জন্ম থেকেই জ্বলছি ফিরে এসো
ফিরে এসো সমুদ্রের ধারে,
ফিরে এসো প্রান্তরের পথে;
যেইখানে ট্রেন এসে থামে
আম নিম ঝাউয়ের জগতে
ফিরে এসো; একদিন নীল ডিম করেছ বুনন;
আজও তারা শিশিরে নীরব;
পাখির ঝর্না হয়ে কবে
আমারে করিবে অনুভব!
সপ্তক
এইখানে সরোজিনী শুয়ে আছে- জানি না সে এইখানে শুয়ে আছে কিনা।
অনেক হয়েছে শোয়া- তারপর একদিন চলে গেছে কোন দূর মেঘে।
অন্ধকার শেষ হলে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগেঃ
সরোজিনী চলে গেল অতদূর? সিঁড়ি ছাড়া- পাখিদের মতো পাখা বিনা?
হয়তোবা মৃত্তিকার জ্যামিতিক ঢেউ আজ? জ্যামিতির ভুত বলেঃ আমিতো জানিনা।
জাফরান-আলোকের বিশুষ্কতা সন্ধ্যার আকাশে আছে লেগেঃ
লুপ্ত বেড়ালের মতো; শূন্য চাতুরির মূঢ় হাসি নিয়ে জেগে।
অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ
অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ ,
যারা অন্ধ সব চেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই, প্রীতি নেই, করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
যাদের গভীর আস্থা আছে আজও মানুষের প্রতি,
এখনও যাদের কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয়
মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।
দিনরাত
সারাদিন মিছে কেটে গেল;
সারারাত বড্ড খারাপ
নিরাশায় ব্যর্থতায় কাটবে; জীবন
দিনরাত দিনগতপাপ
ক্ষয় করবার মতো ব্যবহার শুধু।
ফণীমনসার কাঁটা তবুও তো স্নিগ্ধ শিশিরে
মেখে আছে; একটিও পাখি শূন্যে নেই;
সব জ্ঞানপাপী পাখি ফিরে গেছে নীড়ে।
হায় চিল
হায় চিল, সোনালী ডানার চিল,এই ভিজে মেঘের দুপুরে
তুমি আর কেঁদোনাকো উড়ে উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে !
তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ মনে আসে ।
পৃথিবীর রাঙ্গা রাজকন্যাদের মতো সে যে চলে গেছে রূপ নিয়ে দূরে ;
আবার তাহারে কেন ডেকে আনো ?কে হায় হৃদয় খুঁড়ে
বেদনা জাগাতে ভালোবাসে !
হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে
তুমি আর কেঁদোনাকো উড়ে উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে !
সেই দিন এই মাঠ
সেই দিন এই মাঠ স্তব্ধ হবে নাকো জানি-
এই নদী নক্ষত্রের তলে
সেদিনো দেখিবে স্বপ্ন-
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে!
আমি চ’লে যাব ব’লে
চালতাফুল কি আর ভিজিবে না শিশিরের জলে
নরম গন্ধের ঢেউয়ে ?
লক্ষ্ণীপেঁচা গান গাবে নাকি তার লক্ষ্ণীটির তরে ?
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে!
সন্ধ্যা হয়
সন্ধ্যা হয় —চারিদিকে মৃদু নীরবতা
কুটা মুখে নিয়ে এক শালিখ যেতেছে উড়ে চুপে;
গোরুর গাড়িটি যায় মেঠো পথ বেড়ে ধীরে ধীরে;
আঙিনা ভরিয়া আছে সোনালি খড়ের ঘন স্তূপে;
পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে;
পৃথিবীর সব রূপ লেগে আছে ঘাসে;
পৃথিবীর সব প্রেম আমাদের দু;জনার মনে;
আকাশ ছড়ায়ে আছে শান্তি হয়ে আকাশে আকাশে।
পতিতা
আগার তাহার বিভীষিকাভরা, জীবন মরণময়!
সমাজের বুকে অভিশাপ সে যে –সে যে ব্যাধি, সে যে ক্ষয়;
প্রেমের পসরা ভেঙে ফেলে দিয়ে ছলনার কারাগারে
রচিয়াছে সে যে, দিনের আলোয় রুদ্ধ ক’রেছে দ্বার!
সূর্যকিরণ চকিতে নিভায়ে সাজিয়াছে নিশাচর,
কালনাগিনীর ফনার মতন নাচে সে বুকের পর!
চক্ষে তাহার কালকুট ঝরে, বিষপঙ্কিল শ্বাস,
সারাটি জীবন মরীচিকা তার প্রহসন-পরিহাস!
ছোঁয়াচে তাহার ম্লান হয়ে যায় শশীতারকার শিখা,
আলোকের পারে নেমে আসে তার আঁধারের যবনিকা!
