বা
একটি দুর্ঘটনা : যুক্তিহীন ভাবে আল্লাহতে আত্মসমর্পন
গতকাল বিকালে যখন বাসায় ফিরলাম তখন বাসার পরিবেশটা ছিল এরকম যে আমার ছেলেটা মলিন মুখে টিভি দেখছে, মুখটা শুকিয়ে একেবারে ছোট হয়ে গেছে, আজ সে রোজা রেখেছে। তার বয়স কত আর আট। এমনিতেই বললাম বাবা তুমি কি রোজা রাখবে। রাজি হয়ে গেল। আমার ছেলে নাম নাফিসুর রহমান নাফিস।
আর মেয়েটি তার ছোট নাম নুসরাত জাহান নূহা (৫)। সেও পড়ন্ত বিকালে বসে বসে কার্টুন দেখছে। আর বাচ্চাদের আম্মু , আমার স্ত্রী কোরআন তিলওয়াত করছিল আমাদের রুমে। আমি অজু করে ফ্রেস হয়ে কিছুক্ষন কুরআন তিলওয়াত শুনে টিভি রুমে গিয়ে বসলাম।
বিড়াল যেমন ঘেষে বসে নুহা তেমনি আমার পাশে এসে বসল।
নাফিসের মলিন চেহারাটা দেখে বললাম- বাবা তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে?
নাফিস বলল- না।
কিছুক্ষন পর বলল- আব্বু রোজা রাখা কি শাস্তি । আল্লাহ কি আমাদের শাস্তি দেন।
তার কথার উত্তর আমার জানা নেই। যা জানি তাই বললাম- না বাবা রোজা রাখা হচ্ছে গরীবের কষ্ট বুঝা যে না খেয়ে থাকলে কেমন লাগে।
যাতে আমরা না খাওয়া মানুষের পাশে গিয়ে দাড়াতে পারি।
নূহা বলল- গরীবরা না খায় কেন? তাদের আম্মু বকা দেয় না, না খেলে।
আমিতো হাসতেই মরি। এতক্ষনে নুহার আম্মুর তেলোআত শেষ হয়েছে। মেয়ের কথা শুনতে ডাকলাম।
দুজনেই বেশ কিছু কাল হাসলাম।
ইফতার করে নামাজ শেষে আমার কর্মক্ষেত্রের দিকে যাচ্ছিলাম। বাসা থেকে মাত্র ১০ মিনিটে স্কুটারে যাওয়া যায়।
জানা দুটি দোয়া-“বিসমিল্লাহি মাজরাহা ওয়া মুরসাহা ইন্না রাব্বি লা গাফুরুর রাহিম” ও “বিসমিল্লাহে তাওয়াক্কালতু আলালাহে ইল্লা আন্তা সোবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজযোয়ালিমিন” পড়ছিলাম। সব সময় যাতায়তের সময় যে পড়ি তা কিন্তু নয়।
দুই দিন আগে একটি স্বপ্ন দেখেছিলাম যে আমি কোন বিপদে পড়েছি। এর পর হতে আমার মনে জানান দিয়েছিল একটি সমুহ বিপদ ঘনিয়ে আসছে। কি হতে পারে সেই বিপদ তাতো জানতাম না। জানলাম কিছুক্ষণের ভিতর।
স্কুটারটি তার স্বাভাবিক গতি হতে একটু দ্রুত চলছিল।
সম্ভবত রাস্তা ফাকা পেয়ে। আমার চোখ বন্ধ। আমি দোয়া পড়ছি।
একটি প্রচন্ড সংঘর্ষ। পায়ে, চোখের নিচে ব্যাথা অনুভব করলাম।
পা থেকে সেন্ডেল খুলে গেছে। সেন্ডেল পড়লাম। বেরিয়ে গেলাম স্কুটার হতে। দাড়িয়ে দেখি চারিদিক হতে লোক ছুটে আসছে। আমি যে স্কুটার থেকে বেরিয়ে এসেছি শুধু আমি যে খানটায় বসে ছিলাম তা অক্ষত আছে আর প্রায় সমস্ত স্কুটারটি ধুমরে মুচরে গেছে।
আমার নাকের উপরটা কেটে গেছে সেখানে হাত দিয়ে দেখলাম রক্ত ঝরছে। নাক চেপে ধরে আমি ছুটে গেলাম ফার্মেসীর দিকে। না তেমন কিছুই হয় নি আমার। সামান্য কয়েক জায়গায় ছুলে গেছে।
এই ঘটনাটি আমি নানা ভাবে বিশ্লেষন করেছি।
আমার স্বপ্ন দেখা, ছেলেকে রোজা রাখতে বলা আর সে রাজি হয়ে যাওয়া, আর বলা যে আল্লাহ কি আমাদের শাস্তি দিচ্ছেন।
যৌবনে নানা যুক্তি-তর্কে হেরে গিয়ে কখনও ঈশ্বর ধারণা থেকে দুরে সরে গিয়েছিলাম। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান স্বেচ্ছায় আংশিক ত্যাগ করেছিলাম।
আজ এই মধ্য বয়সে এসে কিছুতেই আর কোন যুক্তি দাড় করাতে পারলাম না। একেবারে যুক্তিহীনভাবে বারবার আমার মনে হচ্ছে যে, আল্লাহর রহমতে আমি বেচে গেছি।
আল্লাহর কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া আমি সুস্থ আছি আর খবর নিয়ে জেনেছি যে যারা ঐ স্কুটারে ছিল প্রায় সকলেই গুরতর আহত হলেও তারা বেচে আছে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।