সময় যাদের বিস্তর তাদেরই পাঙ্ক্চুয়াল হওয়া শোভা পায়। দেবতার হাতে সময় অসীম তাই ঠিক সময়টিতে সূর্য ওঠে, ঠিক সময়ে অস্ত যায়। আমাদের মেয়াদ অল্প, পাঙ্ক্চুয়াল হতে গিয়ে সময় নষ্ট করা আমাদের পক্ষে অমিতব্যয়িতা...
১৩ তারিখ ইমতিয়াজ স্যারের এসাইনমেন্ট প্লাস প্রেজেন্টেশন, তাও আবার বাংলায়। অনেকদিন হলো বাংলায় academic writing এর থেকে দূরে আছি। যাই হোক, সাথে কাগজ আর কলম নিয়ে সাহস করে পড়তে বসলাম।
লিখার চেষ্টা তো অন্তত করতে হবে! কিন্তু, বিধি বাম, কাগজ-কলম হাতে নিতেই খটোমটো আর্টিকেলটা পড়ার ইচ্ছেটা উবে গেল। তাই বলে কিন্তু লিখা থেমে থাকল না. বিক্ষিপ্ত মনের অবিন্যস্ত রচনা ফুটে উঠল কাগজে. Research Methodology এর article synopsis লিখা না হোক একটা দিনলিপি ত লিখা হল. এই বা কম কিসে......
ইদানীং বুঝতে পারি না, আমি পথে চলেছি নাকি পথই আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। হাটতে হাটতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে পা, মনের সেই অবকাশ নেই। অবিরত এই হাঁটার গন্তব্য আমার জানা আছে ঠিকই কিন্তু পথ, সে তো নেই চেনা। যেদিন থেকে এপথে পা বাড়ালাম সেইদিনই বুঝেছিলাম এ বড় একমুখী রাস্তা, পিছনে ফেরার পথ নেই কোন; ছিল না কোনোকালেই।
পথচলা যখন শুরু করেছি শেষ তো করতেই হবে। কর্দমাক্ত বন্ধুর পথের অপার্থিব শীতলতা যতটা না দেহকে, তার চেয়েও বেশী মনকে রক্তাক্ত করে তুলছে বারংবার। অন্তহীন এ রাস্তা দেখে মাঝে মাঝে হার মেনে যেতে চাইছে মন। ভয় হয় কখন যেন মন বিদ্রোহী হয়ে বলে উঠে, “জাহান্নামে যাও তুমি তোমার পথ ধরে। আমায় নিচ্ছ কেন সাথে?” মনটাকে কিছু ছেলেমানুষি লোভ দেখিয়ে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি অবিরাম।
পাছে সে বিদ্রোহী না হয়ে উঠে। অবশ্য একটু আশাও কিন্তু আছে, আমার এই মনটাকে যতোটা চিনি আমি তাতে জানি বন্ধুর পথ চলতে তারও ঢের ভালো লাগে। তাই এ মনের বিদ্রোহ করার অবকাশ কম। তাছাড়া যাত্রা শুরু থেকে তো পথ চলছি অন্ধকারেই। যতটুকু আলো পেয়েছিলাম একদা সেও তো এসেছিলো বজ্রের রূপে, আমায় পুড়িয়ে মারবে বলে।
প্রচণ্ড বজ্র আর ঝড় যখন আমাকে ক্ষতবিক্ষত করছিল তার সেই অবিরত ঝলসানির মাঝেই এক ঝলক দেখেছিলাম দূর দিগন্তের, দেখেছিলাম দুরের সেই আবছা অবয়ব। দেখতে পারিনি শুধু তার পথ, দেখতে পাইনি শুধু তার সবিস্তার বর্ণনা। জানিনা কি সেই অন্ত শেষের পুরস্কার, ফাঁসিকাঠ না রাজ্যপাট?
রাস্তার ক্রমাগত মোড় চলতে চলতে ভুলে গেছি দিক, হারিয়ে ফেলছি নিজের অস্তিত্ব। ভুলে গেছি কখন শুরু হয়েছিলো এই সর্বনাশা পথচলা, পথ চলতে চলতে ভুলতে বসেছি সময়। কবি একদিন বলেছিলেন, সময় কোথায় সময় নষ্ট করার মতো? কিন্তু যে আমি হারিয়েছি পথের হদিশ, সময়ের দিশা; তার আর সময় কি আর কিই বা অসময়? শুধু বুঝছি এখনও অনেক রাত, পথও তো ঢের বাকি।
যদিও এতদিন ধরে চলেছি অন্তহীন পথ তবু কানের পাশে কে যেন বলে গেল, “সবে তো শুরু, যেতে হবে অনেক দূর। শুধু তো রাতের হিম শীতলতাই পেলে। বাকি রয়েছে এখনও সকালের চোখ ধাঁধানো ঝলসানি, দুপুরের প্রখর উষ্ণতা আর আরেকটা দিনশেষের অন্তহীন অপেক্ষা। এখনো বিক্ষত হওনি তুমি, যতোটা প্রাপ্য তোমার। ”
প্রাপ্য কি শুধু আমারই, হে পথ? নিজের অজান্তেই যখন পথচলা শুরু করেছিলাম, ফেরালে না কেন আমায়? কেন তুমি হয়ে ওঠনি বন্ধুর, থামিয়ে দাওনি আমার চলার গতি? ফিরিয়ে দাওনি কেন সেদিন আমায় দেখিয়ে উষর মরুভূমি, সুগভীর খাদ, অজেয় পর্বত অথবা অথৈ সাগর।
কেন আমার চোখে লাগিয়ে দাওনি দৃষ্টিভ্রম, কেন আমায় ঠেলে ফেলনি তোমার সীমার বাইরে? হয়তোবা পথেরও অজান্তে এই পথিক হেতে এসেছে বহুদূর। পথেরও কীইবা করার ছিল? অনেকের চলার পথ যে একটাই, কিন্তু গন্তব্য তো এক নয়। অন্য সবার সাথে পথ চলতে চলতে নিজের অজান্তেই চলা শুরু করে দিলাম পথের অনাবিষ্কৃত এক অংশে, তখনই হয়তো শিউরে উঠেছিল পথ। আচ্ছা, জড়েরও কি নিজস্ব জগত থাকে? তা নইলে পথের ডাকে সাড়া দিয়ে কিভাবে আকাশ ঢেকে যায় আঁধারে? বজ্র কিভাবে বারকেবার আছড়ে পড়ে আমার শরীরে? কেনই বা ঝড় হারিয়ে দিতে চায় আমায়? সূর্যই বা হুমকি দেয় কেন ঝলসে দেবার? সকাল কেন বলে আমার চোখ ধাধিয়ে দেবে নতুন আলোয়? জেনেছিলাম ক্রুশবিদ্ধ যিশুর মতো যখন ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে আসে দিন, সূর্যের লালিমা তখনই নাকি খুব গাড় হয়। এই পথ চলতে চলতে যত রক্ত ঝরিয়েছি আমি, শুধু পশ্চিম নয় সমগ্র আসমান আজ রূপান্তরিত হয়ে যেতে পারত লোহিত সাগরে।
বৃষ্টি নয়, আকাশ থেকে ঝরতে পারত আমারই রক্ত। কিন্তু হায়! হয়তোবা কোন সৃষ্টিছাড়া নিয়মহীনের সঙ্গ দেয়না প্রকৃতিও।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।