মিরপুর, সাভার, চিটাগাং, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, যশোর, খুলনা, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, সৈয়দপুর, ঘাটাইল, ময়মনসিংহ, সিলেট, ময়নামতি ক্যানটনমেন্টে কি কি পয়দা হয় তার তালিকা আমাগো জানা নাই। মহাখালি, বনানি কিংবা মিরপুর ডিওএইচএস (ডিফেন্স অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি) এ অবসরপ্রাপ্ত অফিসারগণরে জনগণের জমি বিনামূল্যে বিলায়া দিয়া আমাগো কি লাভ হইছে তাও আমরা জানি না। সেনা কল্যাণের নাম কইরা সেনা কল্যাণ সংস্থা নামের এক অফিসার কল্যাণ সংস্থা কিংবা আর্মি ওয়েল ট্রাস্টের মতো মস্ত একটা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান গইড়া কারা ফুইলা ফাইপা কদলি কিংবা বটবৃক্ষ হইতাছে তাও আমরা জানি না। কারণ জাননের কোন উপায় নাই আমাগো। শুধু নেড়ি কুত্তার লাহান গন্ধ পাই, কি জানি হইতাছে কোথায়- ব্যাবসা, বাণিজ্য!
আকামের গন্ধ কিংবা ধোয়া বেশি দিন ঢাইকা রাখন যায় না, ঠিকই বাইর হইয়া যায় একদিন।
যেমন বাইরা হইয়া গেল এই বেলায় রূপগঞ্জের বুকের পাটা ওয়ালা গেরামবাসীগোর ফোসফোসানিতে। বহুত খায়েশ আর্মি ওয়ালাগো। ক্যান্টনমেন্ট ডিওএইচএস এর জমি মাগনা খায়া পেট ভরে নাই। না, ঐগুলা তো খায় ব্রিগেডিয়ার-কর্ণেল-জেনারেলরা। ক্যাপটেন, মেজর কিংবা লেফটেনেন্টগো লাইগা কি হইব! গণিমতের মাল বাংলার কৃষকের ভূ-সম্পত্তির ভাগ কি তারা পাইবা না! পাইব পাইব।
তবে একটু কষ্ট করতে হইব, হালকা খরচাও ভি হইব। তাগো ব্যাবস্থাও হইতাছে- নাম এএইচএস(আর্মি হাউসিং স্কিম)। ডিওএইচএস এর বদলে এএইচএস এ তাগো জন্য আছে ৫ কাঠার একেকটা প্লট। প্লটের মূল্য মোটামুটি ১৫ লক্ষ টাকা। বাজার দরের চেয়ে সস্তা হইলেও ক্যাপ্টেন সাহেবগো লাইগা কি একটু কষা হইয়া যায়? চিন্তা নাই, মূল্য কিস্তিতে কিস্তিতে দেওন যাইব আর মুশকিল আছান ট্রাস্ট ব্যাংক তো আছেই!একেকজন ৮ লক্ষ কইরা লোন নিতে পারবো ট্রাস্ট ব্যাংক থেইকা।
সারা দেশে নাকি এইরকম অনেক এএইচএস করা হইবো। এই প্রকল্পের প্রাথমিক অনুমোদনের জন্য “Self Financed Housing Scheme for the Army’’ নামের একখান প্রস্তাব এএফডি(আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন) এর কাছে পাঠানো হইছিল। সেইখান থেইকা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর হইয়া ২০০৯ সালের ২৩ নভেম্বর “নীতিগত ভাবে” অনুমোদিত হইছে এই প্রকল্প- Dhaka Cantonment letter নাম্বার 4006/5/A&L/1414 নাকি এর প্রমাণ। পুরা কারবারটা বাস্তবায়নের লাইগা ১৯২৪ এর কম্পানি আইনের আওতায় The Army Housing Scheme (AHS) রে জয়েন্টস্টক কোম্পানি হিসাবে নিবন্ধন করা হইল। সিদ্ধন্ত হইল পুরা কাজে সাহয্য করবো Sena Kalyan Constructions and Developments (SKCD)।
