আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে করণীয়

আমার ব্লগে মন্তব্য আবশ্যক

কী এই অ্যানথ্রাক্স রোগbr /> অ্যানথ্রাক্স বা তড়কা রোগ ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট গবাদিপশুর একটি অতি তীব্র প্রকৃতির ব্যাকটেরিয়া ঘটিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এই জীবাণু রক্তের সঙ্গে সংযুক্ত অবস্থায় থাকে এবং এই মাসল ফাইব বায়ুর সংস্পর্শে এলেই স্পোর তৈরি করে। এই স্পোর বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারে, যা বিভিন্ন জীবাণুনাশক পদার্থে, আবদ্ধ মাটিতে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় স্যালাইন ওয়াটার ও লবণযুক্ত বা লবণজাত চামড়াতে টিকে থাকতে পারে। এই অ্যানথ্রাক্স স্পোর মাটির মধ্যে ৬০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে অ্যানথ্রাক্স রোগের তথ্য পাওয়া যায়।

বাংলাদেশে গবাদিপশু (গরু, ছাগল, ভেড়া), হাতি ও মানুষের দেহে এ রোগ হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে গবাদিপশুর এ রোগ মহামারী আকারে হওয়ার অনেক তথ্য আছে। ইদানিং দেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু জেলায় এ রোগে মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। অ্যানথ্রাক্স বা তড়কা রোগের লক্ষনসমূহbr /> এই রোগ হঠাত্ আক্রান্ত প্রাণীর তাপমাত্রা বেড়ে ১০৬ ডিগ্রি থেকে ১০৭ ডিগ্রি পর্যন্ত হয়। শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়া, পেট ফেঁপে যাওয়া, সেপ্টিসেমিয়াসহ প্রাণীর হঠাত্ মৃত্যু এ রোগের প্রধান লক্ষণ।

সাধারণত খরার পর বৃষ্টিপাত হওয়ায় গরম ও স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় তড়কা বা অ্যানথ্রাক্স রোগের বিস্তার ঘটে। আর বাংলাদেশের আবহাওয়া এবার অ্যানথ্রাক্স রোগের অনুকূলে। তাই এই রোগ সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হওয়া, সবাইকে অবহিত করা ও জানানো একান্ত প্রয়োজন। কারণ এটি একটি জুনোদি রোগ, যা মানুষ থেকে গবাদিপশুতে ও গবাদিপশু থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। যেভাবে অ্যানথ্যাক্স ছড়ায়:- গরু, ছাগল ও ভেড়ার ক্ষেত্রে এটি একটি মারাত্মক রোগ।

তবে মানুষের এই রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর ঘটনা নেই বললেই চলে, তবে ফুসফুসে আক্রান্ত হলে মানুষের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। সাধারণত আক্রান্ত মৃত প্রাণী উন্মুক্ত স্থানে ফেলে দিলে বা পানিতে ফেলে রাখা হলে মাংস আহারী প্রাণী দ্বারা এই রোগটি ছড়ায় এবং এই রোগের জীবাণু ও স্পোর মাটিতে বিস্তার লাভ করে। তাছাড়া জীবাণুযুক্ত খাদ্য বা পানি গ্রহণের মাধ্যমে এই রোগজীবাণু সংক্রমিত হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে চামড়া ও উলের কারখানায় পশমের মাধ্যমে ও শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শ্রমিকের দেহে এ রোগের জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। সুস্থ পশুকে আক্রান্ত পশুর সংস্পর্শে রাখলে এই রোগ সংক্রমিত হতে পারে।

অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত গবাদিপশু জবাই করে মাংস কাটার সময় এই রোগ মাংস কাটার কাজে নিয়োজিত মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। এছাড়াও এই রোগে আক্রান্ত মৃত গবাদিপশুর চামড়া ছাড়ানো, মাংস বা রক্তের সংস্পর্শে মানুষের এই রোগ হতে পারে। অ্যানথ্রাক্সের প্রকারভেদ ও ভয়াবহতা:- অ্যানথ্রাক্স রোগের সুপ্তিকাল নির্ণয় করা অসম্ভব। কারণ জাবরকাটা প্রাণীতে অ্যানথ্রাক্স রোগ সাধারণত দুই ধরনের হতে পারে। যথা—১. অতি তীব্র প্রকৃতির, ২. তীব্র প্রকৃতির অতি তীব্র প্রকৃতির রোগের লক্ষণের ক্ষেত্রে গবাদিপশু কোনো উপসর্গ ছাড়াই হঠাত্ পড়ে মারা যায়।

যদি গবাদিপশু মারা যাওয়ার আগে পরীক্ষা করার সময় পাওয়া যায় তাহলে শরীরে তীব্র জ্বর ১০৬ থেকে ১০৮ডিগ্রি পর্যন্ত থাকে, ঘন ঘন শ্বাস নেয়, শ্বাসকষ্ট হয়, শরীরের মাংসে কম্পন দেখা যায় ও মাংসের মিউকোসায় রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। এরপর শরীরে কাঁপুনি দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে গবাদিপশু মারা যায়। মৃত্যুর পর পেট ফুলে যায়, শরীরের বিভিন্ন ঘধঃঁত্ধষ ড়ঢ়বহরহম যেমন—যোনীপথ, মলদ্বার, নাসারন্ধ্র ও মুখ দিয়ে কালচে রক্ত নির্গত হয় যা স্বাভাবিক রক্তের মতো জমাট বাঁধে না। আবার তীব্র প্রকৃতির রোগের লক্ষণের ক্ষেত্রে গবাদিপশু ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এক্ষেত্রে শরীরের তাপমাত্রা ১০৪-১০৭ ডিগ্রি পর্যন্ত হয়।

