দেশে আবারও পুরোদমে শুরু হয়েছে ক্রসফায়ার। চলতি সপ্তাহে ঢাকা, কুষ্টিয়া এবং মেহেরপুরে র্যাব ও পুলিশের ক্রসফায়ারে তিনজন নিহত হয়েছেন। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ প্রভাবশালী মন্ত্রীরা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে কয়েক দফা ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, একদিকে প্রতিশ্রুতির বন্যা বইছে আর অন্যদিকে চলছে ক্রসফায়ারের ঢল।
বর্তমান সরকার ক্ষমতাগ্রহণের পর দেশে কমপক্ষে ২৬৩টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে বিভিন্ন অনুসন্ধানে জানা গেছে। তাদের মধ্যে ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে থাকা অবস্থায়। অন্য হত্যাকাণ্ডগুলোকে কখনও ক্রসফায়ার, কখনও বন্দুকযুদ্ধ, কখনও আবার এনকাউন্টার বলে প্রচার করা হয়েছে। নির্বাহী ও জুডিশিয়াল তদন্তে এযাবত্ সব ক্রসফায়ারকেই যুক্তিযুক্ত বলা হয়েছে। ফলে এ ধরনের তদন্তের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
পাশাপাশি সরকারের আমলে ‘গুপ্তহত্যা’র মতো ভয়ঙ্কর ঘটনার কথাও শোনা যাচ্ছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে শতাধিক মানুষ গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা দফায় দফায় ক্রসফায়ার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের কথা বলেন। তাদের কেউ কেউ ঘোষণা দিয়েও বলেছেন, দেশে কোনো ক্রসফায়ার নেই। ক্রসফায়ার বন্ধ হয়ে গেছে।
খোদ প্রধানমন্ত্রীও জাতীয় সংসদে বলেছেন, যারা বিচারববির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটাবে তাদের বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু বাস্তবে এসব প্রতিশ্রুতির কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি। দেশজুড়ে দেদার চলছে ক্রসফায়ার ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। মধ্যে কিছুদিন ক্রসফায়ারের ঘটনা কম ছিল। ওই সময় ক্রসফায়ারের ঘটনা কম হলেও ‘গুপ্তহত্যা’র মতো ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছে।
এখন আবার বন্দুকযুদ্ধ, এনকাউন্টার কিংবা র্যাব-পুলিশের ওপর গুলি ছোড়ার অভিযোগে পাল্টা গুলি চালানোর নামে সেই ‘ক্রসফায়ার’ চালু হয়েছে পুরোদমে।
বিধি অনুযায়ী ক্রসফায়ার বা এনকাউন্টার বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার গুলিতে কারও মৃত্যু হলে ওই ঘটনায় জুডিশিয়াল ইনকোয়ারি (বিচার বিভাগীয় তদন্ত) ও নির্বাহী তদন্ত করা বাধ্যতামূলক। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গুলি চালিয়ে হত্যার বিষয়টি ‘নটজাস্টিফাইড’ বা অযৌক্তিক হলে তা আইন অনুযায়ী ‘হত্যাকাণ্ড’ বলে বিবেচিত হবে এবং যাদের মাধ্যমে এ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা করা যাবে। কিন্তু আজ দু’ধরনের তদন্তেই প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে বিচারবহির্ভূত একটি মৃত্যুর ঘটনাও ‘নটজাস্টিফাইড’ (অযৌক্তিক) প্রমাণিত হয়নি। উভয় তদন্তেই সব কয়টি ক্রসফায়ার ‘জাস্টিফাইড’ তথা যুক্তিযুক্ত প্রমাণিত হয়েছে।
ফলে এসব তদন্তের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীরা।
গত কয়েক মাস ক্রসফায়ার বা এনকাউন্টার ঘটনা কম শোনা গেছে। কিন্তু সম্প্রতি আবার দেদার চলছে। সোমবার ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার বিজি প্রেসের কাছে র্যাবের গুলিতে নিহত হয়েছের নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। এর আগের দিন মেহেরপুরের গাংনীতে পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত হন তথাকথিত এমএল লাল পাতাকার নেতা আকছেদ আলী।
এর একদিন আগে পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত হন জাসদ গণবাহিনীর কথিত সেকেন্ড ইন কমান্ড আমজাদ। মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের রেকর্ড অনুসারে চলতি বছরে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০৭ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে র্যাবের হাতে ৪৩, পুলিশের হাতে ৪৬, র্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে ৮, র্যাব ও কোস্টগার্ডের যৌথ অভিযানে ৩, র্যাব-পুলিশ-কোস্টগার্ডের যৌথ অভিযানে ৫ জন নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একই সময় ২ ব্যক্তি বিডিআরের হাতে নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। বিচারবহির্ভূত ১০৭ হত্যাকাণ্ডের মধ্যে আবার ১৭ জন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে থাকা অবস্থায় নিহত হয়েছেন।
অন্য ৯০ জন ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার কিংবা বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন। গত বছর (২০০৯ সালে) আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে থাকা অবস্থায় ৩৫ জনসহ ১৫৪ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে র্যাবের হাতে ৪১, পুলিশের হাতে ৭৫, যৌথভাবে র্যাব-পুলিশের হাতে ২৫, সেনাবাহিনীর হাতে ৩ এবং আনসারের হাতে ২, জেল পুলিশের ১, বনরক্ষীদের হাতে ১, বিডিআরের হেফাজতে ৫ এবং কোস্টগার্ডের হাতে একজন নিহত হয়েছেন।