(সূত্র: হোয়াই এএইচএস? http://www.ahs.org.bd/about.html)
২০০৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেইকা আনুষ্ঠানিক যাত্রা করল এইচএস। শুরুতে একটাই প্রজেক্ট- এএইচএস প্রজেক্ট-১ । ঢাকার মধ্যে। শুধুই অফিসারগো লাইগা। যদিও সৈনিক ভাইগো লাইগাও মুলা ঝুলায়া রাখা হইছে, ভবিষ্যতে নাকি জায়গা জমির প্রাপ্যতা অনুসারে তাগো ব্যাবস্থাও হইব! অবশ্য তারা কেমন কইরা এই হাউজিংরে “সেল্ফ ফাইনান্স” করব সে বিষয়ে কোন কথা নাই।
যাউকগা শুরুর এই প্রকল্পের জায়গা হইল গিয়া বসুন্ধরা ও পূর্বাচল হাউজিং প্রকল্পের পাশে শীতলক্ষার একপাড়ে অবস্থিত রূপগঞ্জ ও তার আশাপাশের এলাকা।
সূত্র: ডিলিট করা ওয়েবসাইট ahsbd.wordpress.com এর গুগল ক্যাশ ব্যাবহার করে পিকাসা ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত
এইখান থেইকা ৬ হাজার বিঘা জমি কেনার খায়েশ তাদের। জমি কেনা বেচার সামান্য অভিজ্ঞতা যার আছে, তারা সহজেই বুঝবেন, একসাথে এত জমি কখনই সেচ্ছায় মানুষের কাছ থেইকা কিনা যায়না। ভিটাবাড়ি, পারিবারিক কবরস্থান এবং টিকে থাকার একমাত্র অবলম্বন কৃষিজমিটুকু কে-ই বা স্বেচ্ছায় বেচতে চা! কৃষি জমির মূল্য কৃষক মাত্রই বুঝে। আর্মির অলস দেশ প্রেম ধুইয়া পানি খাইলে কৃষকের পেট ভরবো না।
ফলে আর্মি তেরছা রাস্তা ধরলো।
রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ও রূপগঞ্জ ইউনিয়নের ২৪টি মৌজা থেইকা জমি কেনার জন্য তারা তানমুশরি, পূর্বগ্রাম, ইছাপুরা ও রূপগঞ্জ সদরে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের পাশে স্থানীয় প্রসাশনের কাছে আনুষ্ঠানিক কোন অনুমোদন ছাড়াই সেনাক্যাম্প স্থাপন কইরা বসল। ইউনিফর্ম এর জোর দেখায়া তারা ২৪ টি মৌজায় সব ধরণের জমি কেনা বেচা বন্ধ কইরা দিল। তাগো সাফ কথা, জমি যদি কেউ বেচতে চায় তাইলে সেনাবাহিনীর কাছে বেচতে হইব। আর জোর জবরদস্তিই যখন করতেই হইল তখন আবার ন্যায্য দাম কিসের? কৃষকগো কেঠায় ন্যায্য দাম দিছে- বসুন্ধরা, যমুনা, রাজউক সবাই তো দবরদস্তি কইরা অন্যয্য দামে জমি হাতায়া নিছে।
আর্মি হইল দেশ প্রেমিক বাহিনী। দেশ প্রেমের জোরে তো সে কৃষকরে, জমির মালিকরে বিঘাপ্রতি ৩০/৪০ কিংবা জায়গা ভেদে ৬০/৭০ লাখ টাকার জামি ১৪/১৫ লাখ ট্যাকায় বেচতে বাধ্য করতেই পারে!
