গান শুনি................
বেগম খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়িকে কেন্দ্র করে যে সংস্থাটির নাম এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত, তা হলো আইএসপিআর (ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন্স), বাংলায় আন্তবাহিনী গণসংযোগ বিভাগ। দেশের সশস্ত্র বাহিনীগুলোর মুখপাত্র বলা হয় এ সংস্থাকে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের মারফতে জনগণের উদ্দেশে নানা তথ্য প্রকাশের দায়িত্ব পালন করে এই সংস্থা। এবং তা করে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী, নিজের মতো করে। সংক্ষেপে বলা যায়, আইএসপিআর একটি স্বপ্রণোদিত গণসংযোগ সংস্থা।
এর গণসংযোগ একমুখী: তারা স্বেচ্ছায় যখন যা জানায়, সংবাদমাধ্যম ও তাদের মারফতে জনসাধারণ শুধু তখনই এবং সেটুকুই জানতে পারে। তার আগেও নয়, তার বেশিও নয়। সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে সংস্থাটির কাছে কোনো তথ্য চাওয়া হলে সাধারণত সাড়া পাওয়া যায় না। বরং ঘটনাবিশেষে তাদের কাছ থেকে আপনাআপনিই সংবাদ আসে; অথবা তারা সংবাদ সম্মেলন ডেকে সংবাদকর্মীদের তথ্য দেয়, যা জানানো তাদের দরকার বলে মনে হয়।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেনাবাহিনীর সদস্যদের আবাসন প্রকল্পের জন্য জমি কেনা নিয়ে যে রক্তপাত হয়ে গেল, সে সম্পর্কে আইএসপিআরের কাছে তথ্য চেয়ে সময়মতো যথেষ্ট সাড়া পাননি এমন দু-একজন সংবাদকর্মীর কথা জানি।
কয়েক মাস আগে বিবিসি বাংলা বেতারে প্রচারিত হলো সামরিক বাহিনীর ব্যবসা-বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তৈরি ধারাবাহিক বেতার প্রতিবেদন ‘ফৌজি বাণিজ্য’। নানা সূত্র থেকে তথ্য-উপাত্ত ও সংশ্লিষ্ট নানা জনের বক্তব্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে ওই প্রতিবেদন, কিন্তু প্রতিবেদনটিতে সেনাসদরের কোনো বক্তব্য ছিল না। প্রতিবেদক জানিয়েছেন, তিনি সেনাসদরের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন, তারা কোনো বক্তব্য দেয়নি, আইএসপিআরেরও কোনো ভূমিকা এ ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। এ ছাড়া সাংসদ ফজলে নূর তাপসের ওপর বোমা হামলার মামলায় পাঁচ সেনা কর্মকর্তার দণ্ডিত হওয়ার খবর সম্পর্কে আইএসপিআরের কাছে তথ্য চেয়ে সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা পাননি।
কিন্তু দেখা গেল, বেগম খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়িসংক্রান্ত ঘটনাবলিতে আইএসপিআর স্বপ্রণোদিত হয়ে অনেক তথ্য-বিবৃতি দিল।
তারা যা জানাল, সংবাদমাধ্যম মোটের ওপর তা-ই প্রকাশ ও প্রচার করল। বেগম খালেদা জিয়া সেনানিবাসের বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার অথবা বিতাড়িত হওয়ার এক দিন আগেই সংবাদমাধ্যমে খবর দেওয়া হলো, তিনি বাড়িটি ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে মনে হয়েছে, তিনি স্বেচ্ছায় বাড়িটি ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু পরদিন বেগম খালেদা জিয়া সেনানিবাসের বাড়িটির বাইরে, বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের জানালেন, তাঁকে ওই বাড়ি থেকে জোর করে বের করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সংবাদমাধ্যম এও জানাল যে আইএসপিআর তাদের বলেছে, বেগম জিয়া স্বেচ্ছায় বাড়িটি ছেড়ে চলে গেছেন।
সংবাদমাধ্যম দুই পক্ষের দুই বিপরীতমুখী বক্তব্যই প্রকাশ করল। কিন্তু নিজেদের ভাষ্য কী তা জানাতে পারল না, সত্য প্রতিষ্ঠার দায় নিতে পারল না। কারণ, সাংবাদিকদের কেউ স্বচক্ষে দেখেননি বেগম জিয়া স্বেচ্ছায় চলে গেছেন, নাকি তাঁকে জোর করে বের করে দেওয়া হয়েছে। বাড়িটি সেনানিবাসের ভেতরে; এমনিতেই ‘প্রেস’ বা ‘সংবাদপত্র’ লেখা কোনো যানবাহন জাহাঙ্গীর গেটের ভেতরে ঢুকতে পারে না। আর এমন পরিস্থিতিতে সেনানিবাসের ভেতরে শহীদ মইনুল সড়কের আলোচিত বাড়িটির ত্রিসীমানায় পৌঁছাতে পারা কোনো সংবাদকর্মীর পক্ষে সম্ভব ছিল না।
কোনো সংবাদমাধ্যম বেগম জিয়ার বাড়ি ত্যাগের ঘটনা সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শী কোনো তৃতীয় পক্ষের বরাতেও কিছু উল্লেখ করেনি। সম্ভবত আর কোনো প্রত্যক্ষদর্শী তৃতীয় পক্ষ ছিল না।
সংবাদকর্মীদের জন্য এটি একটি কঠিন পরিস্থিতি বটে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।