যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই'র (ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) আদলে বাংলাদেশেও চালু হচ্ছে পুলিশের নতুন বিশেষ ইউনিট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত পুলিশের নতুন এই বিশেষ ইউনিটের কাজ হচ্ছে সারা দেশের চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্ত করা। শীঘ্রই পুলিশের এই বিশেষায়িত দলটি কাজ শুরু করবে। তবে আটকে আছে পুলিশের অপর দুই ইউনিট মেরিন ও ট্যুরিস্ট পুলিশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, পিবিআই তার কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করলে সারা দেশের চাঞ্চল্যকর মামলার জট কমবে। ভুক্তভোগীরাও স্বজন হারানোর বিচার পাবেন। মেরিন এবং ট্যুরিস্ট পুলিশ চালু না হওয়ায় নৌপথে ছিনতাই ডাকাতিসহ নানা অপরাধ যেমন বাড়ছে এবং পর্যটকদের শতভাগ নিরাপত্তা দেওয়া যাচ্ছে না। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, পিআইবির মামলা তদন্তের নীতিমালা আছে। ওই নীতিমালা মতে শীঘ্রই কার্যক্রম শুরু করা হবে। সড়ক পথের পাশাপাশি নদী ও সাগর পথে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এ জন্য নৌ ও ট্যুরিস্ট পুলিশ নামে দুটি ইউনিট গঠন করার কাজ এগিয়ে চলছে। আশা করছি- খুব শীঘ্রই কার্যক্রম শুরু হবে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, চলতি বছর জানুয়ারিতে পিবিআই গঠিত হলেও এখনো পর্যন্ত মাঠে কাজ শুরু করতে পারেনি এই ইউনিটটি। তবে চলতি মাসের মধ্যেই এটি চালু হওয়ার কথা রয়েছে। প্রথমে জেলা পর্যায়ে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ইউনিট তাদের কাজ শুরু করবে। ডিএমপির কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের দোতলায় ইউনিটের অস্থায়ী কার্যালয় রয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় প্রায় ১ হাজার ফোর্স নিয়ে কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এখন প্রশিক্ষণ চলছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ৩ বছর সারা দেশে দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত এবং বিচার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ শেষে একটি রিপোর্ট দাখিল করে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই সব মামলার মধ্যে সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে প্রায় ৭৫ শতাংশ মামলা খালাস হয়ে যায়। এ কারণে অনেক আসামি খালাস পেয়ে আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ২০১১ সালে 'পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন' নামে একটি পৃথক তদন্ত সংস্থা গঠনের প্রস্তাব করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী এ প্রস্তাবে সম্মতি দিলে পুলিশ অ্যাক্ট ১৮৬১-এর সেকশন ১২-এর ক্ষমতাবলে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশক্রমে গত বছরের অক্টোবরে পিবিআই গঠিত হয়। সূত্র আরও জানায়, প্রতিবছর সারা দেশে গড়ে ১ লাখ ৬০ হাজার মামলা হয়। এসব মামলার মধ্যে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার পাশাপাশি ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মামলাগুলোসহ ১৫ ধরনের মামলার তদন্ত পর্যায়ক্রমে শুরু করবে পিবিআই। পুরো জনবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের পর প্রতিবছর ৭০ হাজার মামলা তদন্ত করতে সক্ষম হবে এ বিশেষ ইউনিট।
আটকে আছে ট্যুরিস্ট ও মেরিন পুলিশ : সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুলিশকে আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পুলিশ সদর দফতর থেকে ১৮টি বিষয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারের কাছে তুলে ধরা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১১ সালের পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পুলিশ বাহিনীকে যুগোপযোগী, আধুনিক ও গতিশীল করতে এবং এ বাহিনীর দীর্ঘদিনের দাবি সংবলিত ১৮ দফা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। এ দফাগুলোর মধ্যে মেরিন পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, পৃথক তদন্ত ইউনিট (পিবিআই) ও ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার ও পুলিশ বাহিনীতে নতুন করে বিভিন্ন পদে ৩২ হাজার ৩১টি পদ সৃষ্টির কথা বলা হয়। কিন্তু সরকারের মেয়াদ প্রায় শেষ হলেও মেরিন পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশ এখনো চালু করতে পারেনি। সূত্র জানায়, পুলিশের নতুন এই দুটি ইউনিট সংক্রান্ত ফাইল দুটি স্বরাষ্ট্র এবং সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদিত হয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চলে গেছে। প্রায় ৩ মাস আগে অর্থ মন্ত্রণালয় ইউনিটগুলোর কার্যক্রম শুরু করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠিয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা চিঠিটি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, এই সরকারের আমলেই কার্যক্রম শুরু হবে। এমনই সব আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে পুলিশ বাহিনীর বিশেষায়িত এই দুটি ইউনিট। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের ১৫২ নৌরুটের মধ্যে ১২৩টিই অপরাধীরা নিয়ন্ত্রণ করছে। এসব নৌরুটে চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও লুণ্ঠনের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক। অরক্ষিত থেকে যাচ্ছে নৌপথগুলোর নিরাপত্তা। যার ফলে নৌপথে অপরাধের সংখ্যা বেড়েই চলছে। গুরুত্বপূর্ণ নৌপথের বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যাপক চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথগুলোতে পুলিশের টহল নেই বললেই চলে। দিনের চেয়ে রাতের বেলায় অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। লঞ্চ ছাড়ার আগে যাত্রীদের কোনো ছবি সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে না। তাছাড়া লঞ্চে যাত্রীবেশে অপরাধীরাও সাধারণ যাত্রীদের ওপর হামলে পড়ে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, নৌ ও ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরপরই মাদকদ্রব্য পাচাররোধ, জলদস্যুসহ অন্য অপরাধীদের গ্রেফতার অভিযানে অংশ নেবে তারা। এমনকি কোনো জাহাজ বা নৌকা ডুবে গেলে উদ্ধার কাজেও এগিয়ে আসবে নৌ-পুলিশ। আগামী দুই মাসের মধ্যে কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা করছি।
এই দুটি ইউনিটের জন্য স্পিডবোট ও অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র আমেরিকা বা চীন থেকে আনা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র পাওয়ার পর প্রস্তাবনাটি আমাদের মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করে দ্রুত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।