আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নূরের মেয়েদের কান্না-হায়রে দেশ আমার?

সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায়......

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নূরকে পিটিয়ে মারার দৃশ্য যখন প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখানো হচ্ছিল, তখন আতঙ্কে বারবার কেঁপে উঠছিল নূরের চার বছর বয়সী মেয়ে সুরাইয়া। পর্দায় ওইসব দৃশ্যে বেশিক্ষণ চোখ রাখতে পারছিল না নূরের বড় দুই মেয়ে সানজিদা নূর এবং সাদিয়া নূরও। কাঁপা হাতে তারা চোখের দৃষ্টি আটকে রেখেছিল, কিন্তু আটকাতে পারেনি চোখের পানি। আর নূরের হতবিহ্বল স্ত্রী মহুয়া নূর না পারছিলেন নিজেকে সামলাতে, না মেয়েদের সান্ত্বনা দিতে। বহুল আলোচিত ওই হত্যার দৃশ্য গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে প্রজেক্টরের মাধ্যমে সাংবাদিকদের দেখানোর ব্যবস্থা করে বিএনপি।

তবে নিহতের শিশুকন্যাদের সামনে ওই দৃশ্য দেখানোর সমালোচনাও হয়। নাটোর জেলা বিএনপির সভাপতি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসলে বিষয়টি সেভাবে ভাবা হয়নি। আর ওরাও জানত না যে এটা দেখানো হবে। বাচ্চাদের সামনে এমন বীভৎস দৃশ্য দেখানোর পেছনে আমাদের কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। ’ তিনি বলেন, ‘সরকার খুনিদের পরিচয় অস্বীকার করছে।

আমরা মূলত সেটিই তুলে ধরতে চেয়েছি। ’ নাটোর বিএনপির নেতা সানাউল্লাহ নূর গত ৮ অক্টোবর নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া বাজারে বিএনপির মাসব্যাপী কর্মসূচি পালনকালে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হামলায় নিহত হন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে নূর হত্যার বিচার দাবি করেন তাঁর স্ত্রী মহুয়া নূর। নূরকে কারা পিটিয়ে মেরেছে সংবাদ সম্মেলনে তাদের নাম-পরিচয় উল্লেখ করা হয়। বিএনপির দাবি, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও প্রকাশনা সম্পাদক জাকির হোসেনের নেতৃত্বে সরকারদলীয় লোকজন সানাউল্লাহ নূরকে হত্যা করেছে।

মামলায় আসামি হিসেবে এদের সবার নাম আছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মহুয়া নূর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি রাজনীতি বুঝি না। আমি কেবল আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী ও মা। তিনি নিশ্চয়ই বুঝবেন আমার ও আমার সন্তানদের কষ্টটা।

’ সংবাদ সম্মেলনের পর নূরের বড় দুই মেয়ে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সানজিদা ও দশম শ্রেণীর ছাত্রী সাদিয়াও প্রথম আলোকে বলে, তাদের চাওয়া কেবল বাবার হত্যার বিচার। খুনিরা চোখের সামনে দিয়ে ঘুরে বেড়াবে, এটা মানা তাদের কাছে খুবই কষ্টের। মহুয়া নূর বললেন, ‘চিহ্নিত খুনিরা সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর নিরপরাধী হওয়া সত্ত্বেও আমার মেয়েরা এখন স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না। খুনিরা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে।

’ তিনি বলেন, ‘আমি খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, যেন আর কোনো স্ত্রী ও সন্তানের অবস্থা এই পরিবারের মতো না হয়। ’ লিখিত বক্তব্যে মহুয়া নূর বলেন, ২৭ জন চিহ্নিত সন্ত্রাসীসহ ৪৭ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। অথচ এখন পর্যন্ত পুলিশ মাত্র একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। সরকারের প্রভাবে মূল হত্যাকারীরা এখন বনপাড়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ আহত সাংবাদিকদের মামলাও নিচ্ছে না।

সংবাদ সম্মেলনে আসামিদের নামও পড়ে শোনানো হয়। নূরের স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামীর হত্যার পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, এ হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ সরকারের হাতে আছে। সেই ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই বক্তব্যে আমি, আমার সন্তানেরা আশাবাদী হয়েছিলাম সরকার হত্যার বিচার করবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নাটোরের ঘটনা যে তাদের (বিএনপির) অভ্যন্তরীণ না, সেটা কীভাবে প্রমাণ করবেন।

তাঁর বক্তব্যে আমরা মর্মাহত হয়েছি। ’ তিনি বলেন, ‘দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে এমন বক্তব্য দেওয়া ঠিক হয়নি। এরপর খুনিরা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রশাসন কিছু করছে না। প্রধানমন্ত্রী হয়তো আপনজন হারানোর কষ্ট ভুলে গেছেন।

’ তিনি প্রশ্ন করেন, ‘সবকিছুর সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকার পরও কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নতুন করে প্রমাণ দিতে হবে তাঁর দলের কর্মীরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ’ সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্যই দিক না কেন, আমরা আশা করতে চাই তিনি এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। ’ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উচিত, দলীয় খুনিদের রক্ষা না করে বিচারের আওতায় এনে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, নাটোর জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদারসহ নাটোরের স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.