কৃষকের ঘাম-রক্তে ভিজা জামিতে দেখেন কি সোন্দর ডিজাইনের বাড়ি উঠাইবো আর্মি অফিসারেরা।
সূত্র: এএইচএস অফিসিয়াল ওয়েবসাইট http://www.ahs.org.bd/exterior.html
সেই বাড়ির স্বপ্নে আর দেশ প্রেমের জোশে আর্মি প্রশাসন এমনকি রাজউকের কাছ থেইকা অনুমোদ নেয়ারও প্রয়োজন মনে করে নাই। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে তারা তাগো ওয়েবে লেখছে: Approval of RAJUK This is under process.
সূত্র: FRESH INFORMATION ABOUT- AHS বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওয়েবাসাইট থেকে সংগৃহীত Click This Link
তারপর প্রায় একবছর পার হয়া গেছে। তবু রূপগঞ্জের ঘটনার পর
Rajuk Chairman Nurul Huda said he too did not know of any housing project for the army in Rupganj.
As per the rules, he said, developers must obtain an approval from Rajuk to implement a housing project. And to get the go-ahead, they need to submit a layout of the project in keeping with the Detailed Area Plan.
সূত্র: ডেইলিস্টার, ২৪ অক্টোবর,২০১০ Click This Link
বাহ! বাহ! ২০০৭-২০০৮ সাল জুইড়া অবৈধ দখল দারিত্ব নিরসনের নামে হকার-বস্তিবাসীগো উচ্ছেদ করলো/পেটে লাথি মারলো সামরিক বাহিনী, আর এখন দেখতাছি নিজেরা রাজউকের অনুমতি-টতির তোয়াক্কা না কইরা, লোকজনের কাছ থেইকা জোড় জবরদস্তি কইরা জমি কাইড়া নেওয়া শুরু করছে! যথাযথ অনুমোদনহীন এই প্রজেক্টের জন্য এরমধ্যেই ১ হাজার বিঘারও বেশি জমি দখল করা এবং ৭ হাজার অফিসারের কাছ থেইকা রেজিস্ট্রেশান ফি বাবাদ ১০ হাজার টাকা এবং ৪ লক্ষ টাকা কইরা দুই দুইটা কিস্তি বাবদ ৮ লক্ষ কইরা টাকা নেয়াও সারা।
বাকি আছে আর ৪টা কিস্তিতে আরও ৭ লক্ষ টাকা আদায়।
সূত্র: APPLICATION FOR ARMY HOUSING SCHEME (AHS) -PROJECT-1 (SECOND GROUP) নং 3917/AHS/R
আর এর মধ্যে কি-না বাগড়া বসাইল গ্রামবাসী- রাগ হইব না, অফিসার ভাইগো! হেই রাগেই তো দুই চাইরটা গুলি ফুইট্টা গেছে- যার একটা রূপগঞ্জের হরিণা নদীর পাড়ের কৃষক আব্দুর রফিকের ছেলে মোস্তফা জামাল(২৬)রে খুন করছে, মারাত্মক আহত করছে অর্ধ-শত ব্যাক্তিরে। খেলা এই খানে শেষ না, জমি দখল করছে আর্মি, পাবলিকের গায়ে গুলি করছে, খুন করছে আর্মি-রেব-পুলিশ আর প্রতিবাদ/প্রতিরোধ করায় উল্টা ৩/৪ হাজার গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে ঢালাও মামলা দিয়া দিছে রাষ্ট্র।
ব্যাপার না, চালায়া যান সামরিক হুজুরেরা, যতদিন পারেন- আমরাও কিন্ত দেইখা নিমু !
রূপগঞ্জবাসীরে লাল সালাম!
