লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই
দেহ
ফেড ইনঃ
বাহির। সকাল।
মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির পানি গাছের সবুজ পাতার উপর পড়ে ধুয়ে যাচ্ছে। গাছের গুড়ি বেয়ে বৃষ্টির পনি গড়িয়ে নামছে।
মাটির রাস্তা দিয়ে বৃষ্টির পানির অবিরাম প্রবাহ।
ভেতর। রাত্রি। ওয়াশ রুম।
একটি তরুণীকে ঝর্নার পানিতে গোসল করতে দেখা যায়- পুরো রুমটার মধ্যে ধোঁয়া উঠা অস্পষ্ট ভাব।
চতুর্দিকের অস্পষ্টতার মধ্যে শুধুমাত্র তরুণীটির মুখ স্পষ্ট দেখা যায়- মেয়েটির মুখের ভাবটি এমন যেন তার শরীরের উপর দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে তার শাপমোচন হচ্ছে, তখন তাকে কিছুটা উৎফুল্ল দেখায়, চোখে-মুখে আহ্লাদী ভাব ফুটে উঠে। থুতনিটা একটু উপরের দিকে তুলে ভেজা চুলগুলোর ভেতর দিয়ে মোলায়েমভাবে আঙ্গুল চালায়। শাওয়ার থেকে পানি পড়ার একটানা শব্দ। শাওয়ারের পানি মেঝে দিয়ে গড়িয়ে গর্তে ঢুকে যাচ্ছে। পানির গর্তে ঢুকে যাওয়ার শব্দ।
ভেতর। গভীর রাত্রি। শহুরে উচ্চমধ্যবিত্ত একটি মেয়ের শোবার ঘর। বিল্ডিং এর তৃতীয় তলায়।
শোবার ঘরের ভেতর থেকে ওয়াশ রুমের দরজা দেখা যায়।
দরজার ছিটকিনি খোলার শব্দ হয়। দরজা খুলে সদ্য গোসল সারা তরুণীটি ভেজা চুলে নাইটি পরিহিত অবস্থায় বের হয়ে আসে। মৃদুপায়ে হেঁটে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে রাখা টুলের উপর আলতো করে বসে, চোখে-মুখে আত্মস্থ ভাব লেগে আছে। হেঁটে আসার শব্দ, টুলে বসার শব্দ।
ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় তরুণীটির প্রতিচ্ছবি দেখা যায়, অস্পষ্ট থেকে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়, উৎফুল্ল ভাবটি এখনও চোখে-মুখে লেগে আছে।
টুলটা একটু সামনে টেনে নিয়ে এসে আরাম করে বসে- আশ্বস্ততার ভাব। টুল টানার শব্দ। চুল থেকে চুইয়ে ফোটা ফোটা পানি মঝেতে পড়ে। মেঝেতে পানি পড়ার শব্দ।
পাশ থেকে দেখা যায়-তরুণীটি আলতো হাতে হেয়ার হিটারটি উঠিয়ে নিয়ে চুল শুকাতে শুরু করে।
এখন মেয়েটির মুখের ভাবটি এমন যেন কোথাও যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, তবে খুব একটা তাড়া নেই। চিরুনী দিয়ে ধীরে-সুস্থে চুল আচড়ায়। চুলের ব্যান্ড দিয়ে খুব কষে চুলগুলো বেঁধে নেয়। হিটার দিয়ে চুল শুকানোর, চুল আচড়ানোর, ব্যান্ড দিয়ে চুলবাঁধার শব্দ।
হাতের তালুতে বোতল থেকে লোশন ঢেলে দুই বাহুতে, পায়ে আলতো করে মাখে।
