রাজধানীর মিরপুরে বেতনভাতা আদায়ের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে গাড়ি ভাঙচুর করেছে কয়েক হাজার গার্মেন্ট শ্রমিক। সারা রাত গার্মেন্টে কাটানোর পর গতকাল সকালে শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের দিকে অগ্রসর হতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এতে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শ্রমিকদের ওপর গুলি, টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও বেধড়ক লাঠিচার্জ করে। এ নিয়ে পুলিশ-শ্রমিক দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সফটটেক গার্মেন্টের সামনে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে পুলিশ ও শ্রমিকসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে ৭-৮টি যানবাহন ভাঙচুর করে। দুই ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ ও ভাঙচুরে মিরপুর ১০ থেকে ১২ নম্বর সেক্টর পর্যন্ত মূল সড়কে সব ধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে শুক্রবার দুপুর থেকে শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে ও বাইরে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, কোনো রকম নোটিস না দিয়েই গত শুক্রবার দুপুরে মিরপুর ১২ নম্বরে হাজী কুদরত আলী সুপার মার্কেটের সফটটেক নামক গার্মেন্টটি বন্ধ ঘোষণা করে মালিক কর্তৃপক্ষ। এতে প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে যেতে পারে বলে তারা চিন্তিত হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে তারা নিয়ম অনুযায়ী তিন মাসের অগ্রিম বেতন দাবি করলেও কর্তৃপক্ষ তা দিতে রাজি হয়নি। এ কারণে তারা বেতনভাতা আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনে নেমেছেন। শ্রমিকরা জানায়, শ্রমিকরা গার্মেন্টের কর্মকর্তাদের কাছে গেলে তারা বলেন, কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, তোমরা সবাই চলে যাও। চলতি মাসের ২৫ তারিখে এসে বেতন নিয়ে যেও। শ্রমিকরা বলেন, বন্ধ ঘোষণা করতে হলে তাদের আগে থেকে নোটিস দিতে হবে। তাছাড়া তিন মাসের অগ্রিম বেতনসহ দেনা-পাওয়া পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু মালিক পক্ষ শ্রমিকদের দাবি মানতে রাজি না হওয়ায় তারা বিক্ষোভ করতে থাকে। সারাদিন বিক্ষোভের পর রাতেও তারা কারখানায় অবস্থান করতে থাকে। একপর্যায়ে রাতে স্থানীয় এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা কারখানায় প্রবেশ করে শ্রমিকদের মাঝে আটকে থাকা কর্মকর্তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যান। কিন্তু তিনি শ্রমিকদের অগ্রিম বেতনের ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি। বিক্ষুব্ধ এক শ্রমিক জানান, শ্রমিকরা বের হয়ে গেলে যদি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয় এমন ভয়ে সারা রাত শ্রমিকরা কারখানায় অবস্থান করে। এরপর সকালে দাবি আদায়ের জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবের দিকে রওনা হয়। তাদের সঙ্গে ওই এলাকার আরও কয়েকটি গার্মেন্টের শ্রমিকও রাস্তায় নেমে আসে। শ্রমিকরা বিক্ষোভসহকারে সামনে এগোতে গেলেই পুলিশ তাদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি, টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ শুরু করে।
এ সময় শ্রমিকরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশের গুলির মুখে টিকতে না পেরে শ্রমিকরা কালসি রোডে অবস্থান নেয়। সেখানেও পুলিশ গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ জিয়াউজ্জামান জানান, সফটটেক গার্মেন্টের মালিক পক্ষ তাদের ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তা বন্ধ করে দেয়। কর্তৃপক্ষ তাদের গার্মেন্ট স্থানান্তর করতে চেয়েছিল। কিন্তু গার্মেন্ট স্থানান্তর করার আগেই শ্রমিকরা অগ্রিম তিন মাসের বেতন দাবি করে। কর্তৃপক্ষ দাবি না মানায় ৬-৭ হাজার শ্রমিক গতকাল সকালে রাস্তায় নেমে ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এ সময় শ্রমিকরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। তারা বেশ কিছু গাড়িতেও ভাঙচুর চালায়। শ্রমিকদের ইটের আঘাতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলেও তিনি জানান।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।