গতকালের পর...
অবিশ্বাস
মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন
জীবনে প্রথম অবিশ্বাসের কবলে পড়ি ৯৯ সালে এইচএসসিতে পড়া অবস্থায়। প্রচন্ড ভালো লাগে ক্লাস এইটে পড়ুয়া তাসলিমাকে।
প্রস্তাবটা দিতেই ফোস করে উঠে বললো, কি!
আপনি না গতকাল সাথীকে প্রস্তাব দিলেন।
ঘটনা আসলে ঠিকই। এদিকে সাথীর কাছে গেলেও একই কথা।
পড়লাম মহা ফ্যাসাদে। ধুর শালা প্রেম করাই হলো না।
লেখাপড়া বাদ দিয়ে ২০০৩ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দিই। সেখানেও অবিশ্বাস।
বন্ধুরা বলে, শালা ঘুষ খাস।
কিন্তু কসম করে বলছি, আজ পর্যন্ত অন্যের দেয়া এক কাপ চা পর্যন্ত খেয়েছি কিন না সন্দেহ।
ডিউটিতে গেলে জনসাধারণকে বলি, ভাই দয়া করে দাগের এপাশে আসবেন না।
একজন প্রথমে দাগের উপরে, তারপর একজন এপাশে, এভাবে আসতে আসতে আমাদের শরীরের ওপর পড়তে চায়। কে শোনে কার কথা? মেজাজ ঠিক রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। ভালো মন্দ না দেখে দুটো প্যাদানি দিলেই এলাকা ফাকা।
কর্মস্থলে হীরা নামে একটি মেয়েকে পছন্দ হয়। প্রথমে বন্ধুত্ব এবং পরে অনেক কাঠখর পুড়িয়ে সর্ম্পকটা প্রেমে রুপান্তরিত করি। এক সঙ্গে রিকশায় বেড়িয়েছি, মোবাইলে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলছি। এক সঙ্গে রাত কাটিয়েছি। তার সমুদ্রে হাবুডুবু খেয়েছি।
চরম তৃপ্তিতে তার মন ভরিয়েছি।
হীরা যশোর এমএম কলেজে দর্শনে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়তো। যখন ঘর বাধার জন্য একে অন্যের ভালো লাগা, মন্দ লাগা নিয়ে আলোচনা করছিলাম তখন সে বললো, আমি পাস করে চাকরি করবো।
বললাম, না আমরা সুখের নীড় সাজাবো।
তোমাকে সব সময় আমার কাছে রাখবো।
বাসা নিয়ে থাকবো কর্মস্থলে, জীবন হবে ঐশ্বর্যময়।
কিন্তু না। সেখানেও অবিশ্বাস।
আমাকে ভালোবাসে না, সে বললো।
অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে অবশেষে প্রেমের সমাপ্তি ঘটলো।
ভেবেছিলাম প্রেম করে বিয়ে করবো। কিন্তু সে আশা পুর্ণ হলো না।
অবশেষে বাবা-মায়ের পছন্দ এবং ইচ্ছায় রোজীকে জীবন সাথী করলাম। বাসর রাতে সে ঘরে ঢুকে প্রথমে আমার পা ছুয়ে সালাম করলো। দিলাম পুলিশি প্যাচ।
লজ্জা ভাঙানোর জন্য বললাম, দাদি কি শুধু এটুকুই শিখিয়েছে? আর কিছু শেখায়নি?
রোজী বলল, কি?
