দূর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার, লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশিথে যাত্রিরা হুশিয়ার।
ব্লগে আস্তিক-নাস্তিক বিতর্ক চলে আসছে অনেক দিন ধরে। এ বিষয়ে পোষ্টের অভাব নেই ব্লগে। আমি সাধারণত এই পোষ্টগুলা মিস করি না এমনকি সবগুলা কমেন্টও পড়ে শেষ করার চেষ্টা করি। একজন আস্তিক হিসেবে দু-একটা কমেন্টও করি মাঝে সাঝে।
তবে আমি নিজেকে ঐসকল বিতর্কে অংশগ্রহণ করার মত উপযুক্ত মনে করি না। আমি ততটা জ্ঞানী বা ধার্মীকও না। বরং আমার অনেক কিছু শেখার আছে বিতর্ক থেকে। তাই মেস্কিমাম পোষ্টে নিরব পাঠকের ভূমিকার থাকি।
এই পোষ্টগুলো সাধারণত যুক্তি নির্ভর হয়।
অনেক কিছু শেখার থাকে ঐ সকল পোষ্টে। নাস্তিকদের যুক্তির বিপক্ষে ভালো যুক্তি দাড় করায় এমন অনেক আস্তিক ব্লগার আছে সামুতে। চলে যুক্তি-পাল্টা যুক্তি।
যদিও মেক্সিমাম পোষ্টে তারা শেষ শেষ আর হাল ধরে রাখতে পারেনা।
এস. এম. রায়হান ভাইকে দেখি প্রতিনিয়ত ব্লগে ধর্মের বৈজ্ঞানিক ব্যাক্ষা আবিষ্কারমূলক পোষ্ট দেন।
উনার এই চেষ্টাকে আমি সমর্থন করি। যদিও অনেক সময় উনি ধর্ম, বিজ্ঞান, বাস্তবতা, যুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে তালগোল পাকিয়ে অনেকের কাছে ইতিমধ্যে হয়রান ভাই হসেবে পরিচিত আছেন, তবুও তিনি অন্তত চেষ্টা করেন নাস্তিকদের সাথে যুক্তিতে এগিয়ে যেতে। উনার পোষ্টের যুক্তিগুলো খণ্ডণ করে আবার পোষ্ট আসে। সেই পোষ্টগুলোতেও অনেক আস্তিক ব্লগার নাস্তিকতার বিপক্ষে শক্ত যুক্তি দাড়করায়। অর্থাৎ রায়হান ভাইয়ের অনেক বাকা তেড়া যুক্তিগুলাকে সোজা করে ধর্মের পক্ষে দাড় কারনোর চেষ্টা চলে।
নাস্তিকরাও তাদের যুক্তি দিয়ে ধর্মের অনেক অসারতা তুলে ধরে। যেমন--সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব ও রায়হানের তিন যুক্তি
এই পোষ্টে রায়হান সাহেবের যুক্তিগুলোকে সুন্দরভাবে খন্ডন করা হয়েছে। আস্তিকরাও তাদের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছে।
ব্লগার নরাধমের কথা মনে আছে....?? য কিনা দিনের পর দিন নাস্তিকদের পোষ্টে পড়ে থেকে বিভিন্ন ধর্মীয় যুক্তি উপস্থাপন করতো। যা অনেকের ধর্মীয় কনফিউশন দূর করতে সহায়তা করতো।
Click This Link
Click This Link
এরকম আরো অনেকেই আছে যারা বিভিন্ন পোষ্টে যুক্তি দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করে। আস্তিকতার যৌক্তিকতা তুলে ধরে।
মূল কথা:
ব্লগে আস্তিক-নাস্তিক প্রসঙ্গে কন্টিনিউ ডিস্টার্ব করতে থাকে ব্লগের অতি পরিচিত একটা জাতের কয়েকজন ব্লগার ( আমি তাদের ট্যাগিং করে পোষ্টের গুরুত্ব কমাতে চাচ্ছিনা)। এরা আস্তিকতা বা নাস্তিকতার অ পর্যন্ত জানে না কিন্তু ঐ সকল পোষ্টে তাদের আবাল উস্কানিমূলক কমেন্ট থাকবেই পোষ্টের সাথে সম্পর্কযুক্ত হোক আর না হোক। এই পোষ্টে লেখককে ক্রমাগত আক্রমণ করে কমেন্ট করা হয়েছে।
