আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি পাশবিক আবেদন

মানুষ নই। নিজেদের নাম নিজেরা দিতেও পারিনা। তাই নিজেদের পরিচয় নাম দিয়ে শুরু করতে পারছিনা। স্থানীয় কিছু লোকজন অবশ্য আমাদের মোহরাল বলে ডাকে। জানিনা তোমরা সবাই আমাকে এই নামে চিনবা কিনা।

তবে বেজি তো চেন। তাই না? আমরা দেখতে অনেকটা ওদের মতই। পার্থক্য হচ্ছে আকারে আমরা অনেক বড়, লেজটাও বড় আর মোটা, রঙ - কাল, শরীরে ডোরাকাটা অথবা ছোপ ছোপ দাগ আছে। আয়না দেখিনা, তবে শুনেছি আমাদের মুখটা নাকি দেখতে বেড়ালের মত, কেউ কেউ আবার বলে শেয়ালের মত এমনকি শুয়রের মতও নাকি খানিকটা দেখা যায়। বেজিরা আমাদের দূর সম্পর্কের আত্নীয় হয় কিনা জানিনা তবে আমরা ঠেকায় না পরলে ওদের মত দিনে ঘুরে বেড়াই না।

রাগের দিক দিয়েও বেজিরা আমাদের কাছে নেহাত শিশুই বলা চলে। এই তো সেদিন বরই খেতে গিয়ে দেখি বাসার কাজের মেয়েটা আমার ওপর আলো ফেলল। দাঁত মুখ খিঁচিয়ে এমন ভয় দেখালাম এখন আমাদের সাড়া শব্দ পেলে ও আর ভুলেও একা বাসা থেকে বের হয় না। ও হ্যাঁ, বলে নিই। তোমরা আমাদের সর্বভুক বলতে পার।

মুরগি, কবুতর থেকে শুরু করে বরই, টমেটো, পেঁপেঁ কিছুতেই আমাদের অরুচি নেই। আর আমরা যে এতদিন ধরেও এই পচা এলাকায় টিকে আছি তার কারন হচ্ছে আমাদের ক্ষিপ্রতা। চোখের পলকেই হাওয়া হয়ে যেতে পারতাম বলেই এখনো আমাকে দেখার সৌভাগ্য হচ্ছে তোমাদের। কিন্তু অবস্থা যেরকম দেখছি তোমাদের এই সৌভাগ্যও বেশিদিন আর স্থায়ী হবেনা। আমাদের খাবার দাবার, ঘুরে বেড়ানোর যায়গা সবই তো তোমরা দখল করে নিচ্ছ।

পুরনো বাড়ি গুলো ভেঙ্গে কি সব বাড়ি বানাচ্ছ যার আগা মাথা কিছুই বুঝি না, বড় বড় গাছপালা কেটে সব নতুন নতুন কি সব লাগাও, আমরা কটিই বা ফল খাই, মুরগি কবুতর খাই সেই জন্যে আবার দেখি লোহার নেট লাগাও, উঁচু উঁচু দেয়াল তুলে দাও, তোমরাই বল এখন আমরা কি করব? এলাকা তো একসময় আমাদেরই ছিল, নাকি? সবই তো দখল করে নিয়েছ। এখন অন্ততঃ শান্তিতে একটু মরতে দাও। স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকার টুকুও কি আমাদেরকে দিবা না? তোমরা কেন এত নিষ্ঠুর? কেন আমাদেরকে মারার জন্য এত আয়জন করছ? কেন বর্শা বল্লমের খোঁজ কর? কেন কোন বাসায় বন্দুক আছে তাকে ডেকে পাঠাও? কেন আমাদের জন্য ছাদে বিষ মাখান খাবার দাবার রাখ? ঠিক আছে। তোমাদের অসুবিধা করছি, আমাদের সব কটাকে ধরে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দাও। কোন অভয়ারণ্যে অথবা কোন জঙ্গলে।

একটু কষ্ট করে খুঁজে দেখ, আমাদের জন্য দরদ আছে এরকম লোক তোমরা অবশ্যই খুঁজে পাবা। আমাদেরকে তাদের হাতে তুলে দাও। তবে আমাদের যদি বাংলাদেশের কোন চিড়িয়াখানায় দেয়ার পরিকল্পনা তোমাদের থাকে তবে একটি অনুরোধ আছে, আমাদের বরং মেরেই ফেল। ভাল থেক তোমরা। আমাদের সময় তো ফুরিয়ে এল বলে।

প্লিয। তোমাদের ভেতর কেউ এমন নেই বা তোমাদের পরিচিতদের ভেতর কেউ এরকম নেই যে আমাদের মত বুনোদের ভালবাসে, আমাদের নিয়ে চিন্তা করে, আমাদের বাঁচাতে চায়? দয়া কর। আমাদের এখান থেকে নিয়ে যাও। আর যে কটা দিন বাঁচি, আমাদের মত করেই বাঁচি। প্লিয।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.