-এই তুমি আমাকে রূপা ডাক কেন? আমার নাম তো রূপা না!
-ঐ নামে ডাকলে তুমি রাগ কর?
-রাগ করব কেন? আমিও তো তোমাকে জান বলে ডাকি। এমনি জানতে চাইলাম।
-আমার ভাল লাগে। তাছাড়া ঐ নামটা আমার কাছে অনেক দামী। তোমাকে খুব মানায়।
-রূপার চেয়ে সোনা তো আরো বেশী দামী।
-হ্যা তা ঠিক। যেকোন জিনিষের স্বার্থকতা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে। তুমি যেভাবে দেখছ তাতে সোনা অনেক দামি। কারো খারাপ দৃষ্টি থাকলে এই শব্দটা একটা গালি।
-হয়েছে হয়েছে আর জ্ঞান দিতে হবে না…
-আমি জ্ঞান দিচ্ছি না। কাউকে জ্ঞান দেবার ক্ষমতা আমার নেই। আমি শুধু তোমাকে রূপা নামে ডাকার কারণটা বলছি।
-আচ্ছা শুনি তাহলে তোমার রূপা রহস্য!
-তুমি অনেক সুন্দরী। তুমার রুপ আমার কাছে পৃথিবীতে অদ্বীতিয়।
-বুঝেছি আর বলতে হবে না, চল এবার উঠি…
ঠিক আছরের সময়ের আগ মুহুর্তটায় এসে এক স্বর্গীয় রুপ ধারন করে পুরো বোটানিকেল গার্ডেন। জিনাত আর রাতুল গত দুই বছর থেকে এই মোহনীয় রূপটার স্বাক্ষ্য বহন করে আসছে। পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক প্রেমিক প্রেমিকারাই একে অপরকে একেকটা আদুরে নামে সম্বোধন করে। এটা গভীর প্রেমের একটা বহিঃপ্রকাশ। জিনাত আর রাতুলের বেলাও ব্যতিক্রম হয় নি।
জিনাত আর রাতুলের বিয়ে হয়েছে সম্পূর্ণ পারিবারিকভাবে। ২ বছরের সুখের সংসার। গগনচুম্বি প্রেম। রাতুল একটা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের
লেকচারার। জিনাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে গতবছর।
রাতুল একবার জিনাতকে বলেছিল ''তুমি যদি চাকরী করতে চাও আমি বাধা দেব না '' জিনাত উত্তর দিয়েছিল '' আমার লেখাপড়ার উদ্দ্যেশ্য ছিল জ্ঞানার্জন। চাকরী করার কোন শখ আমার নেই, তুমি যদি চাও তাহলে করব '' রাতুল তার প্রিয়তমাকে কোন কষ্ট করতে দিতে চায় না। তাই সিদ্ধান্তটা সম্পূর্ণ জিনাতকেই নিতে বলল। তার জন্য যেটা ভালো সেটাই বেছে নেবে।
জিনাত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
চাকরী করবে না। জিনাত এখন বাচ্চা নিতে চায়। রাতুলকে বলেছে। বাচ্চা ছাড়া নাকি নারী জন্ম স্বার্থক হয় না। মাতৃত্বেই নারীত্বের পূর্ণতা।
জিনাতের বিশ্বাস এটা। রাতুল জিনাতকে কখনো নিরাশ করে নি। তাই জিনাতের এই সিদ্ধান্তটাও মেনে নিল।
গত ৩ দিন থেকে হাসপাতালে জিনাত। রাতুল অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে।
৩ দিন ধরে জিনাতের পাশেই আছে। জিনাতের বাচ্চা হবে। রাতুলের খুব টেনশান হচ্ছে। জিনাতকে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে। যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে জিনাত।
রাতুলের চোখ বেয়ে দুগন্ড জল গড়িয়ে পড়ল।
ওটিতে নিয়ে গেছে জিনাতকে। এই মুহুর্তে রাতুলের মাথায় নানা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। নিজের মায়ের কথা মনে হল। রাতুলের বুকটা ছ্যাত করে উঠল।
জিনাতের কিছু হবে না তো? রাতুল তার মা কে কোনদিন দেখেনি। তাকে জন্ম দিতে গিয়ে তার মা মারা গেছেন। মাথায় যত চিন্তা চেপেছে। না জানি মায়ের কত কষ্ট হয়েছিল। জিনাতইবা কি করছে? কত কষ্ট হচ্ছে কে জানে!
ঘোর লাগা অবস্থায় কতক্ষন ছিল সে হিসেব রাতুলের নেই।
হয়ত আরো অনেক দীর্ঘ হত তার ভাবনার পরিসীমা। তন্ময় কাটল নার্সের ডাকে।
-আপনি মিষ্টার রাতুল? মিসেস জিনাতের স্বামী?
-হ্যা! আমার জিনাত কেমন আছে?
-পেশেন্টের রক্ত লাগবে। ও নেগেটিভ! আমাদের ব্লাড ব্যাংকে নেই। আধাঘন্টার ভিতরে ব্যবস্থা না করলে রোগীকে বাচানো সম্ভব হবে না।
রাতুলের মনে হল কে যেন তার মাথায় ৫ কেজি ওজনের হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেছে। কি হবে এখন। রক্ত কোথায় পাবে। ফ্রেন্ড, কলিগ, আত্নীয় সবার সাথে যোগাযোগ করল। এই গ্রুপের রক্ত কারো নেই।
যে কয়টা ব্লাড ব্যাংক ছিল জানাশোনা সব দেখা হয়ে গেছে। কোথাও রক্তের দেখা নেই। পাগলের মত ফিরে আসল হাসপাতালে। নার্স অপেক্ষায় ছিল। খালি হাতে দেখেও রাতুলকে জিজ্ঞেস করল '' রক্তের ব্যবস্থা হয়েছে? '' রাতুল নার্সের দিকে বোকার মত চেয়ে আছে।
মোবাইল বেজে চলছে। কিন্তু রাতুল বসে আছে জীবন্ত মূর্তির মত। '' নার্স বলল আপনার ফোন '' রাতুল ফোন রিসিভ করল। ওপাশ থেকে রাতুলের বন্ধু বলল
-তোর রক্ত জোগাড় হয়েছে! রাতুল লাফ দিয়ে উঠল।
পাগলের মত জিজ্ঞেস করল
-কোথায়? কে দিবে? এখন কোথায় সে?
-আমার এক বন্ধু দিবে।
এখন মগবাজার আছে। বেরিয়ে পড়েছে ও। হাসপাতালে পৌছাতে মিনিট দশেক লাগবে। মোটর সাইকেলে করে আসছে।
রাতুল যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়্ছে।
রক্ত দেওয়া হয়েছে। ফুটফুটে একটি বাচ্চা হাতে নিয়ে নার্স বেরিয়ে এল। রাতুলের কোলে দিয়ে বলল। '' সরি অনেক দেরি করে ফেলেছেন। রোগীকে বাচাতে পারলাম না ''
স্ট্রেচার ঠেলে নিয়ে একজন আয়া বেরিয়ে আসল।
উপরে সাদা কাপড়ে ঢাকা উচু মত কিছু একটা। রাতুল জানে কাপড়ের নিচে কি আছে। কিন্তু সে তো তার রূপাকে এই রূপে দেখতে চায় নি। তাহলে কেন এমন হল???
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।