দুর্ঘটনা কখনও বলে কয়ে আসে না। স্বাভাবিক কাজ-কর্ম করতে গিয়ে হঠাৎ করেই আমরা ছোটখাটো সমস্যায় পড়ি। পেন্সিল কাটতে গিয়ে ছুরির ধারালো আঁচড়ে আঙুল কেটে যায়। নেইল কাটার ছাড়া অন্য কোন কিছু দিয়ে নখ কাটার সময় অসাবধানতাবশত প্রায়ই রক্তে রঞ্জিত হওয়ার ঘটনা ঘটে। ঘর গৃহস্থালিতে কিংবা অফিস-আদালতে কাজ করতে গিয়ে ছোটখাটো ইনজুরির ঘটনা বলতে গেলে হয়েই থাকে।
সেজন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার মতো সময় থাকে না। কিংবা মামুলি কেটে যাওয়া ছিঁড়ে যাওয়ার জন্য কেউ চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। হাতের কাছে কিছু তুলা এবং জীবাণুনাশক থাকলে তা দিয়েই সেরে নেন প্রাথমিক চিকিৎসার কাজ। যা দৃষ্টিতে সাধারণ এবং সাদামাটা হলেও চিকিৎসা বিজ্ঞানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা কাটা-ছেঁড়ার পরক্ষণেই ক্ষতস্থানে বাসা বাঁধে নানা রোগ-জীবাণু।
খালি চোখে তার অস্তিত্ব দেখা না গেলেও ক্ষতির জন্য বিরাট ভূমিকা রাখে। অথচ আগে-ভাগে সে ব্যবস্থা নিলে অনেক ক্ষতিকর দিক এড়ানো সম্ভব। সেদিক বিচারে ক্ষতস্থানে বেঁধে রাখার জন্য ব্যবহৃত ব্যান্ড এইডের গুরুত্ব চিকিৎসা শাস্ত্রে উল্লেখযোগ্য। আড়াই থেকে তিন ইঞ্চি পরিমাণ লম্বা আর এক ইঞ্চিরও কম চওড়া মাপের এক টুকরো ব্যান্ড এইড বিশেষ করে ক্ষত স্থানের সুরক্ষায় অভাবনীয় কাজ দেয়। দামের তুলনায় তো বটেই আকার-আকৃতিতে ছোট হলেও চিকিৎসা জগতে ব্যান্ড এইড বিশেষ অবদান রেখে চলেছে।
অথচ বিংশ শতাব্দীর আগেও চিকিৎসা শাস্ত্রে ব্যান্ড এইড বলে কিছুই ছিল না। তখন ক্ষত স্থানে যেখানে যেমন, সেখানে তেমন। অর্থাৎ চিকিৎসকের ইচ্ছা খুশি মতো ঢেকে রাখার প্রচলন ছিল। ফলে প্রায়ই ক্ষত স্থানে নানান সমস্যা দেখা দিত। বিশেষ করে ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া ফাঙ্গাস আকারে বাসা বেঁধে রোগের প্রকোপ বাড়িয়ে দিত।
রোগীর আরোগ্য দীর্ঘায়িত হতো। এসব সমস্যা নিয়েই চিকিৎসা হতো ক্ষত স্থানের।
১৯২০ সাল। আমেরিকার নিউজার্সিতে বসবাস করতেন আর্ল ডিকসন-জোসেফাইন ডিকসন দম্পতি। স্বামী আর্ল কাজ করতেন জনসন এন্ড জনসন কোম্পানিতে কটন বায়ার বা তুলা ক্রেতা হিসেবে।
স্ত্রী জোসেফাইন দেখাশোনা করতেন সংসার। তিনি ছিলেন মা-বাবার আদুরে কন্যা। তাই ঘর-সংসারে তার তেমন অভিজ্ঞতা ছিল না বললেই চলে। অনেকটা বাধ্য হয়েই জোসেফাইন নিজেই ঘরের সব কাজ-কাম করতেন। যেহেতু ঘর কন্যার কাজে জোসেফাইনের একদম অভিজ্ঞতা ছিল না তাই রান্না-বান্না, কাটা-কুটি করতে গেলে হরহামেশাই হাত কেটে যেত।
বাসায় ফিরে স্ত্রীর এহেন দশা দেখেও আর্ল অ্যাডহেসিভ ব্যান্ডেজের অভাবে ক্ষত স্থানটিতে ঠিকমতো ব্যান্ডেজ লাগাতে পারতেন না। প্রায়ই অ্যাডহেসিভ টেপ কেটে তাতে তুলা লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিতেন। তাতে প্রত্যেকটি ক্ষতের জন্য আলাদা আলাদা ব্যান্ডেজ লাগাতো, যাতে সময় ও শ্রম দুই-ই বেশি লাগে।
বিষয়টা নিয়ে আর্ল দিনের পর দিন ভাবলেন। অবশেষে একদিন কিছু তুলা গজ নিয়ে একটা অ্যাডহেসিভ টেপের ওপর কিছুক্ষণ পর পর বসিয়ে দেন।
এবার সেটিকে জীবাণুমুক্ত করার জন্য তার উপর ক্রিনোলিনের আস্তর দিলেন। যা সহজেই টেপ থেকে প্রয়োজন মতো কেটে ক্ষত স্থানে লাগানো যায়।
আর্লের বস জেমস জনসনকে ক্ষুদ্র আবিষ্কারের কথাটি পাড়াতেই তিনি তা লুফে নিলেন। একই সঙ্গে উদ্যোগ নিলেন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যান্ড এইড তৈরি ও বাজারজাতের। পুরস্কারস্বরূপ আর্লকে পদোন্নতি দিলেন কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে।
সেই থেকে চিকিৎসা সামগ্রী হিসেবে ব্যান্ড এইড এলো বাজারে। চিকিৎসা শাস্ত্রে এর সংযোজন অতি ক্ষুদ্র হলেও ভূমিকায় প্রমাণিত হলো অসাধারণ। ক্ষত স্থান ঢেকে রেখে জীবাণুর আক্রমণ প্রতিরোধে ব্যান্ড এইড ব্যবহারের জন্য এখন আর হাসপাতাল-ক্লিনিক তথা চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হয় না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।