বললাম, বাসর ঘরে ঢুকে স্বামীর ছয় জায়গায়
চুমু দিতে হয়। না হলে স্বামীর অমঙ্গল হয়।
কি আর করা? লজ্জামাখা মুখে সরল মনে শুরু করলো কাজ। সেকি শিহরণ।
এখন অবশ্য এ ধরণের কথা বললে নির্ঘাত ঝাড়ু পেটা, না হয় বেলুনের বাড়ি একটাও মেঝেতে পড়তো না।
যা হোক ঘরের কথা নাইবা জানলেন।
তারপর বললাম, শাড়ী খুলে শোও।
রোজী শাড়ী খুলে পাশে রাখার চেষ্টা করলো।
আমি শাড়ী হাতে নিয়ে ফ্লোরের এক প্রান্তে ছুড়ে ফেললাম।
শুরু হলো তার কাপুনি।
তার ঠোটে চুমু দিয়ে বুকে মৃদু চাপ এবং ঠোট চুষতে লাগলাম।
সে বললো, পবিত্র রাথে এসব নাকি করতে নেই।
বললাম, কি যে বলো। আমরা বিবাহিত। এ রাজে কাজ না করলেই পাপ হবে।
সে রাজি হলো।
আমার শাল কাঠের নৌকা তার ছোট্র নদীতে নামাতে চাইলে উহ শব্দ করে কেদেই ফেললো। নিচ দিয়ে রক্তের বন্যা বয়ে যেতে লাগলো। আমার সাদা গেঞ্জি ধরলাম। ততোক্ষনে বিছানার চাদর শেষ।
বাসর রাত শ্বশুরবাড়িতে হওয়ায় রোজীর বড়ভাই এর বউ টের পেয়ে বললেন, ছোটভাই একটু আস্তে ধীরে খাও। ফরাবে না।
খুব লজ্জা পেলাম।
ভাবী বললেন, মাজের রাজা ইলিশ আর জামাইয়ের রাজা পুলিশ।
বললাম, ভাবী, সেই কাজের রাজাও কিন্তু পুলিশ।
ভাবী লজ্জায় ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
রোজীর সতীত্বের প্রমাণ সেই গেঞ্জিটা আজো শোকেসে রেখেছি।
সেই থেকে তার কথা,তোমার আগে থেকেই অভ্যাস আছে।
না হলে বাসর রাতেই এমন করলে কেন?
আমার ডান হাত দিয়ে ওর ব্লাউজের একটা বোতাম খুলতে মাত্র পাচ ছয় সেকেন্ড সময় লাগতো। সেখান থেকে আরো অবিশ্বাস।
এতো দ্রুত কিভাবে ব্লাউজ খুলি?
অবিশ্বাসের এক পর্যায়ে জেএমবি বিভিন্ন স্থানে বোমা মারার কারণে আমরা কোর্টের গেটে ডিউটি করতাম। মানুষের ব্যাগ-বডি চেক করে তবেই ঢোকাতাম।
বাগেরহাটের মেয়েরা খুব সুন্দরী ও সেক্সি। যে কোনো মেয়ের পেছনে দুদিন ঘুরলেই যে কোন কাজ করা যায়। তবে সাবধান থাকতাম।
আমরা এর ধারেকাছেও যেতাম না। চাকরি করা কঠিন হবে। কিছু বললেই তারা ঘারে চেপে বসতে চায়।
যা হোক, একদিন একজন কলেজ পড়ুয়া মেয়ের ভ্যানিটি ব্যাগ চেক করতে চাইলাম। প্রথমে ইতস্তত করে পরে আইন মানতে ব্যাগ-খুলে দেখালো।
দেখি ব্যাগের মধ্যে আট-দশটা কনডম।
বললাম, কবে থেকে?
মেয়েটি লজ্জায় পড়ে গেল।
বললাম, আমি কি দুটি ব্যবহার করতে পারি?
সে বললো, কোথায় আসবেন?
আরে ধ্যাৎ আপনাকে না। বাসায় বৌ আছে একটু টেস্ট করবো।
মেয়েটি দুটি কনডম হাতে দিয়ে মাথা নিচু করে চলে গেল।
ও, বলতে ভুলে গেছি, রোজী তখন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
বাসায় গিয়ে রোজীকে কনডমের কথা বলেতে ভুলে গেলাম। বিধিরাম। রোজী কাপড় কাচতে গিয়ে কনডম পেয়ে আমার দিকে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে এগিয়ে আসতেই বললাম, সোনা কি হয়েছে?
কি হয়নি? আমার পেটে বাচ্চা। এ সুযোগে তুমি অন্য জায়গায় টাংকি মারো? আর তোমার ঘর করবো না।
তাকে যতোই বোঝাই কে শোনে কার কথা?
