ইমরোজ
আজকাল বঙ্গবন্ধুকে নিয়া কথা বলতে গেলে, আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখতে গেলেই আমাদেরকে ভারতের দালাল বলে গালি শুনতে হয়।
ব্লগে স্থূল মস্তিষ্কের লোকের সংখ্যা দিনকে দিন বেড়ে যাচ্ছে। যা হোক, সেই জন্য আমি স্থুল মস্তিষ্কের ব্লগারদের দোষারোপ করি না। দোষ দিতে হলে দোষ দেই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে। শুধু তাই না, আমাদের সার্বিক মেন্টালিটিকে।
সেদিন আমার ব্লগে ঢুকে "শুষ্ক" নামক এক ব্লগার রীতিমত হুমকি দিয়েছেন। আমি কমেন্ট মুছলে নাকি তিনি পোষ্ট আকারে জিনিসটা পেশ করবেন। আমার পূর্বদিনের একটা লেখার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আমাকে ভারতের দালাল বলে আখ্যায়িত করেছেন। অথচ সেই কমেন্টে আমি এমন কোন জিনিস দেখি না, যা দিয়ে আমাকে ভারতীয়দের দালাল বলা চলে। এবং আরও আশ্চর্য হলো, যে পোষ্টে তিনি এই মন্তব্য দিয়েছেন, সেই পোষ্টে আমি কোথাও ভারতের কথা বলি নাই।
ভারতের কথা কেন, আমি এমন কিছুই বলি নাই, যে আমাকে ভারতের দালাল মনে করতে হবে।
প্রিয় ব্লগার শুষ্ক, আপনি হয়তো জানেন না, আমি কোনদিনও কার কমেন্ট ডিলেক্ট করি না। কারণ আমি যুক্তিবাদী মানুষ!
আমি আজকে আমার বক্তব্য তুল ধরতে যাচ্ছি। তার আগে আমার প্রিয় সহব্লগারদের বলছি, আপনারা দয়া করে না জেনে কথা বলবেন না। অনেকদিন আগের একটা পোষ্ট আপনাদের সামনে উপস্থিত করি।
সেইটা দয়া করে পড়ে দেখবেন। Click This Link
আমি আসলে ভারতের দালাল নই। বলতে পারেন আমি অবিভক্ত বাংলার দালাল। আমি ইতিহাস পড়ার সময় কোনদিনও বাংলার পরাধীনতা মেনে নিতে পারতাম না। সেই জন্য বাংলার স্বনাম ধন্য রাজা রাজদের ইতিহাসে যেই কেউ পরাজিত করেছে, আমি তাকেই ধিক্কার দিয়েছি।
বাংলা চিরদিন স্বাধীন ছিল। কিন্তু আজকে তার স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। নীরদচন্দ্র চৌধুরী পাকিস্তান ও ভারতের বিভক্তির পর বলেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র দেখলে কষ্ট লাগে। মনে হয়, বহু কষ্ট করে কেটে কেটে বাধ দিয়ে দিয়ে একটা অঞ্চল দাড় করানো হয়েছে।
বাংলাদেশ অর্থাৎ পূর্বের পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ নাম ধরে স্বাধীন হয়েছে।
কিন্তু বাংলা কখনই এত অল্প জায়গা জুড়ে ছিল না। বাংলার রাজত্ব হলো, বাংলা বিহার উড়িষ্যা নিয়ে। আজ সেই জায়গা আমাদের থাকলে, আমাদের দেশটা অনেক বড় দেশ হতে পারতো।
বড় দেশ, ছোট দেশ, কোন ব্যাপার নয়। কিন্তু সুনামগঞ্জে গিয়ে যখন মানুষ বলে "ঐ দেখো ভারতের খাসিয়া পাহাড়"।
রাগে গা জ্বলতে থাকে। মনে হয় বাংলাদেশের সেনাবাহিনী শালার কি করে? পারে না পূর্বের বাংলাটা দখল করে নিয়ে আসতে। আসামের খাসিয়া পাহাড় ভারতের কবে ছিল? সেইটা তো আমাদের সম্পত্তি।