খুব যত্ন করে ধীরে ধীরে মুখে ক্রিম মাখে। ঠোঁটে হালকা গোলাপী রঙের লিপগ্লস মাখে, পেনসিল দিয়ে চোখে কাজল পড়ে, গালে হালকা পাউডার লাগায়। লোশন, ক্রীম মাখা ও কাজল পড়ার শব্দ।
হাতের তালুতে থুতনি রেখে আয়নায় নিজের চেহারার দিকে খুব করুণ একটি ভাব নিয়ে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে। ধীরে ধীরে মুখজুড়ে হালকা হাসির রেখা ফুটে উঠে।
এ সময় তার মুখমন্ডল জুড়ে হালকা নীল রঙের আভা।
হঠাৎ কি যেন মনে হতে খানিকটা ব্যাস্ততার ভাব ফুটে উঠে। দ্রুত ঘাড় বেঁকিয়ে পেছনের দেয়ালের দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকায়। দেয়াল ঘড়িতে চোখ নেয়ার সময় দেয়ালে ঝুলানো নিঃশব্দ কালো রঙের এল সি ডি টেলিভিশনে চোখ পড়ে। টেলিভিশনের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চোখ দেয়াল ঘড়িতে উঠে যায়।
দেয়াল ঘড়িটিতে দেখা যাবে পনে তিনটার কাছাকাছি বাজে। ঘড়ির সেকেন্ডের কাটার টিক টিক শব্দ।
মুখের মধ্যে এখন একটু আশ্বস্থতার ভাব ফিরে আসে।
এখন থেকে মেয়েটি সব কিছু পূর্বের চেয়ে একটু দ্রুত গতিতে করতে থাকবে।
ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে হাত ঘড়িটি ও ব্রেসলেট তুলে নিয়ে দুই হাতের কব্জিতে পড়ে নেয়।
ইতিমধ্যে মেয়েটির নাকের ডগায় সামান্য ঘাম জমেছে।
হাতে রাখা বডি স্প্রে টির মুখ নিজের বুকের দিকে ধরে বোতামে জোরে জোরে চাপ দেয় মেয়েটি, স্প্রে ছড়িয়ে এসে মেয়েটির শরীরে লাগে। বোতল থেকে তীব্রবেগে শুধু স্প্রে হওয়া দেখা যায়। স্প্রে এর বোতল ধরা হাতটি মেয়েটির ঘাড়ের খুব কাছে চলে আসে। বোতামে আবার চাপ- স্প্রে ঘাড়ে লেগে প্রক্ষিপ্ত হয়।
স্প্রে বের হওয়ার শব্দ-কখনো হালকা, কখনো বেশী।
তরুণীটি টুল থেকে উঠে দাঁড়ায়। হেঁটে পাশেই রাখা খাটের কাছে চলে চায়। বিছানার উপর একটি ল্যাপটপ খোলা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তরুণীটি খাটের সামনে হাটু গেড়ে বসে।
মডেম লাগানো খোলা ল্যাপটপটি টেনে একেবারে সম্মুখে নিয়ে আসে।
ল্যাপটপের স্ক্রীনে দেখা যায় ফেসবুকের পেজটি ওপেন করা। ফেসবুকের পেজে ইমেইল আইডি ও পাসওয়ার্ড প্রবেশ হয়। প্রোফাইল পিকচারে একটি বিমূর্ত ছবি ও কভার ফটোতে একটি বিশাল সবুজ প্রান্তরের ছবি দেখা যায়। নিচের দিকে কবিতার লাইনের মত করে কিছু স্ট্যাটাস।
১।
তিনটি বলয়ে একলা আমি বন্দী।
চারটি শিকলে বাঁধা আষ্টেপৃষ্ঠে।
একটি অন্ধকার বুকে হয়ে আছে বিদ্ধ।
দুইটি গলুই এসে বিঁধেছে দুই পাশে।
২।
মৃত্যু কি পারে মুছে দিতে বিষন্ন স্মৃতির সকল চিহ্ন!
তবে কেন মৃত্যুতে বেঁচে থাকা?
