সাভারে বেতন ও বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ এবং ভাঙচুর করেছেন প্রাইড গ্রুপ ও ল্যান্ডমার্ক গ্রুপের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা। গতকাল দুপুরে সাভার পৌর এলাকার উলাইল বাসস্ট্যান্ডে প্রাইড গ্রুপের এইচআর টেঙ্টাইলস ও আশুলিয়ার ইয়াছিনবাগ এলাকার ল্যান্ডমার্ক গ্রুপের কয়েকটি কারখানায় এ ঘটনা ঘটে। উভয় ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১২০ জন শ্রমিক।
শ্রমিকরা জানান, সরকার ৭ তারিখের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করার ঘোষণা দিলেও প্রাইড গ্রুপের মালিক পক্ষ সেদিকে কর্ণপাত করছে না। মঙ্গলবারও কর্তৃপক্ষ বেতন দেওয়ার কথা বলে শ্রমিকদের দিয়ে ৮ ঘণ্টার পরিবর্তে ১৬ ঘণ্টা কাজ করিয়েছে। গতকাল সকাল ৯টায় বেতন-ভাতা দেওয়ার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ এটিএম বুথের মাধ্যমে বেতন দেওয়া হবে বলে শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বেতন-ভাতা না পেয়ে কারখানার সিকিউরিটি লাইট, সিসি ক্যামেরা, কারখানার মূল ফটক ও সামনে থাকা বেশ কয়েকটি গাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং ভাঙচুর চালান। একপর্যায়ে তারা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বর্তমানে শ্রমিকরা বেতন-ভাতার দাবিতে কারখানার সামনে অবস্থান করায় ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। টাকা না পেলে যে কোনো সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা আরও বড় ধরনের নাশকতা করতে পারেন বলে ধারণা করছে এলাকাবাসী। সাভার মডেল থানার এসআই শেখ ফরিদ শ্রমিক বিক্ষোভের আশঙ্কায় কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান। এ বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।
অন্যদিকে, আশুলিয়ার ইয়াছিনবাগের ল্যান্ডমার্ক গ্রুপের কয়েকটি কারখানায় বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানায় ব্যাপক ভাঙচুর চালালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে কমপক্ষে ১০০ শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে শিল্পপুলিশের ওসি আবদুস সাত্তার জানান, বর্তমানে ওই এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের চেষ্টা চলছে। এদিকে এসব ঘটনায় সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন গার্মেন্ট কারখানার সামনে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
রানা প্লাজার শ্রমিকদের গণঅবস্থান : ঈদের আগেই রানা প্লাজার সব শ্রমিক এবং তাদের পরিবারকে বকেয়া বেতন, বোনাস ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবিতে সাভারে রানা প্লাজার সামনে দ্বিতীয় দিনের মতো গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন প্রতিষ্ঠানটির আহত, নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনেরা। এর আগে দাবি আদায়ে শ্রমিকরা বিভিন্ন সময়ে বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করলেও সরকার কিংবা বিজিএমইএ তাদের এসব কর্মসূচির বিপরীতে কোনো সাড়া না দেওয়ায় মঙ্গলবার দুপুর থেকে তারা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় উপস্থিত শ্রমিক এবং শ্রমিক পরিবারের লোকজন রানা প্লাজা ধসে নিখোঁজ, নিহত ও আহত শ্রমিক এবং শ্রমিক পরিবারকে ঈদের আগে ঈদ বোনাস ও ক্ষতিপূরণ প্রদান, ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের স্থায়ী পুনর্বাসন, নিখোঁজ শ্রমিকদের ডিএনএ রিপোর্ট প্রকাশ ও ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং নিখোঁজ শ্রমিকদের নিহতের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। গণঅবস্থান কর্মসূচিতে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ টেঙ্টাইল অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক গার্মেন্ট শ্রমিক ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠন সমর্থন প্রদান করেছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।