সে যে মন্বন্তর, মৃত্যুর দূত, অপঘাত, মহামারী-
মানুষ তবু সে, তার চেয়ে বড় –সে যে নারী, সে যে নারী!
ইহাদেরি কানে
একবার নক্ষত্রের পানে চেয়ে – একবার বেদনার পানে
অনেক কবিতা লিখে চলে গেলো যুবকের দল;
পৃথিবীর পথে-পথে সুন্দরীরা মূর্খ সসম্মানে
শুনিল আধেক কথা – এই সব বধির নিশ্চল
সোনার পিত্তল মূর্তি: তবু, আহা, ইহাদেরি কানে
অনেক ঐশ্বর্য ঢেলে চলে গেলো যুবকের দল:
একবার নক্ষত্রের পানে চেয়ে – একবার বেদনার পানে।
প্রার্থনা
আমাদের প্রভু বীক্ষণ দাওঃ মরি নাকি মোরা মহাপৃথিবীর তরে?
পিরামিড যারা গড়েছিল একদিন- আর যারা ভাঙে- গড়ে-
মশাল যাহারা জ্বালায় যেমন জেঙ্গিস যদি হালে
দাঁড়ায় মদির ছায়ার মতন- যত অগণন মগজের কাঁচা মালে;
যে সব ভ্রমন শুরু হল শুধু মার্কো পোলোর কালে;
আকাশের দিকে তাকায়ে মোরাও বুঝেছি যে সব জ্যোতি
দেশলাইকাঠি নয় শুধু আর- কালপুরুষের গতি;
ডিনামাইট দিয়ে পর্বত কাটা না-হলে কী করে চলে-
আমাদের প্রভু বিরতি দিয়ো না; লাখো লাখো যুগ রতিবিহারের ঘরে
মনোবিজ দাওঃ পিরামিড গড়ে- পিরামিড ভাঙে গড়ে।
সূর্যসাগরতীরে
সূর্যের আলো মেটায় খোরাক কারঃ
সেই কথা বোঝা ভার।
অনাদি যুগের অ্যামিবার থেকে আজিকে ওদের প্রাণ
গড়িয়া উঠিল কাফ্রির মতো সূর্যসাগরতীরে
কালো চামড়ার রহস্যময় ঠাসবুনুনিটি ঘিরে।
চারিদিকে স্থির-ধুম্র -নিবিড় পিরামিড যদি থাকে-
অনাদি যুগের অ্যামিবার থেকে আজিকে মানবপ্রাণ
সূর্যতাড়সে ভ্রূণকে যদিও করে ঢের ফলবান,-
তবুও আমরা জননী বলিব কাকে?
গড়িয়া উঠিল মানবের দল সূর্যসাগরতীরে
কালো আত্মার রহস্যময় ভুলের বুনুনি ঘিরে।
সুবিনয় মুস্তফী
সুবিনয় মুস্তফীর কথা মনে পড়ে এই হেমন্তের রাতে।
এক সাথে বেড়াল ও বেড়ালের-মুখে-ধরা-ইঁদুর হাসাতে
এমন আশ্চর্য শক্তি ছিল ভূয়োদর্শী যুবার।
ইঁদুরকে খেতে খেতে সাদা বেড়ালের ব্যবহার,
অথবা টুকরো হতে হতে সেই ভারিক্কে ইঁদুর;
বৈকুণ্ঠ ও নরকের থেকে তারা দুইজনে কতখানি দূর
ভুলে গিয়ে আধো আলো অন্ধকারে হেঁচকা মাটির পৃথিবীতে
আরো কিছুদিন বেঁচে কিছুটা আমেজ পেয়ে নিতে
কিছুটা সুবিধা করে দিতে যেত- মাটির দরের মতো রেটে;
তবুও বেদম হেসে খিল ধরে যেত বলে বেড়ালের পেটে
ইঁদুর 'হুররে' বলে হেসে খুন হত সেই খিল কেটে কেটে।
আমাকে একটি কথা দাও
আমাকে একটি কথা দাও যা আকাশের মতো সহজ মহৎ বিশাল,
গভীর - সমস্ত ক্লান্ত হতাহত গৃহবলিভুকদের রক্তে
মলিন ইতিহাসের অন্তর ধুয়ে চেনা হাতের মতন,
আমি যাকে আবহমান কাল ভালোবেসে এসেছি সেই নারীর।
সেই রাত্রির নক্ষত্রালোকিত নিবিড় বাতাসের মতো:
সেই দিনের - আলোর অন্তহীন এঞ্জিন চঞ্চল ডানার মতন
সেই উজ্জ্বল পাখিনীর - পাখির সমস্ত পিপাসাকে যে
অগ্নির মতো প্রদীপ্ত দেখে অন্তিমশরীরিণী মোমের মতন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।