সূর্যের সাম্প্রতিক অবস্থা বিস্মিত করেছে বিজ্ঞানীদের। যারা দীর্ঘদিন ধরে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করে চলেছেন তাদের কাছেও নেই এর ব্যাখ্যা। সেখানে প্রলয়নাচন অব্যাহত রয়েছে, অস্তিত্ব রয়েছে সৌরকলঙ্কেরও। তারপরও বিশেষ একটা কিছু যেন ঘটে চলেছে। তাত্ত্বিকভাবে সূর্যের বয়স বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এর আকৃতি অতি ধীর হলেও বাড়তে থাকার কথা।
কিন্তু গত ১২ বছরে তার আকৃতি স্থির আছে বলে গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে।
হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. জেস কুনের নেতৃত্বে একদল জ্যোতির্বিজ্ঞানী দেখেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে সূর্যের আকার অস্বাভাবিক স্থির রয়েছে। গত ১২ বছরে এর ব্যাস পরিবর্তন হয়েছে ১০ লাখ ভাগের এক ভাগেরও কম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোনমি তথা আইএফএ’র সহযোগী পরিচালক কুন বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, সূর্যের এই স্থির অবস্থা তাদের বিভ্রান্তিতে ফেলেছে। এমনটি হওয়ার কথা নয়।
আকৃতি পরিবর্তন না হলেও সূর্যের ভেতরে অবিরাম ঘটে চলেছে প্রলয়কাণ্ড। সূর্যের সব জায়গায় অবশ্য একই ধরনের পরিস্থিতি বিরাজমান নয়।
পৃথিবীর জলবায়ুর ওপর সূর্যের প্রভাব নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে গবেষণা চলছে তার একটি অংশ করছেন ড. কুন। বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলছেন, সূর্যের ভেতরে প্রতিনিয়ত কী ঘটে চলেছে সে সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে না পারা পর্যন্ত পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ে পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব হবে না। তাই পৃথিবীর ওপর সূর্যের প্রভাব জানতে হলে আগে সূর্যটাকেই ভালোভাবে জানতে হবে।
কুন এবং তার সহকর্মীরা নাসার সোলার অ্যান্ড হেলিওসফেরিক অবজারভেটরি তথা এসওএইচও স্যাটেলাইট দিয়ে সূর্যের ব্যাস পর্যবেক্ষণ করেছেন। বিষয়টি আরও নিখুঁতভাবে দেখতে তারা শিগগিরই নাসার সোলার ডিনামিক্স অবজারভেটরি তথা এসডিও স্যাটেলাইট ব্যবহার করতে যাচ্ছেন। এই স্যাটেলাইটটি উেক্ষপণ করা হয় গত ১১ ফেব্রুয়ারি। এর স্পর্শকাতর যন্ত্রপাতি সূর্যের সঠিক ব্যাস নির্ণয়ে সক্ষম হবে।
তবে ওই বিভ্রান্তি দূর করতে হলে অপেক্ষা করতে হবে ২০১৭ সাল পর্যন্ত।
কারণ ওই বছরই ব্যবহার করা যাবে অ্যাডভান্সড টেকনোলজি সোলার টেলিস্কোপ তথা এটিএসটি। এই টেলিস্কোপ দিয়ে সূর্যপৃষ্ঠের ক্ষুদ্রতম অংশ পর্যবেক্ষণ করা যাবে। ফলে প্রকৃতপক্ষে সূর্যে কী ঘটে চলেছে সে সম্পর্কে আরও সুস্পষ্ট তথ্য জানা সম্ভব হবে।
ড. কুন বলেন, সূর্য সম্পর্কে পূর্বাভাস দেয়ার মতো অবস্থা তৈরির জন্য তার বড় ছবি ও সেখানে কী ঘটে চলেছে, সে সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে হবে। পৃথিবীতে যেমন প্রচণ্ড হারিকেন ঝড় শুরু হয় মৃদুমন্দ বাতাসের মধ্য দিয়ে, সূর্যেও নিশ্চয়ই হুট করে প্রলয় ঘটতে শুরু করে না।
সেখানে এমন প্রলয় তৈরিতে চুম্বক ক্ষেত্রও নিশ্চয়ই রাখে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। ছবিতে সূর্যের সক্রিয় অঞ্চল ১০৪৮৬-তে এ পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে বড় সৌরকলঙ্ক দেখেছে এসওএইচও স্যাটেলাইট। সৌরকলঙ্ক হলো সূর্যপৃষ্ঠে সৃষ্ট কালো দাগ। এর ব্যাস এক হাজার থেকে চার হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এর দুটি অংশ থাকে।
একটি অন্ধকার কেন্দ্র বা প্রচ্ছায়া এবং অন্যটি উপচ্ছায়া। সৌরকলঙ্ক যত বড় হয়, চুম্বক ক্ষেত্র তত শক্তিশালী হয়। এ স্থানে তাপমাত্রা কম হয়। সৌরকলঙ্কের সংখ্যা ১১ বছরের একটি চক্র মেনে চলে।
সংগৃহীত দৈনিক আমার দেশ ২৫/৫/১০
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।