২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শেখ হাসিনার সমাবেশে হামলার ওই দিনটি স্মরণে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ জাতিকে সতর্ক করে বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে বিপন্ন করার জন্য প্রতিক্রিয়াশীল চক্র এখনো সক্রিয়।
শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো ওই হামলায় তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও নিহত হন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ অন্তত ২৩ জন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার বাণীতে ওই হামলার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়ার তাগিদ দেন।
এই বিচারের অঙ্গীকার করে বাণী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রাণে বেঁচে গেলেও যার শ্রবণইন্দ্রীয় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওই হামলায়।
ওই হামলার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে এর বিচারের আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।
নানা কর্মসূচিতে তারা দিনটি পালন করছে।
বুধবার সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ বেদীতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুল দেবেন।
আওয়ামী লীগের সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতারাও এই কর্মসূচিতে যোগ দেবে।
প্রধানমন্ত্রী গ্রেনেড হামলায় নিহত শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে আলোচনা সভায় অংশ নেবেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “হামলাকারীদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
যাতে করে দেশ ও জাতির ইতিহাসে এরকম দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। ”
তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে বিপন্ন করার জন্য প্রতিক্রিয়াশীল চক্র এখনো সক্রিয়। তাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ ও ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মূল লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, শান্তি ও উন্নয়নের ধারাকে স্তব্ধ করে দেয়া। হত্যা, ষড়যন্ত্র, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও দুঃশাসনকে চিরস্থায়ী করা।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধূলিস্যাৎ করা। বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করা।
“এ ধরনের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট হত্যাকারীদের রক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। হামলাকারীদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়।
অনেক আলামত ধ্বংস করে। তদন্তের নামে এই নারকীয় ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে। ”
“তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, বিএনপি-জামাত জোটের অনেক কুশীলব এই হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। কোন ভবনে বসে কারা এই হামলার নীলনকশা তৈরি করেছিল, তা স্পষ্ট হয়েছে। ”
শেখ হাসিনা বলেন, “২১ আগস্টের হামলাকারী, পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা এবং তাদের মদদদাতাদের সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে দেশ থেকে হত্যা, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের চির অবসান হবে।
আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। ”
আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে এই হামলা হয়েছিল দাবি করে আওয়ামী লীগের বিবৃতিতে বলা হয়,
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে কোনো আইনানুগ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং তদন্তকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপপ্রয়াস চালায়।
“এই ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডে তদানীন্তন সরকারি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী জঙ্গিগোষ্ঠী ছাড়াও বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শীর্ষস্থানীয় নেতা-কর্মীরাও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল। ”
হামলার লক্ষ্য ছিলেন শেখ হাসিনা
সন্ত্রাসের প্রতিবাদে আয়োজিত ওই সমাবেশে শোভাযাত্রার আগে সমাবেশের প্রধান অতিথি শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ হওয়ার ঠিক আগে উপর্যুপরি গ্রেনেড হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।
সেদিন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রা হওয়ার কথা ছিল। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শেষ হবে ধানমন্ডির রাসেল স্কয়ারে। বিকাল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয় পূর্ণ হয়ে যায়।
আগে থেকেই বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের মাঝখানে একটি ট্রাক এনে মঞ্চ তৈরি করা হয়। শোভাযাত্রার আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।
বিকাল ৫টার কিছুক্ষণ আগে শেখ হাসিনা আসেন, বক্তৃতা শুরু করেন অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই।
শেখ হাসিনা তার বক্তৃতা শেষ করে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে শেষ করার আগেই পরপর দুটি বিস্ফোরণের শব্দ হয়, এরপর একটির পর একটি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হতে থাকে, লুটিয়ে পড়েন অনেকে।
একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণে রক্তে ভেসে যায় রাজপথ। রাজধানী জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে ওঠার পর দেশজুড়ে ওঠে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড়।
ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী আর দলীয় নেতা-কর্মীরা মানববর্ম তৈরি করে আগলে রেখেছিলেন শেখ হাসিনাকে। তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে তার বুলেটপ্রুফ গাড়িতে তুলে ধানমণ্ডির সুধা সদনে নিয়ে যান।
গ্রেনেডের স্প্লিন্টারে আহত হন আওয়ামী লীগের প্রায় সব কেন্দ্রীয় নেতাসহ পাঁচ শতাধিক কর্মী-সমর্থক ও অন্য মানুষ। স্থায়ীভাবে পঙ্গু হন শতাধিক ব্যক্তি। আহত হন ছয় জন সাংবাদিক।
গ্রেনেড হামলার পর সরকারের পক্ষ থেকে বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের নেতৃত্বে একটি এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আওয়ামী লীগ এই তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে।
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির বেসরকারি তদন্ত কমিটিও একটি প্রতিবেদন দিয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, হামলার লক্ষ্য ছিলেন শেখ হাসিনা।
দেশীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ছাড়াও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা (এফবিআই), আন্তর্জাতিক পুলিশ (ইন্টারপোল) চাঞ্চল্যকর এ হামলার তদন্তে দু’দফায় ঢাকা আসে।
তবে তারা তদন্ত শেষ না করেই ফিরে যান।
অভিযোগ রয়েছে, দেশীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অসহযোগিতার কারণেই আন্তর্জাতিক এই সংস্থাগুলো গ্রেনেড হামলার তদন্তে তেমন কিছু করতে পারেনি।
২১ আগস্টের হামলায় নিহতেদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ সেন্টু, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ল্যান্স কর্পোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম (সকলের কাছে তিনি আদা চাচা নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন), মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী সুফিয়া বেগম, মাদারীপুরের যুবলীগ নেতা লিটন মুন্সী ওরফে লিটু, নারায়ণগঞ্জের রতন সিকদার, মহানগর রিকশা শ্রমিক লীগ নেতা মো. হানিফ, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী হাসিনা মমতাজ রীনা, সরকারি কবি নজরুল ইসলাম কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মামুন মৃধা, ঢাকা মহানগর যুবলীগ নেতা বেলাল হোসেন, আমিনুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগকর্মী আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারী, যুবলীগ নেতা আতিক সরকার, শ্রমিকলীগ কর্মী নাসির উদ্দিন সর্দার, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেত্রী রেজিয়া বেগম, আবুল কাসেম, জাহেদ আলী, মমিন আলী, যুবলীগ নেতা শামসুদ্দিন আবুল কালাম আজাদ এবং ইছহাক মিয়া।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।