কোলকাতা, বিহার...উড়িষ্যা যদি আজকে বাংলাদেশের অন্তর্গত হতো, তাহলে ডাইভার্সিফাইড কালচারের একটা দেশ হতে পারত বাংলাদেশ। দুঃখ করে বলতে হত না, ভারতের দার্জিলিং।
ভারতের কবে ছিল দারজিলিং? এটা তো আমাদের জায়গা। অবশ্য এখন তা আর বলতে পারি না।
আমার বরাবরই একটা কথা, বাঙ্গালীকে যে ষড়যন্ত্রে পৃথক করে রাখা হয়েছে, যে ষড়যন্ত্র বৃটিশদের দ্বারা রচিত, সেই ষড়যন্ত্রকে ভেঙ্গে দিতে ইচ্ছে করে। মনে হয়, সমস্তা বাংলা বিহার উড়িষ্যা আমার এক হোক।
বৃটিশ শাসক গোষ্ঠী বাংলাকে বঙ্গভঙ্গ করে আলাদা করেছিল, নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য।
পরবর্তীদের আমাদের রাজনীতিবিদরা পাকিস্তান ও ভারত বিভাগের সময় এদিকে চোখই দেননি। বাংলাকে নিয়ে তাদের চিন্তা করার কোন সময়ই ছিলো না। তখন পাকিস্তান ছিল একটা বড় ফেক্টর।
ভারত আমাদের ঘাড়ে নানা রকমের অবরোধ চাপায়, নানা রকমের উছিলায় আমাদের দেশের মানুষ হত্যা করে। আমাদের বাধ্য হয়ে বলতে হয়, বড় দেশ নাকি বড় ভাইয়ের মত।
সেইদিন বাংলা ভাগ না হলে আজকে আমরাও বিশালাকার দেশ হতে পারতাম। সেই দেশ ভারত পাকিস্তানের চেয়েও শক্তিতে কোন অংশে কম হতো না। আজকে আমাদের ছোট্ট দেশ হবার অপবাদটাও নিজেকে দিতাম না।
পাকিস্তান চেয়েছিল, বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ শিল্প সাহিত্যকে উর্দু দিয়ে ধ্বংস করতে। তারা পারেনি।
কিন্তু ভারত খুব সূক্ষ্মভাবে সেই কাজটি করেছে পশ্চিমবঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালীরা যখন নিজেদেরকে ইন্ডিয়ান বলে পরিচয় দেয় এখন, তখন তারা নিজেদেরকে নিজেরাই প্রতারণা করে।
আমি কখনও ভারতের পক্ষে নই। আমার স্বপ্ন একটা অবিভক্ত বাংলার, যেই স্বাধীনতা হারিয়েছিল সিরাজউদ্দৌলা সেই স্বাধীনতা ফিরে চাইতে আমি সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মত উদ্গ্রীব। আর এই জন্যই আমি পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সাথে মিশতে চাই।
তাদের এই উপলব্ধি করাতে চাই, আসেন আমরা এক হই। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। কারণ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রপাগান্ডা অনেক আগে থেকে শুরু হয়েছে। বলতে পারেন ভারতের স্বাধীনতার পর পর। তারা এখন অনেক এগিয়ে!
ভারত অনেক সফল বাঙ্গালীকে ডিপ্রাইভড রাখার ক্ষেত্রে।
আর বাঙ্গালী নিজেদের মধ্যে বিভেদ করে ভারতের প্রপাগন্ডাকে (দাদারা) মাথা নিচু করে নির্লজ্জের মত মেনে চলে, আর আমরা যারা বাংলাদেশী আমাদের চোখে পশ্চিম বঙ্গ এক অসহ্য বিষ স্বরূপ। অথচ এককালে আমরা এক জাতি ছিলাম!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।