আবার যদি জন্ম নাও বিদেহী হয়ে,
লুকিয়ে থেকো ঘাষ-পাতার অন্তরালে।
আত্মার সকল পোশাক ছুড়ে ফেলে-
আমি চুপি চুপি আসবো তোমার অভ্যন্তরে।
৩।
উপরের পাখি অনেক উঁচুতে।
নিচের মাছ অনেক গভীরে।
মাঝের মানুষেরাও বহুদূরে...
স্ট্যাটাসগুলো একে একে দেখা যাওয়ার সময় ভি ও (V O) তে তরুণীটির বেদনাভরা কন্ঠে লাইনগুলো শোনা যাবে।
ল্যাপটপের কি-বোর্ডে থেমে থেমে মেয়েটির আঙ্গুল চলতে থাকে। এসময় মেয়েটাকে কিছুটা বিচলিত দেখায়।
ফেসবুকের স্ট্যাটাস দেওয়ার জায়গায় দেখা যাবে এই লাইনটি লেখা হচ্ছে-
মেয়েটির কন্ঠ ভি ও(V O)
তোমার আকাশ পৌঁছায় কতদূর?
মাঝখানে একটি সূর্যের স্থির দাঁড়িয়ে থাকা শুধু,
আর কোন নক্ষত্রের ঝিলিমিলি নেই!
সূর্যের ভারী রোদে উবে যাচ্ছে ভেতরটা-
আমি তারাভরা আকাশে আগাছা ছাওয়া পথ ধরে মেঘের ছায়া মুড়ি দিয়ে একা একা হেঁটে যেতে চাই।
পোস্ট বাটনে মাউসের কার্সর চলে যায়, মাউসের ক্লিক। মাউসের ক্লিক করার শব্দ।
মেয়েটি হাত দিয়ে টেনে ল্যাপটপটির ঢাকনা বন্ধ করে উঠে দাঁড়ায়। ঢাকনা বন্ধ করার শব্দ।
মেঝে থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে রাখা টুলের উপর একপায়ের উপর আর এক পা তোলা অবস্থায় খাটের দিকে মুখ করে বসে।
সামনের দিকে মুখ করা অবস্থায় হাতড়ে হাতড়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা সিগারেটের প্যাকেট ও দিয়াশলাই উঠিয়ে আনে।
মেয়েটির ঠোঁটে সিগারেট ধরা, দিয়াশলাইয়ের এক খোচায় সিগারেটটি ধরিয়ে লম্বা টান দিয়ে সামনের দিকে মুখভর্তি ধোঁয়া ছাড়ে।
মেয়েটির মুখ উপরের দিকে তোলা। দুই আঙ্গুলের চিপায় ধরা সিগারেটটি মেয়েটির ঠোঁটে চলে আসে ধীরে। আবার একটি লম্বা টান।
উপরের দিকে পুঞ্জ পুঞ্জ ধোঁয়া উঠে ছড়িয়ে যায়। মুখ থেকে ধোয়া বের হওয়ার শব্দ শোনা যায়। ধোঁয়াগুলোকে আকাশের সাদা হালকা মেঘের মত এদিক-সেদিক উড়তে দেখা যায়। আকাশে হালকা পেজো তুলার মত মেঘের উড়া-উড়ি।
মেয়েটির মুখ ড্রেসিং টেবিলের দিকে ঘুরে যায়।
অর্ধেক শেষ হওয়া সিগারেটটি এস্ট্রেতে গুজে দেয়।
ভি ও (V O)
অদূরে একটি কুকুরের একটানা একঘেয়ে করুন চিৎকার ভেসে আসে।
মেয়েটি উঠে দাঁড়ায়, মুখে একটু বেদনার আভাস। ড্রেসিং টেবিলের পাশেই খাটের সম্মুখ ভাগের জানালার কাছে হালকা নীল রঙের পর্দার দিকে তাকায়।
খানিকটা সামনে এগিয়ে গিয়ে জানালার পর্দা নিচের দিকে টেনে ধরে।
সামান্য একটু সরায়, আবার কি মনে করে ছেড়ে দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে চলে আসে তখন মুখটা সামান্য একটু কঠোর দেখায়।
