প্রথম কথাটা বেশিরভাগ ব্লগারেরই পছন্দ হবে না। ব্লগের বেশিরভাগ ব্লগারেরই আদর্শিক অবস্থান পাকা পোক্ত না। এই কারণে ছাগু ভাদা ট্যাগিং আর কাদা ছোড়াছুড়িকেই তারা সর্বোচ্চ রাজনৈতিক কর্মকান্ড বলে মনে করে। অথবা একটা মানব বন্ধনে উপস্থিত থাকা বা না থাকাকেই যারা আদর্শগত অবস্থানের মানদন্ড বলে ধরে নিচ্ছেন তাদেরও রাজনৈতিক বা আদর্শগত পরিপক্কতা খুব বেশি আছে বলে মনে হয় না। বিশ্বাস করেন ভাইয়েরা, ছাগু ভাদা ট্যাগিং কইরা কিংবা এক দুইটা মানব বন্ধন কইরা ভারতের কিছুই ছিড়া যাবে না।

মানব বন্ধনের আগে বা পরে কিছু ট্যাগিং আর কাদা ছোড়াছুড়ি করবেন, তারপরে নাক ডাকায়া ঘুমাইবেন, দুইদিন পরে ফেলানির কথা কারো মনে থাকবেনা। নিজের দিকে একবার তাকান, নিজের যোগ্যতা আর দায়বদ্ধতারে প্রশ্নবিদ্ধ করেন, অন্তত নিজের কাছে একবার সত্য কথাটা স্বিকার করেন। দেশপ্রেম আর বিদেশী আগ্রাসন প্রতিহত করার মতো আদর্শিক শক্তি থাকলে ব্লগে বইসা দিন রাত ছাগু ভাদা ট্যাগিং করতেন না। কথাটা আপনার আমার সবার ক্ষেত্রেই খাটে। আমাদের পূর্ব পুরুষদের যা কিছু গর্বিত অর্জন তা এত তুচ্ছ ট্যাগিংএর মাধ্যমে অর্জিত হয় নাই।

আদর্শের পিরিচে আদর্শ থাকলে সেই আদর্শ ধারণ কইরা বন্দুকের নলের সামনে বুক ফুলাইয়া দাঁড়ান যায়, প্রয়োজনে বন্দুক কাইড়া নিয়া উলটা গুলি ছোড়া যায়, কিন্তু আদর্শের পিরিচে কাঁদা থাকলে ঐ কাঁদা ছোড়াছুড়ি ছাড়া আর কিইবা করতে পারবেন। এইবার একটা কথা বলি, যেইটা পছন্দ হওয়ার মতো কথা। আমাদের প্রগতিশীলদের সঠিক সময়ে জনগণের পক্ষে এবং সময়োপযোগী আন্দোলনে নামার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কথা আগেই একবার উল্লেখ করছি। এইটা ঐতিহাসিক সত্য। কিন্তু এর বাইরেও আরো কিছু ঐতিহাসিক সত্য আছে।

যেই কয়বার তারা জনগণের পক্ষে সময়োপযোগী আন্দোলনে নামতে পারছে, সেই কয়বারই ইতিহাস তৈড়ি হইছে, দুনিয়া কাপছে, বিশ্বের মানচিত্রে বিষ্ময়কর ঘটনা ঘইটা গেছে। শ্রেফ সমালোচনা ছাইড়া আসেন সত্যরে স্বিকার করি, জড়তা ছাইড়া সময়োপযোগী আন্দোলনে নামি। ইতিহাস তৈড়ির খেলা বাঙালি বহুবার খেলছে, আবারো খেলবে। আজকে যদি না হয় মর্দ, কোন কালেই না, ইতিহাসের পাতায় কিংবা বীর শহীদের শহীদ মিনার, ভবিষ্যতের রক্ত কিংবা বুকের ভেতর যতন করা, চেতন কিংবা বীর গাথাতে, জায়গা হবে না।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.