ক্রসফায়ার নিয়ে মন্ত্রী ও পুলিশি বচন : পুলিশ প্রশাসন ও সরকারের কর্তাব্যক্তিরাও ক্রসফায়ারসহ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। তারা দফায় দফায় যুদ্ধ ঘোঘণা করেছেন ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে।
৫ সেপ্টেম্বর র্যাবের নতুন মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘এলিট ফোর্স র্যাব কখনই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সমর্থন করে না। এ ধরনের ঘটনায় র্যাব জড়িত নয়। মানবাধিকার সমুন্নত রেখেই র্যাব কাজ করে যাবে। ’ র্যাবের মহাপরিচালকের ওই বক্তব্যের দিনই পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি এমএল (লাল পতাকা) রাজশাহী বিভাগীয় তথাকথিত সামরিক কমান্ডার আবদুর রশিদ পাবনার সাঁথিয়ায় র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছিলেন।
গত ২৮ মে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছিলেন, ‘ক্রসফায়ার বন্ধ হয়ে গেছে, দেশে এখন আর কোনো ক্রসফায়ার নেই।
’ গত ৮ জুলাই তিনি আরও বলেছিলেন, ‘বিচারবহির্ভূত আর কোনো হত্যাকাণ্ড হলে হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ’ গত ২৮ মার্চ এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ‘র্যাব সদস্যদের গুলি চালানো ছাড়া বিকল্প কোনো পথ থাকে না; যখন অপরাধীরা তাদের ওপর গুলি করে। ’
ক্রসফায়ার নিয়ে গত বছরও সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীরা দফায় দফায় যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ৩ ফেব্রুয়ারি জেনেভায় হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলে ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউ’র অধীনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা হয়। ওই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ রয়েছে।
ওই বছর ১১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বলেছেন, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড যারা ঘটাবে, তাদের বিচারের সম্মুখীন করা হবে। ’ ৫ মে ক্রসফায়ারকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ওই বক্তব্যের পরদিন ৬ মে তত্কালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ বলেছেন, ‘কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরকার যুক্ত নয়, তবে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পুলিশ-র্যাব আত্মরক্ষার্থে যা যা করা দরকার তা করবে। ’ এ দুই মন্ত্রীর বক্তব্যের পর ১৬ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছেন, আত্মরক্ষায় এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটতেই পারে। গত ১২ সেপ্টেম্বর বর্তমান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেছেন, ‘ক্রসফায়ার বলতে কিছু নেই।
ক্রসফায়ার নিয়ে যেসব কথা বলা হয় তা আদৌ ক্রসফায়ার নয়। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আত্মরক্ষার সময় এসব মৃত্যু ঘটে। ’ ৩ অক্টোবর নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে বলেছেন, ‘সন্ত্রাসীদের কোনোভাবে দমন করা যাচ্ছে না বলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটছে। সন্ত্রাস বন্ধের বিকল্প পন্থা হিসেবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা হচ্ছে। এর মাধ্যমে একসময় এমনিতেই সন্ত্রাস বন্ধ হয়ে যাবে।
তখন আর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রয়োজন হবে না। ’ ৮ অক্টোবর নৌ-পরিবহনমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বলেছেন, ‘দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এনকাউন্টারে কোনো সন্ত্রাসী নিহত হলে তাতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় না। বর্তমানে এনকাউন্টারের কারণেই চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস বন্ধ রয়েছে। ’ ২৬ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ক্রসফায়ারের ঘটনা নিয়ে বলেছেন, ‘আসলে ক্রসফায়ার বলে কিছু নেই। ক্রসফায়ার এখন হচ্ছে না, কখনও হবে না।
তার সরকার ক্রসফায়ার সমর্থন করে না। আসল কথা হলো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর যদি আক্রমণ হয়, তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও জীবন বাঁচাতে পাল্টা আক্রমণ করে। ’
তদন্তে সব হত্যাই যুক্তিযুক্ত : আইন অনুযায়ী যে কোনো ক্রসফায়ার বা গুলির ঘটনা নির্বাহী ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত বাধ্যতামূলক। তদন্তে দেখতে হবে কী পরিস্থিতিতে পুলিশ গুলি করেছিল। গুলি করার মতো আদৌ কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল কিনা।
জেলা পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় (জুডিশিয়াল ইনকোয়ারি) তদন্ত পরিচালনা করেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। মেট্রোপলিটন সিটিতে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অথবা তার প্রতিনিধি। নির্বাহী তদন্ত হয় পুলিশ বা র্যাবের নিজস্ব প্রশাসনিক শাখা থেকে। নির্বাহী এ তদন্ত পরিচালনা করেন পুলিশ অথবা র্যাবের এএসপি অথবা তার উপরের পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তা।
পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল (পিআরবি) অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট অথবা পুলিশ সদর দফতরের পূর্বানুমতি ছাড়া পুলিশ গুলি ছুড়তে পারে না।
তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও রয়েছে। কর্তব্যরত পুলিশ ৩ অবস্থায় পূর্ব অনুমতি ছাড়া গুলি করতে পারে। মৃত্যুদণ্ডে অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত কোনো আসামি পলায়নকালে তাকে থামাতে পুলিশ গুলি ছুড়তে পারবে; দাঙ্গা দমনের সময় প্রথমে হুশিয়ারি, এরপর পর্যায়ক্রমে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ, গ্যাসগান ব্যবহার, রাবার বুলেট নিক্ষেপ—এ চারটি ধাপ প্রয়োগের পরও দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ বা দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকে তাহলে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়াই পুলিশ গুলি ছুড়তে পারবে; কোনো কারণে যদি ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়; যেমন সন্ত্রাসীরা, পুলিশ অথবা র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি করে, তাহলে ওই পুলিশ সদস্য নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে গুলি করতে পারবে। আইনের এ শেষ পর্যায়টি প্রয়োগ করেই র্যাব ও পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা একের পর এক ক্রসফায়ার করে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, ক্রসফায়ারে প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনায় পৃথক মামলা করার বিধান রয়েছে।
ক্রসফায়ারে যেসব ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে ওইসব মৃত্যুর ঘটনায় দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩০৪—এ দুই ধারায় মামলা হয়। অধিকাংশ মামলার বাদী হয় পুলিশ। দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা হচ্ছে ‘হত্যা বা খুন’জনিত অপরাধ। দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি খুন নয়, এমন অপরাধজনক প্রাণহানি করে, যদি কাজটি দিয়ে মৃত্যু হয়, সে কাজটি করলে মৃত্যু হতে পারে বলে জানা থাকে অথচ কাজটি মৃত্যু সংঘটনের উদ্দেশ্যে করা হয়নি—এমন অপরাধ। ’ ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্রসফায়ারে মৃত্যুকে খুন নয়; এমন অপরাধজনক প্রাণহানি’ বলে গণ্য করে ৩০৪ ধারায় মামলা করা হয়।
ক্রসফায়ারের এসব মামলা বিচার বিভাগীয় ও নির্বাহী তদন্তে যুক্তিযুক্ত প্রমাণিত হওয়ায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন পার পেয়ে যাচ্ছে।
বিচার বিভাগীয় ও নির্বাহী তদন্তে গুলি ছোড়া ‘জাস্টিফাইড’ প্রমাণিত হলে ক্রসফায়ারে প্রাণহানির ঘটনায় কোনো মামলা করা যাবে না। কেউ মামলা করলেও তা আইনগত বৈধতা পাবে না। ক্রসফায়ার অথবা এনকাউন্টারে নিহত হওয়ার পর আদালতে নিহতদের স্বজনরা এর আগে বেশ কয়েকটি মামলা করেছে। বিচার বিভাগীয় ও নির্বাহী তদন্তে ক্রসফায়ারগুলো আইনগত বৈধতা পাওয়ায় ওইসব মামলা আদালতে টিকছে না।
মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ : মানবাধিকার সংস্থা অধিকার পরস্পরবিরোধী বক্তব্য এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জানায়, দেশে ফৌজদারি বিচারব্যবস্থাকে পরিপূর্ণভাবে কার্যকর করতে না পারায় রাষ্ট্র কর্তৃক হত্যাকারীদের দায়মুক্তির সুযোগে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো ঘটে চলেছে। বিচার ছাড়া অভিযুক্তদের খুন করার রেওয়াজ বর্তমান সরকারের আমলে ব্যাপকতা ও বিস্তৃতি লাভ করেছে। মন্ত্রীদের বক্তব্যের কারণে, সরকার আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে বিচার ছাড়া নাগরিকদের হত্যা করাকে এখন নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে। মানবাধিকার কর্মী ও বিশিষ্ট আইনজীবীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীদের এ ধরনের বক্তব্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। একই সঙ্গে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো ঘটেই চলেছে।
সংবিধান কী বলছে : বাংলাদেশ সংবিধানের ৩১ নম্বর অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, ‘আইনের আশ্রয় লাভ এবং আইন অনুযায়ী ও কেবল আইন অনুযায়ী ব্যবহার লাভ যে কোনো স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং বিশেষত আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না, যাতে কোনো ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে। ’ অনুচ্ছেদ ৩২ পরিষ্কার বলেছে, ‘আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা থেকে কোনো ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না। ’
আলাউদ্দিন আরিফ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।