এরপর চোখে-মুখে জয়ের অনুভূতি ফুটে উঠে। মুখে লাল আলোর আভা ছড়ানো।
ল্যাপটপের পাশে বিছানায় গিয়ে বসে। ল্যাপটপের দিকে তাকায়।
আলতে করে হাত বুলায় ল্যাপটের উপরে। ঢাকনা টি টেনে খোলার চেষ্টা করে। মুখটি কঠোর হয়ে উঠে। কিছুটা খোলা ঢাকনাটি আবার চাপ দিয়ে আবার বন্ধ করে দেয়। মুখের কঠোরতা কিছুটা কমে আসে।
ঢাকনা বন্ধ করার শব্দ।
খাটের পাশে নগ্ন পা ঝুলিয়ে রেখেই বিছানার উপর চিত হয়ে শুয়ে পড়ে। কয়েকবার দীর্ঘশ্বাস টেনে নেয় ও ছাড়ে। বুকের উঠা-নামা লক্ষ্য করা যায়। গাঢ় শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ।
ঝট করে উঠে বসে। চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট- ভেতরে নিজের সাথে নিজের যুদ্ধে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেলেও বিজয়ী। উঠে বসার শব্দ।
পাশ থেকে দেখা যাবে -মেঝের দিকে ঝুকে পড়ে হাঁপাতে থাকে। হাঁপানোর শব্দ।
মেয়েটি আস্তে আস্তে মুখ তুলে সামনের দিকে তাকায়। মুখে গাঢ় লালের আভা ছড়ানো, চোখে মুখে ছড়ানো প্রচন্ড কঠোরতা।
ড্রেসিং টেবিলের পাশে রাখা ওয়ারড্রবের উপরের ড্রয়ারটি বেশ শক্তি খাঁটিয়ে খুলে ফেলে। বেশ দ্রুততার সাথে ড্রয়ারের ভেতরে রাখা মেয়েটির নানা ধরনের কাপড়-চোপড় টেনে বের করে মেঝেতে ফেলতে থাকে।
ড্রয়ার খোলা রেখেই ড্রেসিং টেবিলের সামনে রাখা টুলের উপর বসে।
সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে সিগারেটের প্যাকেট থেকে সবগুলো সিগারেট বের করে ফেলে।
প্রত্যেকটা সিগারেটের উপরের কাগজ ছিড়ে ফেলে ড্রেসিং টেবিলের উপর সমস্ত তামাক স্তুপীকৃত করে। সিগারেটের ফিল্টার গুলো ঠিক অপর পাশে স্তুপীকৃত থাকতে দেখা যায়।
হাতের ঘড়ি, ব্রেসলেট খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখে।
দুইহাত মাথার পিছন দিকে নিয়ে এক ঝটকা টানে চুলে বাঁধা ব্যান্ডটি খুলে ফেলে।
মাথাটা এপাশ-ওপাশ করে বেশ জোড়ে ঝাকুনি দিলে চুলগুলো পিঠময় ছড়িয়ে পড়ে।
মেয়েটি বেশ আবেদনময় ভঙ্গীতে টুল থেকে উঠে দাঁড়ায়। টুলের দিক করে ঘুরে দাঁড়ায়।
মেয়েটিকে টুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। খুব শান্তভাবে টুলের উপর উঠে দাঁড়ায়।
সমস্ত রুম ও মেয়েটির মুখমন্ডলে হালকা লাল আলোর আভা ছড়ানো।
টুলের উপর দাঁড়ানো মেয়েটির নগ্ন পা দেখা যায়। মেয়েটির পরিহিত নাইটি আস্তে করে নগ্ন পায়ের কাছে পড়ে যায়। রুমটি পুরো নিস্তব্দ হয়ে যায়। রুমের পুরো শূন্য অংশটি দেখা যায়।
ফেড আউটঃ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।