পুনশ্চ:
বাংলাদেশ আর্মি এখন স্রেফ একটা প্রথাগত সামরিক প্রতিষ্ঠান না, পাকিস্তান বা ইন্দোনেশিয়ান আর্মির মতো এইটা এখন একটা বৃহত মিলিটারি কর্পোরেশন। ফলে আর্মি কোন পরিস্থিতিতে কোন ধরণের আচরণ করছে এবং কেন করছে, এ বিষয়টা বুঝতে গেলে আর্মিকে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান বা বৃহত পুজির একটা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমলে না নিলে ভুল হবে।
কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান হিসেবে রিয়েল এস্টেট বিজনেসেও তার ভাগ চাই। আর সেই জন্যই Sena Kalyan Constructions and Developments (SKCD) সহায়তায় এই এইএচএস প্রকল্প। ইতিমধ্যে "আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্ট" এবং "সেনাকল্যাণ সংস্থা"র নামে হাজার হাজার কোটি টাকার পুজি বিনিয়োগ ও মুনাফা করছে আর্মি। বিবিসির কামাল আহমেদ একটা রেডিও ডকুমেন্টারিতে ফৌজি বাণিজ্যের দুর্দান্ত একটা তত্ত্ব তালাশ করেছেন। সেখান থেকে দেখা যায়:
সেনা কল্যাণ সংস্থার সচল প্রতিষ্ঠানগুলো
মংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরী , ডায়মন্ড ফুড ইন্ডাষ্ট্রিজ , ফৌজি ফ্লাওয়ার মিলস , চিটাগাং ফ্লাওয়ার মিলস , সেনা কল্যাণ ইলেক্ট্রিক ইন্ডাষ্ট্রিজ , এনসেল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড , স্যাভয় আইসক্রিম , চকোলেট এন্ড ক্যান্ডি ফ্যাক্টরী , ইষ্টার্ণ হোসিয়ারী মিলস , এস কে ফেব্রিক্স, স্যাভয় ব্রেড এন্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরী , সেনা গার্মেন্টস , ফ্যাক্টো ইয়ামাগেন ইলেক্ট্রনিক্স , সৈনিক ল্যাম্পস ডিষ্ট্রিবিউশন সেন্টার , আমিন মহিউদ্দিন ফাউন্ডেশন , এস কে এস কমার্শিয়াল স্পেস , সেনা কল্যাণ কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স , অনন্যা শপিং কমপ্লেক্স , সেনা ট্রাভেলস লিমিটেড , এস কে এস ট্রেডিং হাউস , এস কে এস ভবন – খূলনা , নিউ হোটেল টাইগার গার্ডেন , রিয়েল এস্টেট ডিভিশন – চট্টগ্রাম এবং এস কে টেক্সটাইল।
আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্টের ষোলটি প্রতিষ্ঠান
আর্মি শপিং কমপ্লেক্স , রেডিসন ওয়াটার গার্ডেন হোটেল , ট্রাষ্ট ব্যাংক লিমিটিড , সেনা প্যাকেজিং লিমিটেড , সেনা হোটেল ডেভলেপমেন্ট লিমিটেড , ট্রাষ্ট ফিলিং এন্ড সিএনজি ষ্টেশন , সেনা ফিলিং ষ্টেশন- চট্টগ্রাম , ভাটিয়ারী গলফ এন্ড কান্ট্রি ক্লাব , কুর্মিটোলা গলফ ক্লাব , সাভার গলফ ক্লাব , ওয়াটার গার্ডেন হোটেল লিমিটেড - চট্টগ্রাম , ট্রাষ্ট অডিটোরিয়াম এবং ক্যাপ্টেনস ওর্য়াল্ড।
সূত্র: http://www.amrabondhu.com/masum/1914
রূপগঞ্জের ঘটনাকে আর্মির এই বাণিজ্যিক চরিত্রের সাথে মিলিয়ে বোঝাটা জরুরী। এই ধরণের ঘটনা থেকে জনগণের অর্থে লালিত পালিত আর্মি কর্পোরেট পুজির মালিকে পরিণত হয়ে আর দশটা কর্পোরেট গ্রুপের মতোই লুটেরা শোষক শ্রেণীর কাতারে দাড়িয়ে যাওয়ার আভাস পাওয়া যায়।
(শিরোনামটি হুমায়ুন আজাদের “তৃতীয় বিশ্বের একজন চাষীর প্রশ্ন” শীর্ষক কবিতা থেকে নেয়া হয়েছে। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।