আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সূর্যের সংসার

আমার মাথাটা যেহেতু আমারই, সুতরাং আমার লিখাগুলাও আমারই। কোনো লিখার একটা দাড়িও যদি কারো সাথে মিলে যায় তাহলে তাকে যা করা হবে তার জন্য কেউ দায়ী থাকবে না। লিখাসমূহের সর্বময় সর্বস্বত্ত্ব সর্বপ্রকারে সর্বস্থানে সর্বসাধারণের জন্য সর্বসময় সংরক্ষিত।

বল তো সৌরজগতে কয়টা গ্রহ? নিশ্চয়ই বলবে ৯টি! কিন্তু সঠিক উত্তরটি হবে ৮টি। কেনো হবে? একটু পরেই বলছি সে’কথাটি।

আমাদের সৌরজগতের কিছু কিছু গ্রহ হাজার বছর ধরে মানুষের কাছে পরিচিত, আবার কিছু গ্রহ মাত্র এক দুইশো বছর আগে বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু গ্রহগুলোর এমন অনেক মজার এবং আশ্চর্য্যজনক তথ্য আছে যা হয়তো আমরা এখনও পর্যন্ত জানি না। চলো তাহলে ঘুরে আসি মহাকাশের গ্রহগুলো থেকে। সূর্যের সবচে কাছের গ্রহটি হচ্ছে বুধ। এই গ্রহটি এতোই গরম যে মাঝে মাঝে তা ৪০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়।

কিন্তু সবচে আশ্চর্যের বিষয় হলো যে এতো ভয়ঙ্কর গরমের মধ্যেও বুধ গ্রহে বরফ খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আবার গ্রহটিতে আছে হাজার হাজার আগ্নেয়গিরি। এসব আগ্নেয়গিরির মধ্যে যেগুলো থেকে এখন আর আগুন বের হয় না, সেগুলোর মুখের ভেতর জমে আছে এই বরফ। আর এই মুখগুলো এতোই গভীর যে সূর্যের আলো কখনোই আগ্নেয়গিরির ভিতরে পৌঁছায় না, তাই আর বরফও গলে না। সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে বুধের সময় লাগে ৮৮ দিন এবং নিজের চারপাশে ঘুরতে লাগে ৫৮ দিন।

আকাশ পরিষ্কার থাকলে সবচেয়ে উজ্জ্বল যে তারাটি দেখা যায়, যাকে আমরা শুকতারা বা সন্ধ্যাতারা নামে চিনি; সেটিই হচ্ছে শুক্র গ্রহ। বুধ সূর্যের সবচে কাছের গ্রহ হলেও সৌরজগতের সবচে গরম গ্রহ কিন্তু এই শুক্রই। এই গ্রহে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সালফিউরিক এসিড ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড অনেক বেশি পরিমাণে আছে যা সূর্যের তাপ গ্রহ থেকে বের হতে দেয় না। ফলে শুক্র গ্রহের গড় তাপমাত্রা থাকে প্রায় ৪৬৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে, শুক্রের ভয়ানক দূষিত পরিবেশে কোনো প্রাণী বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই।

সৌরজগতের তৃতীয় গ্রহ আমাদের সুন্দর এই পৃথিবী। মজার ব্যাপার হচ্ছে- এই গোটা পৃথিবীটাই কিন্তু একটা বিরাট চুম্বক। এই চুম্বকের আকর্ষণ কয়েক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত কাজ করে। একদিকে এই চুম্বক সূর্য থেকে আসা ক্ষতিকর আলো পৃথিবীতে ঢুকতে বাধা দেয়, অন্যদিকে এই চুম্বকের আকর্ষণের কারণেই পৃথিবীর দ্রুতগতিতে ঘূর্ণন সত্ত্বেও আমরা ছিটকে পড়ে যাই না। ধারণা করা হয় যে, পৃথিবীর একেবারে ভিতরে যে গরম তরল পদার্থ আছে, সেটাই এই ঘটনার জন্য দায়ী।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পৃথিবী ছাড়া আর কোনো গ্রহে যদি প্রাণ থাকে তবে সেটা মঙ্গল গ্রহে। মঙ্গল গ্রহে খাল আবিষ্কার হওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওডিসি নামের একটি মহাকাশযান প্রথম এই গ্রহে পানি পাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলো। ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রেরই আরেকটি মহাকাশযান ফিনিক্স মঙ্গল গ্রহ থেকে বরফ নিয়ে আসে। গ্রহটির যে জায়গা থেকে এই বরফ সংগ্রহ করা হয়েছে, বিজ্ঞানীরা তার নাম দিয়েছেন ‘বরফের রাণী’। গ্রহদের মধ্যে সবচে বড় হচ্ছে বৃহষ্পতি।

কিন্তু কতো বড়? বৃহস্পতির ওজনটা ঠিক পৃথিবীর ৩১৮ গুণ। বুঝতে পারছো তো এর আয়তনটা। নিশ্চয়ই আরো অবাক হবে শুনে যে, বৃহষ্পতির ওজন সৌরজগতের বাকি সব গ্রহের ওজনের আড়াই গুণ। কি বিশাল ব্যাপার তাই না? আরো মজার বিষয় আছে। এত্তো বিশাল হওয়া সত্ত্বেও কিন্তু বৃহষ্পতি-ই হচ্ছে সৌরজগতের সবচে দ্রুতগামী গ্রহ।

