আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্পর্শকাতর আগামী চার মাস

আগামী চার মাসকে ঘিরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে সর্বস্তরে। অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসকে বিপজ্জনক ও স্পর্শকাতর সময় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই সময়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সরকার সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষ করে অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে রেড অ্যালার্ট থাকবে দেশজুড়ে। র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি যে কোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক অবস্থানে রাখা হবে বর্ডার গার্ডকে।

জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে যে কোনো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে সদাপ্রস্তুত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। শুধু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সবকিছু মনিটরিং করা হবে।

জানা গেছে, সরকারের শেষ সময়ে দেশজুড়ে বিরোধী দল বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী ব্যাপক সহিংসতা চালাতে পারে বলে খবর রয়েছে সরকারের কাছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের ১৮টি এবং চট্টগ্রাম ও কঙ্বাজারের বিভিন্ন স্পট ঘিরে জামায়াত লাগাতার অবস্থান নিতে পারে। জামায়াতকে সমর্থন জোগাতে বিএনপির ভূমিকা কী হবে, সেদিকেও সরকার দৃষ্টি রাখছে।

সূত্রমতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলনকে ঘিরে বিএনপি কঠোর অবস্থানেই থাকবে আগামী চার মাস। বিএনপির দায়িত্বশীল একজন নেতা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাস্তবায়নে বাধ্য করতে সেপ্টেম্বরে প্রস্তুতি পর্ব শেষ করে পরে অক্টোবর-নভেম্বর জুড়ে লাগাতার কর্মসূচি দিবে বিএনপি। সার্বিক পরিস্থিতিকে অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে দেখছে তারা। অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের ঘোষিত রায় বাস্তবায়নে সরকারের গতিবিধির ওপর গভীর নজর রাখছে জামায়াতে ইসলামী।

রায় বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে দলটি থাকবে নো-রিটার্ন কর্মসূচিতে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকার সতর্ক থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশজুড়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মসূচি চালানোর পাশাপাশি সরকার থাকবে হার্ডলাইনে। কোনো ধরনের ছাড় না দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে। সরকারের একটি সূত্র জানায়, এখন থেকেই সবকিছু নজরদারি করা হচ্ছে।

সেপ্টেম্বরকে বিবেচনায় রেখেই অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়কে স্পর্শকাতর মাস হিসেবে চিহ্নিত করে সেভাবেই এগোচ্ছে প্রশাসন।

যোগাযোগ করা হলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার যদি তাদের দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অনড় অবস্থানে থাকে তবে জনগণ তা কিছুতেই মেনে নেবে না। বরং এর বিরুদ্ধে সারা দেশে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে সরকারের পরাজয় নিশ্চিত করা হবে। তবে তিনি আশা করেন, এমন একটা অবস্থা তৈরির আগেই সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে দেশের ৯০ ভাগ মানুষের 'তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের' দাবি মেনে নেবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জনদাবি উপেক্ষা করে কোনো রকমের হার্ডলাইনে গেলে তা সরকারের জন্য বুমেরাং হবে।

আমাদের অবস্থান পরিষ্কার- কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। জেল-জুলুম কবুল করে আমরাও হার্ডলাইনে চলে যাব। সাধারণ মানুষ আরও বেশি হার্ডলাইনে যাবে, যার পরিণামে গণঅভ্যুত্থানে অসম্মানজনকভাবে বিদায় নিতে হবে এ সরকারকে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান বলেন, আমরা এখন এক দফার এক লাইনে। সরকার যদি নির্দলীয় সরকারের জনদাবি উপেক্ষা করে হার্ডলাইনে যায় তবে এতে তাদের পতন আরও ত্বরান্বিত হবে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বিজ্ঞানী নিউটনের তৃতীয় সূত্রের উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে'। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে। আমরা নির্বাচনের কথাই এখন ভাবছি। আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে নিজেদের অনুকূলে জনসমর্থন ফিরিয়ে আনার জন্য প্রচার-প্রচারণা চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিরোধী দলের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের ব্যাখ্যা জনগণের কাছে তুলে ধরবেন তারা।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বিরোধী দলের সরকারবিরোধী আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সাফল্য জনগণের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরা হলে বিরোধী দলের অপপ্রচার বিফলে যাবে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশবাসী আওয়ামী লীগকে আবারও নির্বাচিত করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী দিনগুলোয় বা জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাটাই হলো আমাদের চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতি রয়েছে।

আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে বদ্ধপরিকর। কেউ যদি কোনো অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, কঠোরভাবেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পুলিশপ্রধান বলেন, পুলিশের প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেমের চেতনা নিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। পুলিশ বাহিনীর মৌলিক প্রশিক্ষণ রয়েছে।

যে কোনো মুহূর্তে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা সদাপ্রস্তুত।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.