শ্বাসকষ্ট হয়, খাদ্যে অরুচি, পাতলা মিউকাসযুক্ত পায়খানা হয়, পেট ফেঁপে যায়, শরীরের মাংসে কম্পন দেখা যায়। গবাদিপশু দুর্বল হয়ে মারা যায়। মানুষ আক্রান্ত হলে:- অ্যানথ্রাক্স জীবাণু দ্বারা মানুষ আক্রান্ত হলে ম্যালিগন্যান্ট কার্বাঙ্কেল নামক রোগ হতে পারে। যার লক্ষণ প্রথমে শরীরের স্কিন বা চর্মের ওপর ফোসকা পড়বে, পরে কালো হয়ে ফোসকা ফেটে ক্ষতের সৃষ্টি হবে, ক্ষতের চারদিকে ওহভষধসসধঃরড়হ বা ফুলে যায়, শরীরে জ্বর ও ব্যথা অনুভূত হবে, ক্ষতের চারপাশে চুলকাবে ও অস্বস্তি বোধ করবে। তবে ভালোভাবে অভিজ্ঞ ডাক্তারের চিকিত্সা নিলে ১ থেকে ২ সপ্তাহে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে।

সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিশেষ করে এই রোগের জীবাণু গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া হওয়ায় পেনিসিলিন জাতীয় ওষুধ প্রয়োগে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে অতিতীব্র প্রকৃতিতে পেনিসিলিন-জি ৬০ লাখ থেকে ৮০ লাখ ইউনিট শিরায় ৬ ঘণ্টা অন্তর ৩ থেকে ৪ বার দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তাছাড়া প্রোকেইন পেনিসিলিন ও বেনজাইল পেনিসিলিন ৮ ঘণ্টা অন্তর মাংসে ৪ থেকে ৬ বার দিয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। এছাড়াও পেনিসিলিনের সঙ্গে সাপোর্টিং চিকিত্সা হিসেবে এন্টিহিসটামিন জাতীয় ওষুধ ৫ থেকে ৬ সিসি মাংসে দিনে একবার করে ৩ দিন দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রে যদি পাওয়া যায় অ্যানথ্রাক্স এন্টিসিরাম ও এন্টিবায়োটিক একসঙ্গে ইনজেকশন করলে চিকিত্সার ক্ষেত্রে ভালো ফল পাওয়া যায়।

অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে করণীয়:- এই রোগে আক্রান্ত মৃত গবাদিপশু মাটিতে ৪ ফুট গর্ত করে কলিচুন ছিটিয়ে মাটিচাপা দিয়ে পুঁতে রাখতে হবে। তাহলে আর এ রোগজীবাণু সংক্রমিত হতে বা ছড়াতে পারবে না। এছারাও অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে গবাদিপশুর স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। নোংরা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় গবাদিপশু রাখা পরিত্যাগ করতে হবে। আক্রান্ত মৃত গবাদিপশু অযথা কাটাছেঁড়া করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

অন্যথায় এ জীবাণুর স্পোর বায়ুর সংস্পর্শে অতি সংবেদনশীল স্পোরে রূপান্তরিত হবে। গবাদিপশুকে নিয়মিত রোগ প্রতিরোধের টিকার ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশে অ্যানথ্রাক্স স্পোর ভ্যাকসিন পাওয়া যায় এবং এই ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা অনেক ভালো ও বিশ্বমানের। এই ভ্যাকসিন দেয়ার পর অর্থাত্ এন্টিজেন দিলে এন্টিবডি তৈরি হতে, প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হতে ২ সপ্তাহ অর্থাত্ ১৪ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে এবং এর কার্যক্ষমতা বা প্রতিরোধ ক্ষমতা ১ বছর পর্যন্ত থাকে। তাই গবাদীপশূকে বছরে অন্তত: একবার অ্যানথ্রাক্স ভ্যাকসিন দিতে হয়।

এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধক ভ্যাকসিন আছে যেমন—কার্বোজো ভ্যাকসিন, স্টার্ন ভ্যাকসিন ইত্যাদি এই রোগ প্রতিরোধে ব্যবহার করা হয়। ভ্যাকসিন ব্যবহারের মাত্রা:- বাংলাদেশে অ্যানথ্রাক্স স্পোর ভ্যাকসিন গবাদিপশুর ক্ষেত্রে চামড়ার নিচে ১ সি.সি. মাত্রায় বছরে একবার দেয়া হয়। ছাগল ও ভেড়ার ক্ষেত্রে আধা সি.সি. করে বছরে একবার চামড়ার নিচে বা লেজের নিচে চামড়ায় দিতে হয় এবং এই ভ্যাকসিন ৪ডিগ্রি তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয় ও ভ্যাকসিন ব্যবহার করার আগে বোতল ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিতে হয়। জানিয়েছেন:–ডা. এসএম আমিনুল ইসলাম, ভেটেরিনারি সার্জন, পশুসম্পদ অধিদফতর, ঢাকা Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.