কাপড়-চোপড় গোছাতে থাকে। বাড়ি যাবে। অনেক হাতে পায়ে ধরে পরিস্থিতি শান্ত করি।
আমার বন্ধু সোহেল ভালোবাসে জিনাতকে আর সোহেলকে ভালোবাসে লাকি। অবশেষে বন্ধুরা মিলে সোহেল এবং জিনাতকে বিয়ের পিড়িতে বসাই।
কিন্ত লাকি ফাকি খায়।
সেদিন ডিউটি না থাকায় বাগেরহাট স্টেডিয়ামে ক্লোজআপ ওয়ান তারকা নোলক, রাজীব ও বিউটিদের কনসার্টে বউকে নিয়ে গান শুনতে যাই। ক্যামেরা মোবাইল দিয়ে ভিডিও করছি এমন সময় লাকির সঙ্গে দেখা। সে বললো, ভাই যা করেছেন ভালোই করেছেন। আমার চেহারা কি এতোই খারাপ? আমার মনে কি ভালোবাসা নেই?
এ কথা শুনে বউ উঠে দ্রুত রিকশায় বাসায় চলে গেল।
শত পিছু ডেকেও ফেরাতে পারলাম না। অবশেষে বন্ধু সোহেলকে এনে তার ভুল ভাঙাতে হয়।
আসলে দোষ তার নয়। দোষ তার সরল মনের ভালোবাসার। আমিও যে তাকে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসী।
তাকে বুকে চেপে না ধরলে আমার ঘুমই হয় না। সারারাত আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমায় বাচ্চা মেয়ের মতো। তার পেটের বাচ্চা যখন নড়ে ওঠে আমি খুশিতে আত্মাহারা হয়ে যাই। পেটে চুমু খাই। আমার বাড়ী সিরাজগঞ্জ থেকে তিনশ কিলোমিটারেরও বেশি দুরে বাবা-মা ভাইবোনকে ফেলে বাগেরহাটে চাকরি করি।
বাবা-মাকে মনে পড়লে সে সব কিছু ভুলিয়ে দেয়।
সকালে আমাকে আদর করে ডেকে তুলে কপালে চুমু দেয়। তার পর ব্রাশ, শেভিং সরঞ্জাম। এগিয়ে দেয়। গোসল বলতে বাথরুমে বসে থাকি।
সেই গা ঘষে গোসল করিয়ে দেয়। আমি বাচ্চা ছেলের মতো আচরণ ।
আজ আট বছর পর সেই প্রথম প্রেম তাসলিমা ভালোবাসা দিবসে ফোন করে বললো, আপনি ১৯৯৯ সালে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আজ রাজি হলাম।
বললাম, এতাদিন পরে কেন?
তাসলিমা বললো, এখন বুঝলাম আপনিই আমাকে বেশি ভালোবাসেন ।
তাই।
তাই কি হয়? এখন আমার সংসার হয়েছে। দুদিন পর বাবা হবো। তুমি তো সব জানো।
জানি।
জানি। কিন্ত আপনিই তো বলেছিলেন তোমার জন্য আমার ঘরের দরজা চিরদিন খোলা থাকবে। ডিগ্রি পাস করছি। চাকরি করবো। আপনি বাসায় বউ নিয়ে থাকবেন আর ছুটি হলে আমার কাছে আসবেন।
তা হয় না তাসলিমা।
তা হবে কেন? এখন বউই সব আমি কিছুই না। বেইমান প্রতারক।
এভাবে বেইমান প্রতারক হয়েই বেচে আছি।
অনেক সময় জনসাধারণও ভুর বোঝে।
এর উদাহরণ প্রথমেই দিয়েছি। হানিফ সংকেতের মতোই এই নিয়ে বেচে আছি আমি। আমাদের সন্তান পৃথিবীতে আসবে। ঘর আলোকিত হবে। আমার ভালোবাসা পাগল বউ খোকা-খুকুর আব্বু বলে ডাক দেব।
জীবন ধন্য হবে।
সংগ্রহঃ যায়যায়দিন-২০০৬
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।