কিন্তু লেখক এসব এভয়েড করে গেছে অত্যন্ত ধর্য্যের সাথে। (যদিও ওরাকল, সুপ্ত সবুজ, স্বপ্নক সহ কয়েকজন ব্লগার যুক্তি তর্কের পথেই হাটছিলেন)
ব্লগার সাব্বির শওকত শাওন (আমার ভার্সিটির ক্লোজ ফ্রেন্ডদের মধ্যে একজন) কিছুদিন আগে একটা পোষ্ট দিয়েছিল । পোষ্টের শিরোনামেই সে উল্লেখ করেছিল সে নাস্তিক নয়, শুধু জানার ইচ্ছা থেকে পোষ্ট। অনেকে তার প্রশ্নের জবাব দিয়ে যাচ্ছিল সুন্দর ভাবে। প্রশ্নের উত্তর পেয়ে সে সেটেস্ফাইড ছিল।
কিন্তু সাচার , আল বেরুনী , চাটুকার সহ আরো কয়েকজন শাওনকে নাস্তিক ট্যাগিং করা শুরু করে তাকে নাস্তিক, ইসলাম বিব্ধেষী, মহা পন্ডিত, বালুর পাহাড়ের মত জ্ঞানসমৃদ্ধ ইত্যাদি অপবাদ দিতে থাকে। (এই কয়টার ব্লগগুলা ভিজিট করে দেখুন, বুঝতে পারবেন তারা কি জাতের ব্লগার) একজন আস্তিক কে জোর করে নাস্তিক বানানোর মধ্যে স্বার্থকতাটা কি আমার মাথায় ধরে না। এরা নিজেরা কিছু জানতে চায় না, কিছু জানেও না, অন্যদেরও জানার সুযোগ দিতে চায় না। নিজেরা মনের মধ্যে দুনিয়ার কনফিউশন নিয়ে বসে থাকবে, অন্যদের কনফিউশন দূর হউক এটাও তারা চাবেনা। এদের কাছে ধর্ম সংক্রান্ত কোন প্রশ্ন মানেই হল- ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, মহাপন্ডিতি, আবাল, ভারতের দালাল এসব।
এই নোংরামীর বিরুদ্ধে অনেক আস্কিক কিছু বলতে পারে না ট্যাগিং হবার ভয়ে। যেখানে লেখক নিজেকে একজন আস্তিক হিসেবে পরিচয় দেওয়ার পরও এই আক্রমণ সেখানে বাকিদের কি অবস্থা হতে পারে।
এগুলা করেই এরা ক্ষ্যন্ত হয় না। ফেইসবুকে নাকি একটা গ্রুপ খুলা হয়েছে যেখানে ব্লগের নাস্তিক ব্লগারদের গোপন ছবি দেয়া আছে। ঐদিন সোনার বাংলা ব্লগে দেখলাম ট্রয়লাস অব দ্যা সী নামে একজন আরিফুরের ছবি পোষ্ট দিয়ে বলে একে চিনে রাখুন।
তারা নাস্তিকদের হত্যা করার প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে। নাস্তিকদের রক্ত দিয়ে গোসল করার খায়েস প্রকাশ করছে। ব্লগের এক জাতীয়তাবাদি সুশীলকেও দেখলাম সেখানে কমেন্ট করেছে সে নাকি ছবিগুলা পিসিতে সেইভ করে রাখে।
এভাবে আমাদের আস্তিক বিশেষ করে মুসলিমদের বিশ্বের দরবারে কিরূপে উপস্থাপন করা হচ্ছে........?? যুক্তি তর্কের ধারের কাছে না গিয়ে শুধু ট্যাগিং করে, ব্লগে ফ্লডিং করে, গালিগালাজ করে, ইসলাম গেলরে গেল রব তুলে, ফেইসবুকে জঙ্গি গ্রুপ খুলে নিজেদের হিংস্রতা, ভন্ডতা আর নোংরামীর জানান দিচ্ছি। কিছু উম্মাদের কারণে গোটা মুসলীম জাতি কালার হচ্ছি।
বিশ্বে আমাদের নামে যে আত্নঘাতি বদনাম আছে তার যথার্থতা প্রমাণ করছি। আমাদের ধর্ম কি এসব আদৌ সমর্থন করে কিনা..?? এ নিয়ে কিছুদিন আগে তাজুল ইসলাম মুন্না একটা পোষ্ট দিয়েছিল । এই সদ্য এস. এস. সি. পাশ পোলাটার মাথায় এ বিষয়টা খেলে, অথচ এত বড় বড় পাঠাদের মাথায় বিষয়টা কেন ধরে না..??
