বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
জীবনানন্দের চিন্তায় বড় ধরনের এক Contradiction কিংবা বৈপরীত্য আবিস্কার করে স্তব্দ হয়ে গেলাম।
‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থের এক কবিতায় কবি লিখেছেন:
চারিদিকে শান্ত বাতি, ভিজে গন্ধ, মৃদু কলরব;
খেয়ানৌকোগুলো এসে লেগেছে চরের খুব কাছে;
পৃথিবীর এই সব গল্প বেঁচে রবে চিরকাল;-
এশিরিয়া ধুলো আজ , বেবিলন ছাই হয়ে আছে।
(‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতার শেষ চার লাইন)
পৃথিবীর এই সব গল্প বেঁচে রবে চিরকাল;-এই বাক্যটিই বিস্ময়কর।
বিস্ময়কর এবং অযৌক্তিক। অযৌক্তিক, কেননা, পৃথিবীতে কোনও কিছুই চিরকাল টিকে থাকে না। তাহলে জীবনানন্দ ওমন উলটো গতির কথা লিখলেন কেন? যে জীবনানন্দ বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করেন তার প্রমাণ তাঁর কবিতায় রয়েছে। তাহলে? তাহলে জীবনানন্দ কেন বললেন পৃথিবীর এই সব গল্প বেঁচে রবে চিরকাল? তাহলে কি জীবনানন্দ কি খোদ জগতের পরিবর্তনশীলতা তথা বিবর্তনকে অস্বীকার করে বসলেন? না। কারণ, জীবনানন্দ সত্যিকার অর্থেই একজন বিজ্ঞানমনস্ক কবি, এবং তাঁর মতো বিজ্ঞান-সচেতন বাঙালির মধ্যে বিরল।
জীবনানন্দ বিজ্ঞানমনস্ক বলেই বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করতেন। ‘১৯৪৬/৪৭’ কবিতায় জীবনানন্দর বিবর্তন-চেতনা ফুটে উঠেছে:
সৃষ্টির মনের কথা মনে হয়- দ্বেষ।
সৃষ্টির মনের কথা: আমাদেরি আন্তরিকতাতে
আমাদেরি সন্দেহের ছায়াপাত টেনে এনে ব্যথা
খুঁজে আনা। প্রকৃতির পাহাড়ে পাথরে সমুচ্ছল
ঝর্নার জল দেখে তারপর হৃদয়ে তাকিয়ে
দেখেছি প্রথম জল নিহত প্রাণির রক্তে লাল
হয়ে আছে বলে বাঘ হরিণের পিছু আজও ধায় ;
মানুষ মেরেছি আমি -তার রক্তে আমার শরীর
ভরে গেছে; পৃথিবীর পথে এই নিহত ভ্রাতার
ভাই আমি; আমাকে সে কনিষ্টের মত জেনে তবু
হৃদয়ে কঠিন হয়ে বধ করে গেল, আমি রক্তাক্ত নদীর
কল্লোলের কাছে শুয়ে অগ্রজপ্রতিম বিমূঢ়কে
বধ করে ঘুমাতেছি-তাহার অপরিসর বুকের ভিতরে
মুখ রেখে মনে হয় জীবনের স্নেহশীল ব্রতী
সকলকে আলো দেবে মনে করে অগ্রসর হয়ে
তবুও কোথাও কোনও আলো নেই বলে ঘুমাতেছে ...
(আবদুল মান্নান সৈয়দ সংকলিত ও সম্পাদিত প্রকাশিত-অপ্রকাশিত কবিতাসমগ্র : জীবনানন্দ দাশ )
দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে লেখা জীবনানন্দের ‘১৯৪৬/৪৭’ কবিতাটি কবির সৃষ্টিকর্মে এক বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে;- যে কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ফকরুল আলম বেশ সচেতনভাবেই তাঁর জীবনানন্দের কবিতার ইংরেজি অনুবাদ গ্রন্থে ঠাঁই দিয়েছেন। আমাদের বক্তব্য স্পস্ট করে অনুধাবনের জন্য ওপরে উল্লিখিত নির্বাচিত অংশটুকুর ইংরেজি ভাষান্তরের পাঠ করা যায় বলে মনে করি।
Creation’s dearest thought seems to be malice.
