চাঁদাবাজি ও যন্ত্রাংশের উচ্চ মূল্যের কারণে পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার পথে রাজধানীর কাউন্টারভিত্তিক বিলাসবহুল বাস সার্ভিস। কয়েক বছর আগে ৬২টি পরিবহনের কাউন্টার সার্ভিস থাকলেও এখন সচল রয়েছে মাত্র ১০টি। ফুটপাত ছিল এসব বাসের কাউন্টারে ভরা। টিকিট বিক্রির জন্য কাউন্টার কর্মীদের হাঁকডাক সারাক্ষণ লেগে থাকত। অনেক বাসের স্থান হয়েছে ডাম্পিং গ্যারেজে। কিছু কাউন্টার পদ্ধতিতে চলাচল করলেও বেশির ভাগই লোকালে পরিণত হয়ে লক্কড়-ঝক্কড় বাসের কাতারে মিশে গেছে। ফলে আবারও লক্কড়-ঝক্কড় বাসই হয়ে উঠেছে নগরবাসীর যাতায়াতের প্রধান অবলম্বন। বাস মালিকরা এ অবস্থার জন্য সিএনজি ও যন্ত্রাংশের উচ্চ মূল্য, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা ব্যয় কয়েকগুণ বৃদ্ধি, কতিপয় চাঁদাবাজ ও দালালের প্রতারণাকে দায়ী করেছেন। রাজধানীতে গণপরিবহনে কাউন্টারভিত্তিক যাত্রী পরিবহন শুরু নব্বই দশকে। ২০০১ সালে জোট সরকার ক্ষমতায় এসে সিএনজিচালিত যানবাহনকে প্রাধান্য দিলে ৫২ সিটের কাউন্টারভিত্তিক বড় বাসের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০০৪ সালে কাউন্টারভিত্তিক বাস ব্যাপকতা লাভ করে। তখন প্রায় প্রতি মাসেই রাজপথে নতুন নতুন বড় বাস নামতে থাকে। এগুলোকে কেন্দ্র করে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় টিকিট কাউন্টার স্থাপন করেন বাস মালিকরা। খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, গত এক দশকে রাজপথে নামা আধুনিক বাসগুলোর বেশির ভাগ বন্ধ হয়ে গেছে। এসব বাস ছিল চীনের তৈরি। বাসগুলোর মান অত্যন্ত নিম্ন হওয়ায় বেশি দিন চালানো যায়নি। পরিবহন ব্যবসায় এসে তারা আমিনবাজার, গাজীপুর ও কাঁচপুরের বিভিন্ন স্থানে এজেন্টের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। ফলে সবগুলো বাস বন্ধ করে গাজীপুরের ভোগড়ায় ডাম্পিং এলাকায় ফেলে রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। বর্তমানে ধুঁকে ধুঁকে চলা ট্রান্সসিলভা পরিবহনের চেয়ারম্যান সৈয়দ রেজাউল করিম খোকন বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সিএনজির দাম দ্বিগুণ করার পর গাড়ির যন্ত্রাংশের দামও এক লাফে কয়েকগুণ বেড়ে যায়। মূলত তখনই বিকশিত পরিবহন ব্যবসায় ধাক্কা লাগে। ফলে ব্যাংক ঋণের কিস্তি জমতে জমতে বহু কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যায়। এ অবস্থায় ব্যবসা টিকিয়ে কোনো রকমে ব্যাংক ঋণের কিস্তি দেওয়ার জন্য কিছু মালিক তাদের টিকিট কাউন্টার গুটিয়ে বাসগুলো ড্রাইভারদের কাছে দৈনিক চুক্তিতে দিয়েছেন। ড্রাইভাররা এগুলো লোকাল হিসেবে চালাচ্ছেন। এসব বাসের রক্ষণাবেক্ষণ সঠিকভাবে না হওয়ায় লক্কড়-ঝক্কড় হয়ে পড়েছে। প্রিন্স পরিবহনের মালিক গোলাম কাদের বলেন, হঠাৎ করে বিভিন্ন সড়কে কাউন্টারভিত্তিক চাঁদাবাজি বেড়ে যাওয়ায় পরিবহন ব্যবসায়ে ধস নেমেছে। এক মাস আগেও প্রতিদিন প্রতিবারের জন্য ১০০ টাকা দিতে হতো। এখন দিতে হচ্ছে ২০০ টাকা। জানতে চাইলে কাউন্টারভিত্তিক বাস মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব বাস কোম্পানিজের (এবিসি) সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার রফিকুল ইসলাম কাজল বলেন, পরিবহন সেক্টরে যারা চাঁদাবাজি করছে তাদের কাছে কাউন্টারে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থাটি মনঃপূত ছিল না।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।