এই সকল ধর্মান্ধ উম্মাদগুলার আবলামি শুধু মাত্র ইসলাম নয় অন্য যে কোন ধর্মের জন্যও ক্ষতিকর। নাস্তিকদের পোষ্টগুলাতে এখন প্রায় দেখা যায় মাইনাসের চাইতে প্লাসের সংখ্যা বেশি। তাদের পোষ্টগুলোই এখন আলোচনার কেন্দ্রে থাকে।
এটা এক দিনে তৈরী হয়নি। সাধারণ মুসলীম ব্লগারও এখন বিভ্রান্ত। কারণ তারা প্রতিনিয়ত এসব দেখছে। নাস্তিকদের পোষ্ট এবং যুক্তিগুলো তাদের দৃষ্টিতে ভালোভাবেই স্থান পাচ্ছে। আর এই যুক্তিগুলো খন্ডন না করে/ পাল্টা ধর্মীয় যুক্তি না দিয়ে বরং গালাগাল, ট্যাগিং, কোপাকুপি ইত্যাদি করা হচ্ছে।
কয়েকজন আবার কোপাকুপির পাশাপাশি তার জ্ঞানের সীমানা খোলাসা করে দিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ এমন সব যুক্তি তুলে ধরছে যা পড়ে প্রশ্নের জবাব তো দূরের কথা উল্টো আরো প্রশ্ন/ কনফিউশন তৈরি করে দিয়ে যাচ্ছে সুন্দরভাবে। বিষয়টা এমন যে আগল/পাগল/ছাগল সবাইকে এই বিতর্কে অংশ নিতেই হবে। এভাবে ধীরে ধীরে ধর্মীয় অসারতাগুলো তার সামনে স্পষ্ট হতে থাকবে, প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে থাকবে নিজে নিজে। মনের প্রশ্নগুলো নিয়ে সে কোন কমেন্ট করতে পারবে না ট্যাগিং আর মানসম্মানের ভয়ে।
তাই সে অন্য কিনে এসে সেই প্রশ্ন গুলো করবে। তখন তাকে আবার ট্যাগিং করে নাস্তিক আক্ষা দেয়া হবে। আমি নিজেও অনেক নাস্তিক লেখকের সাবলীল উপস্থাপনা, যুক্তি-তর্ক আর ধৈর্য ক্ষমতায় মুগ্ধ হয়ে ঐ সকল পোষ্টে প্লাস দেই।
অনেক সময় ব্লগে উদ্দেশ্যমূলক/ পরিকল্পিতভাবে আস্কিক-নাস্কিক বিরোধ উস্কে দেয়া হয়। একটা শ্রেণী নাস্তিকদের ভাজাকার, ভাকুর, আম্লীগ, বাকশাল ইত্যাদি ট্যাগিং করে রাজনৈতিক নষ্ট উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়।
আবার অনেকে জাতীয় কোন ইস্যু থেকে ব্লগারদের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিতে এই বিতর্কে ঘি ঢালে। এ বিষয়ে পারভেজ আলম ভাই একটা পোষ্ট দিয়েছিল কয়েক মাস আগে। আবার অনেক সময় দেখা যায় কয়েকজন নাস্তিক সরাসরি ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করে কমেন্ট করে। অনেকে আবার মাল্টিনিক ব্যবহার করে পোষ্টে ধর্মীয় বিষয়ে নোংরামী করতে থাকে। তবে অনেষ্টলি সেইড, এ ক্ষেত্রে নাস্তিকদের চাইতে অতি উৎসাহী আস্তিকদের সহনশীলতা অতি নগন্য, নেই বল্লেই চলে।
শেষ কাথাঃ
আমরা জাতি হিসেবে ধর্মভীরু হতে পারি, ধর্মান্ধ না। এ জাতীর অতিক্ষুদ্র কিছু ধর্মান্ধ গোষ্ঠি গোটা জাতীকে ধর্মান্ধ উম্মাদরূপে উপস্থাপনের যে মিশনে নেমেছে তা জাতী/ ধর্মের জন্য কখনই ভালো ফল বয়ে আনতে পারে না। মানুষের জানার ইচ্ছা থাকতেই পারে। অন্ধভাবে বিশ্বাস করা থেকে মনের মধ্যে যুক্তি নিয়ে বিশ্বাস করা হাজার গুনে ভালো। সে বিশ্বাস আরো দীর্ঘস্থায়ী হয়।
এই জানাতে চাওয়ার কারনে নাস্তিক হওয়ার প্রশ্নই আসেনা। তাছাড়া বিনয় ভাবে যদি জানতে চায় তাহলে নাস্তিকেরও অধিকার আছে প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।