Creation’s dearest thought: inducing pain
By casting a shadow of doubt on our sincerity.
Viewing waterfalls gushing forth from nature’s mountains and rocks,I have looked into myself and seen
The pristine water, reddened by the blood of the slain,
The reason why tigers still stalk deer; why I have slain man;Why his blood has coursed through my body;
In the ways of the world I am this fallen man’s brother
He knew me as his younger and yet hardened his heart
And slew me; I sleep on beside the billows of the bloody river,Having murdered my ignorant elder. Resting face on his taut chest,Brings to mind the thought the though we had move on,Vowing that we would enlighten all,
We sleep on knowing there is no light anywhere ...
(Fakrul Alam: Jibanananda Das: Selected Poems with an introduction, Chronology, and Glossary. page117 )
উল্লিখিত কবিতার মূল বাংলা ও ইংরেজি ভাষান্তর-এর একান্ত পাঠ আমাদের সন্দেহাতীত ভাবেই জানিয়ে দেয় যে জীবনানন্দের বিবর্তন চেতনার সরূপ । আমি আবারও বলছি, জীবনানন্দের মতো বিজ্ঞান-সচেতন তথা বিবর্তনে বিশ্বাসী মানুষ বাঙালির মধ্যে বিরল।
শুরুতে বলছিলাম জীবনানন্দের এক Contradiction -এর কথা। রূপসী বাংলায় কবি লিখেছেন:
চারিদিকে শান্ত বাতি, ভিজে গন্ধ, মৃদু কলরব;
খেয়ানৌকোগুলো এসে লেগেছে চরের খুব কাছে;
পৃথিবীর এই সব গল্প বেঁচে রবে চিরকাল;-
এশিরিয়া ধুলো আজ , বেবিলন ছাই হয়ে আছে।
এ রকম একজন বিজ্ঞানসচেতন এবং বিবর্তনে বিশ্বাসী কবি কেন লিখলেন - পৃথিবীর এই সব গল্প বেঁচে রবে চিরকাল ...এ কথা লেখার সময় কোথায় ছিল কবির বিবর্তনবোধ? যুক্তিবোধ? কেন লিখলেন এ রকম অযৌক্তিক বাক্য? বাংলা (পশ্চিম বাংলা+বাংলাদেশ) নিছক গ্রহ বা planet নয় বলে? বাংলা বসুধা-ধরণী-বসুন্ধরা বলে? যৎসামান্য ইতিহাস পাঠ করেছি।
কাজেই জানি যে- এশিরিয়া-বেবিলন সত্যিই ধুলোছাই হয়ে গেছে। প্রাচীন বাংলার সভ্যতা-সংস্কৃতির সূচনা ওই এশিরিয়া-বেবিলন সভ্যতার সমসাময়িক। তবে বাংলা আজও বহমান তার চিরকালীন গল্প নিয়ে ...
চারিদিকে শান্ত বাতি, ভিজে গন্ধ, মৃদু কলরব;
খেয়ানৌকোগুলো এসে লেগেছে চরের খুব কাছে;
ভাবলে অবাক হয়ে হয় এই কবিই লিখেছেন ...
Creation’s dearest thought seems to be malice.
Creation’s dearest thought: inducing pain
By casting a shadow of doubt on our sincerity.
Viewing waterfalls gushing forth from nature’s mountains and rocks,I have looked into myself and seen
The pristine water, reddened by the blood of the slain,
The reason why tigers still stalk deer; why I have slain man;Why his blood has coursed through my body;
জীবনানন্দের এই Contradiction-এর কারণ কি?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।