আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার একটি কাকতালীয় পোস্ট ও কিছু ক্ষোভের কথা!

কাপুরুষের শেষ আশ্রয় হল দেশপ্রেম কয়েকদিন আগে আমি একটা পোস্ট দিয়েছিলাম আমার পিচ্চি, মানে তিন বছরের ছেলেটিকে নিয়ে। পোস্টের সারমর্ম হল- হিন্দিতে ডাবিংকৃত কার্টুন দেখে কিভাবে আমাদের সন্তানরা হিন্দি ভাষায় অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে! কাকতালীয় বিষয়টি হল- পোস্টটি যেদিন দুপুরবেলা দিলাম সেদিনই সন্ধ্যায় জানতে পারলাম সংসদে তথ্যমন্ত্রী ডোরেমন কার্টুনসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি চ্যানেল বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আমার ধারণা, আমার মত অসংখ্য অভিভাবক সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি হয়েছেন। অবশ্য এমন নয় যে, আমরা ইচ্ছা করলে বাচ্চাদের হিন্দি কার্টুন দেখা বন্ধ করতে পারতাম না, বা ঐ চ্যানেলটি লক করে রাখতে পারতাম না। আমরা অভিভাবকরা চাইলেই বাচ্চাকে ডোরেমন, গুজুরাসহ সব হিন্দি ভাষায় ডাবিংকৃত কার্টুন থেকে দূরে রাখতে পারতাম।

আসলেই কি পারতাম? হয়ত পারতাম, কিন্তু আসলে চাইতাম না। আর এখানেই আমার যত ক্ষোভ, যত দুঃখ! আসলে আমরা যারা ঢাকা শহরের মত অপরিকল্পিত নগরে শিশুর জন্ম দিয়েছি, আমরা আমাদের শিশুটিকে সুস্থ একটা পরিবেশ দিতে পারিনি। আমাদের শিশুরা বড় হয় বহুতল ভবনের ছোট্ট একটি ফ্ল্যাটের চারদেয়ালের ভিতর। তাদের জগৎটা ঘরের ভিতর আর ছোট্ট বারান্দার ভিতর সীমাবদ্ধ। ঢাকা শহরের অনেক ফ্ল্যাটবাড়িতে দিনের আলোও ঠিকমত পৌঁছায় না।

যে বয়সে আমি, আমার ছোট ভাই ও কলোনীর সব শিশুদের নিয়ে খোলা প্রান্তরে ছুটে বেড়িয়েছি, লাটিম খেলেছি, মার্বেল খেলেছি, লুকোচুরি খেলেছি- সেই বয়সে ঢাকার সমস্ত বাচ্চাগুলো ফার্মের মুরগী কিংবা খাঁচায় বন্দী পাখির মত একঘেয়ে পরিবেশে বড় হচ্ছে। আচ্ছা বলুন তো, ২ থেকে ৫ বছরের একটি বাচ্চা ২৪ ঘন্টায় কি করবে? ধরলাম ৮-১০ ঘন্টা ঘুমাবে, কিন্তু বাকী ১৪ ঘন্টা! আরও ধরলাম খাওয়া, গোসল, বাথরুমে আরও ২ ঘন্টা! এরপর তো ১২ ঘন্টা থেকে যায়। কতক্ষণ বাচ্চাকে খেলনা দিয়ে আটকে রাখবেন? আর রোজ রোজ নিত্যনতুন খেলনা কেনার সামর্থ্য কয়জন অভিভাবকের আছে? মায়েরা বাচ্চাকে সারাদিন নিয়ে ব্যস্ত থাকলে ঘরের কাজ হবে কখন? বাবাদের কথা বাদ দেন, ঢাকার অধিকাংশ পুরুষ লোক সাত সকালে কর্মস্থলে বের হন, ফেরেন সন্ধ্যার পর। আমার মত অনেকে ফেরেন মধ্যরাতে! ঢাকা শহরে কি কোন খোলা জায়গা আছে যেখানে বিকেলে মা তার শিশুটিকে নিয়ে খেলতে বের হবেন? আমরা তাই বাচ্চাদের সাথে প্রতারণা করি। টিভির রিমোট ধরিয়ে দেই বাচ্চার হাতে, কিংবা টিভিতে কার্টুন ছেড়ে দিয়ে মা চলে যান ঘরদোরের কাজ গুছাতে।

আর আমাদের বাচ্চারা তন্ময় হয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কার্টুন দেখে। সারাদিনে সে কার্টুনে যত হিন্দি কথা শোনে, বাবা-মার কাছ থেকে তার অর্ধেক বাংলা শোনে কিনা সন্দেহ! আমাদের বাচ্চারা ডোরেমন, নবিতা, গুজুরাদের বানায় ভার্চুয়াল বন্ধু! তাহলে বাচ্চা বাংলা না বলে হিন্দি বলবে তাতে অবাক হওয়ার কি আছে? আমাদের বাচ্চাগুলো আসলেই ফার্মের মুরগীতে পরিণত হচ্ছে। কয়েকদিন আগে অফিসের পিকনিকে গেলাম সবাই সপরিবারে। কয়েকটি বাচ্চা যাওয়ার পথে গাড়ীতে বমি করল। পিকনিক স্পটে গিয়ে সহকর্মীরা মজা করবেন কি, বাচ্চাদের শুশ্রুষা করতেই দিন শেষ! এতো গেল দুঃখের কথা! এবার ক্ষোভের কথাটি বলি।

বাংলাদেশী টিভি চ্যানেল গুলো খুলে দেখুন- দিনরাত চব্বিশঘন্টা হয় খবর, নয়ত টকশো, নয়ত বস্তাপঁচা নাটক, নয়ত রিয়েলিটি শোর নামে ন্যাকামি, ফাজলামি। এত এত চ্যানেল, একটি চ্যানেলও কি পারে না ডোরেমনের মত জনপ্রিয় কার্টুনগুলো বাংলায় ডাবিং করতে? অবশ্যই পারে। কিন্তু করবে না, কারণ ওতে ব্যবসা কম। এরা ছোটে বড় ব্যবসার পিছনে। পাবলিক টক শো খায়, পাবলিক বাংলা একাডেমীর লাইভ টেলিকাস্ট খায়, পাবলিক শাহবাগের গনজাগরণ খায়।

তাই পাবলিক যেটা চায় সেটাতেই সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে! অথচ ঐ পাবলিকগুলোর ঘরে সন্তান আছে, তাদেরও অধিকার আছে দিনে কিছুটা সময় টিভি বিনোদনের! আমাদের এই ক্ষোভের প্রতিকার করতে পারে সরকার নিজ উদ্যোগে, পারে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা। সরকার আইন করে দিতে পারে প্রতিটি বাংলাদেশী চ্যানেলকে ২৪ ঘন্টায় অন্তত ৪ ঘন্টা শিশুদের বিনোদনের জন্য অনুষ্ঠান রাখতে হবে, সমস্ত কার্টুন বাংলায় ডাবিং করে প্রচার করতে হবে, বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো যদি বিজ্ঞাপন দেয়ার সময় শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত অনুষ্ঠান রাখার শর্ত দেয় তাহলে তো আরও ভাল হয়। আমাদের বাংলাদেশী টিভি চ্যানেল মালিকরা কি কখনও ভেবে দেখেছেন- এক ডোরেমন কার্টুন দিয়ে কিভাবে একটি চ্যানেল দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষে যেতে পারে? শিশু দর্শকদের অবহেলা করাটা কি তাদের ঠিক হচ্ছে?  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.