জামায়াতে ইসলামীকে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করার আবেদন খারিজ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী গতকাল বিকালে সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এর ফলে হাইকোর্টের পরে আবারও সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালতে জামায়াত ইসলামীর নিবন্ধন আটকে গেল। অর্থাৎ, এ বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ই বহাল রয়েছে। তবে জামায়াতের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, চেম্বার বিচারপতির এ আদেশ প্রত্যাহারে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করা হবে। শুনানিতে চেম্বার আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ইসির পক্ষে অ্যাডভোকেট এম কে রহমান, জামায়াতের পক্ষে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম এবং রাষ্ট্র পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
আদেশের পর ইসির আইনজীবী, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা জামায়াতের আবেদনের বিরোধিতা করেছি। যেহেতু অবৈধভাবে জামায়াতকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল, সুতরাং হাইকোর্টের রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের নিবন্ধন বৈধ করার সুযোগ নেই। জামায়াতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্টের রায় বাতিল চেয়ে করা আমাদের আবেদন খারিজ করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শেষে আমরা আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে আপিল করব। তিনি আরও বলেন, চেম্বারে যারা আবেদন করেন তাদের আবেদন শুনানির জন্য এক দিন আগে আদালতে ম্যানশন করে পর দিন তা শুনানির জন্য কার্য তালিকায় আসে। কিন্তু আজ আমরা আদালতে এসে হঠাৎ করে দেখি চেম্বারের কার্য তালিকায় এসেছে। এ অবস্থায় আজ শুনানি না করার জন্য আমরা আবেদন করেছিলাম। কেননা আমরা ম্যানশন করিনি এবং আমাদের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক উপস্থিত নেই। কিন্তু আদালত আমাদের আবেদন গ্রহণ না করে আপিল খারিজ করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান বলেন, আবেদনটি কার্য তালিকার ৩৭ নাম্বারে ছিল। সুতরাং কার্যতালিকায় ছিল না বলে জামায়াতের আইনজীবীর দেওয়া বক্তব্য সঠিক নয়।
এর আগে ১ আগস্ট হাইকোর্টের একটি বৃহত্তর বেঞ্চ রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ বলে ঘোষণা করেন। একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুল অ্যাবসলিউট করে বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর হাইকোর্ট বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এ রায় দেন। রায়ের বিরুদ্ধে ওইদিনই আপিল করে জামায়াত।
সব পক্ষের শুনানি শেষে ১২ জুন থেকে বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) ছিল হাইকোর্টের ওই বেঞ্চে। একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ববহিভর্ূত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি(১)(বি)(২) ও ৯০(সি) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ঘোষণা করা হবে না, জানতে চেয়ে ২০০৯ সালে রুল জারি করেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে এ রিট আবেদনটি দায়ের করেন বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব, বর্তমানে প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি। আবেদনে বলা হয়, চারটি কারণে জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে পারে না। প্রথমত, জনগণকে সব ক্ষমতার উৎস বলে নীতিগতভাবে মনে করে না জামায়াত। একই সঙ্গে আইন প্রণয়নে জনপ্রতিনিধিদের নিরঙ্কুশ ক্ষমতাকেও স্বীকার করে না দলটি। দ্বিতীয়ত, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুসারে কোনো সাম্প্রদায়িক দল নিবন্ধন পেতে পারে না। অথচ কার্যক্রম ও বিশ্বাসে দলটি সাম্প্রদায়িক। তৃতীয়ত, নিবন্ধন পাওয়া রাজনৈতিক দল ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গের কোনো বৈষম্য করতে পারে না। কিন্তু এই দলের শীর্ষ পদে কখনো কোনো নারী বা অমুসলিম যেতে পারবে না। চতুর্থত, বিদেশের কোনো সংগঠনের শাখা হিসেবে এ দেশে কোনো রাজনৈতিক দল পরিচালিত হতে পারবে না। অথচ জামায়াত বিদেশের একটি সংগঠনের শাখা। সদস্যরাও স্বীকার করেন দলটির জন্ম ভারতে। দলটির শাখা রয়েছে বিশ্বজুড়ে। রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে ওই বছরের ২৭ জানুয়ারি বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক (পরে প্রধান বিচারপতি হয়ে অবসরে) ও বিচারপতি আবদুল হাইয়ের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। নির্বাচন কমিশনসহ জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। পরে রুলটি উত্থাপন করা হয় বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে। সেখানে আংশিক শুনানির পরেই পরিবর্তন হয় ওই বেঞ্চের এখতিয়ার। এরপর আর রুলের শুনানি করার উদ্যোগ নেয়নি কোনো পক্ষই। ফলে এটি আদালতের কার্য তালিকায়ও আসেনি। সম্প্রতি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ও জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের জোর দাবি ওঠায় ওই রুলের শুনানি শুরুর জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করে রিটকারী পক্ষ। পরে প্রধান বিচারপতি ওই বিষয়টি শুনানির জন্য হাইকোর্টের বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ নির্ধারণ করেন। এ বেঞ্চ বিষয়টি শুনানির জন্য বৃহত্তর বেঞ্চ গঠনের প্রয়োজনীয়তা বোধ করলে বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের সমন্বয়ে বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করেন প্রধান বিচারপতি। গত ১২ জুন রুলের ওপর শুনানি শেষ হয় এই বেঞ্চে। এর আগে ১১ এপ্রিল রুলের চূড়ান্ত শুনানি শুরু হয়। ওইদিন আদালতে হলফনামা আকারে ইসির জবাব দাখিল করা হয়। ১৮ এপ্রিল রিটের পক্ষে শুনানি শেষ করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। আর ২৫ এপ্রিল শুনানি শেষ করেন ইসির আইনজীবী মহসীন রশীদ। এরপর ২২ মে থেকে জামায়াতের পক্ষে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন ও অ্যাডভোকেট জসিমউদ্দিন সরকার শুনানি করেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।