নিজের চারদিকে ঘুরতে যেখানে পৃথিবীর লাগে ২৪ ঘন্টা, বৃহষ্পতি মাত্র ১০ ঘন্টাতেই তা সেরে ফেলে। কি বিশ্বাস হয় না? গ্রহদের মধ্যে আংটিওয়ালা শনি’কেই নিশ্চয়ই তোমাদের সবচে ভালো লাগে! এর অদ্ভুত সুন্দর এই আংটির রহস্য তবে কি ? আসলে লক্ষ লক্ষ ছোট বড় পাথর শনিকে ঘিরে একটা নির্দিষ্ট কক্ষপথে অবিরাম ঘুরছে। আর শনির ৩১টি উপগ্রহ এই আংটিগুলোকে আটকে রেখেছে কক্ষপথে। শনির এই আংটি কিন্তু আকাশ পরিস্কার থাকলে মাঝে মাঝে পৃথিবী থেকেও বোঝা যায়। একদিন রাতে বাসার ছাদে গিয়ে চেষ্টা করে দেখো।

সৌরজগতের সপ্তম গ্রহটির নাম ইউরেনাস। ইউরেনাসই সৌরজগতের একমাত্র গ্রহ যা অন্যান্য গ্রহের মতো না ঘুরে একটু অন্যরকম ভাবে ঘোরে। অন্য গ্রহগুলো যেখানে নিজের কক্ষপথের চারপাশে সিডি প্লেয়ারের ডিস্কের মতো করে ঘোরে, ইউরেনাস কিন্তু ঘোরে গাড়ির চাকার মতো। এর ফলে ইউরেনাসে টানা ২১ বছর দিন এবং তারপরের ২১ বছর রাত থাকে! কি সর্বনাশের কথা! সত্যিই যে তাই! আর একটা কথা জানাই, ইউরেনাসই কিন্তু সৌরজগতের সবচে ঠান্ডা গ্রহ। যেখানে ০ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রাতেই পানি বরফ হয়ে যায়, সেখানে ইউরেনাস-এর গড় তাপমাত্রা হচ্ছে মাইনাস ২২৪ ডিগ্রী সে.।

যাবে নাকি সেখানে ঘুরতে? এবারে আসি অষ্টম গ্রহ নেপচুনের কথায়। নেপচুনের মজার বৈশিষ্ট্য হলো এর বাতাস। এই গ্রহের বাতাস এতো জোরে প্রবাহিত হয় যে তা পৃথিবীর যে কোনো মজবুত দালানকেও এক মুহূর্তে গুঁড়ো গুঁড়ো করে দিতে পারে। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বের করেছেন যে, নেপচুনে বাতাসের গড় বেগ ঘন্টায় প্রায় ২০০০ কিলোমিটার। আর আমাদের পৃথিবীতে খুব বেশি হলে ৩০০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়, তবে তা শুধু ভয়ঙ্কর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় হলে তবেই।

সৌরজগতের সব শেষের গ্রহ হলো নেপচুন। তোমরা তো সবাই আপত্তি জানাবে যে, প্লুটো থাকতে নেপচুন কিভাবে শেষ গ্রহ হয়। কিন্তু প্লুটো ঠিকঠাক গ্রহদের নিয়ম কানুন না মানার কারণে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে। সৌরজগতের সব গ্রহের সূর্যের চারপাশে ঘোরার জন্য নিজেদের কক্ষপথ আছে। প্লুটোরও আছে, তবে তা অন্যান্য গ্রহদের মতো সম্পূর্ণ আলাদা নয়।

প্লুটো-র কক্ষপথ বিভিন্ন জায়গায় নেপচুনের কক্ষপথের ভিতর দিয়ে ঢুকে গেছে। তাছাড়া তোমরা তো জানোই প্লুটো কতো দূরে অবস্থিত। সূর্যের আলো প্লুটোতে পৌঁছাতে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে, যেখানে পৃথিবীতে লাগে মাত্র ৮ মিনিট। তাই বিজ্ঞানীরা ঠিক করেছেন যে, প্লুটো-কে গ্রহ না বলে এখন থেকে ‘বামন গ্রহ’ নামেই সম্বোধন করবেন, অর্থাৎ গ্রহের বৈশিষ্ট্য থাকলেও প্লুটো এখন আর গ্রহ নয় আমাদের পৃথিবী বাদেও সৌরজগতের এই গ্রহদের অনেক কথাই এখনও বিজ্ঞানীদের কাছেই অজানা। অজানা এই তথ্য জানার জন্য সদা তৎপর বিজ্ঞানীরা।

আর তাছাড়া তো তাদের কাছে এখনও জানার অপেক্ষা পৃথিবী বাদেও অন্য কোন গ্রহে প্রাণ আছে কি না!

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।