আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলাম নামধারী এনজিও সংখ্যা প্রচুর মনিটর হচ্ছে ৫৫৬ অ্যাকাউন্ট

বাঙ্গাল মানুষ

জঙ্গি তৎপরতায় সহায়তা করার অভিযোগে ৫৫৬টি অ্যাকাউন্ট সন্দেহের তালিকায় এনেছে কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্স। জানা গেছে, ৪০টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে এ লেনদেন হয়েছে। জঙ্গি তৎপরতা বন্ধ, অবৈধ হুন্ডি, বিদেশে অর্থ পাচার, মানি লন্ডারিং দমন ও প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদারে গঠিত কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্স এসব অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করেছে। সন্দেহের তালিকায় নেয়া অ্যাকাউন্টের কোনো কোনোটির মাধ্যমে জঙ্গি তৎপরতায় সহায়তা, আবার কোনো কোনোটির মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থায়নের ঘটনা ঘটেছে বলে টাস্কফোর্স তথ্য পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, সন্দেহভাজন এসব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে শিগগিরই দুদককে চিঠি দেওয়া হবে।

বর্তমানে এসব অ্যাকাউন্ট নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারকৃত জঙ্গিরা জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, অস্ত্র, গোলাবারুদ, বোমা তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে তাদেরকে বিদেশ থেকে অর্থ সহায়তা করা হতো। সম্প্রতি গ্রেফতারকৃত জেএমবি আমির সাইদুর রহমান পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ইসলামী ব্যাংক ও আল আরাফাহ ব্যাংকের মাধ্যমে জেএমবির আর্থিক লেনদেন করা হয়েছে। আলকায়দা তাদের অর্থ পেতে সহায়তা করেছে। এই অর্থ কুয়েত, সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে তাদের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হতো। সাইদুর রহমান আরো জানান, শায়খ আবদুর রহমান, বাংলাভাই অর্থ সংগ্রহ প্রাথমিকভাবে করলেও এখন কমবেশি প্রায় সকল ইসলামী সংগঠন ও এনজিও এ অর্থ সংগ্রহ করছে।

এই অর্থ অস্ত্র, গোলাবারুদ, বোমা তৈরির সরঞ্জাম ক্রয়, ধর্মীয় বই-পুস্তক-লিফলেট তৈরিতে খরচ করা হয়। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে বাংলাদেশ সরকার ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠনকে অর্থ সহায়তা করার বিষয়টি তদন্ত করা শুরু করে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংস্থা ও প্রভাবশালী ইসলামী রাষ্ট্রের ব্যক্তি বিভিন্ন দেশের ইসলামী এনজিও জঙ্গিবাদে অর্থায়ন করতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। এক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক অব বাংলাদেশ জঙ্গি অর্থায়নে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বহির্বিশ্ব থেকে অর্থ সহায়তা পেয়েছে এবং বর্তমানে যাদের অ্যাকাউন্ট মনিটরিং করা হচ্ছে সে রকম প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে আদর্শ শিক্ষা পরিষদ. এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রাস্ট আল ফারুক সোসাইটি খুলনা, আল ইনসান ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আল মারকাজুল ইসলাম, আল মুদারাবা ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, মজিদ সোসাইটি, বায়তুল আমান ট্রাস্ট, আল আমিন ট্রাস্ট, আল হারমাইন ইসলামিক ফাউন্ডেশন, আল ইসলাহ ইসলামী ট্রাস্ট, আল মানার ট্রাস্ট, দারুল ইফটা, দারুস সালাম সোসাইটি, ফয়সাল ইনভেস্টমেন্ট ফাউন্ডেশন, আল হেরা একাডেমী, ইবনে সিনা ট্রাস্ট, ইনস্টিটিউট অব হায়ার ইসলাম লার্নিং, ইন্টারন্যাশনাল রিলিফ অর্গানাইজেশন, বাংলাদেশ কৃষি কল্যাণ সমিতি, বাংলাদেশ ইসলামিক একাডেমী, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, বাংলাদেশ কুরআন লার্নার সোসাইটি, দারুল আরাবিয়া ট্রাস্ট, অ্যাসোসিয়েশন অব মুসলিম ওয়েল ফেয়ার এজেন্সি ইন বাংলাদেশ, ইসলাম প্রচার সমিতি, ইসলামী ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ইসলামী পাঠাগার ও সমাজকল্যাণ পরিষদ, ইসলামী সমাজকল্যাণ সমিতি, ইসলামিক একাডেমী, ইসলামিক এইড বাংলাদেশ, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট সেন্টার, ইসলামিক ইকোনমিক রিসার্চ ব্যুরো, ইসলামিক এডুকেশন সোসাইটি, ইসলামিক রিলিফ এজেন্সি, ইসলামিক ওয়ার্ল্ড কমিটি, জেবাল ই নূর ফাউন্ডেশন, কুয়েত জয়েন্ট রিলিফ কমিটি, মধুমতি একাডেমী, তামিরুল মিল্লাত ট্রাস্ট, ওয়ার্ল্ড এসেম্বলি ফর মুসলিম ইয়ুথ ও রাবিতা আলম আল ইসলামী।

ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় ২০০৬ সালে অভিযোগ করে যে, বাংলাদেশে ১৪৮টি অস্ত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সে সময় এর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ খ-ন করা হয়নি। সে সময় একই ধরনের অভিযোগ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। সে সময় তারা অভিযোগ করে যে, ৪৫০টি বেসরকারি সংস্থার নিয়ন্ত্রক মৌলবাদীরা। এই ৪৫০টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দেশে মৌলবাদ চর্চায় সহায়তা করছে।

র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, ৪৫০টি সংস্থার ব্যাংক অ্যাকাউন্টও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। গত ১৪ জুন টাস্কফোর্সের ৫০তম সভায় জঙ্গি অর্থায়ন, অবৈধ হুন্ডি ব্যবসা ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে ৫৫৬টি অ্যাকাউন্টের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়। টাস্কফোর্স সূত্রে জানা যায় ৫৫৬টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সন্দেহজনক ও অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে। এ ব্যাংকে ২১৯টি অ্যাকাউন্টে এধরনের লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া ইসলামী ব্যাংকে ৬৫টি, উত্তরা ব্যাংকে ৩২টি, আরব বাংলাদেশ ব্যাংকে ৩০টি, পূবালী ব্যাংকে ৩৩টি, জনতা ব্যাংকে ১১টি, এইচএসবিসি ব্যাংকে ২৬টি, আইএফআইসি ব্যাংকে ১২টি, সোনালী ব্যাংকে ১৫টি, ব্র্যাক ব্যাংকে ৭টি এবং দি প্রিমিয়ার ব্যাংকে ১৪টি সন্দেহজনক ও অস্বাভাবিক লেনদেনের অ্যাকাউন্ট পাওয়া গেছে।

সন্দেহভাজন অ্যাকাউন্ট মনিটরিং প্রশ্নে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি অর্থায়নে একাধিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছিল। টাস্কফোর্স এটা তদন্ত করছে। তাতে ৪০টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৫৫৬টি অ্যাকাউন্ট সন্দেহজনক বলে চিহ্নিত হয়েছে। এগুলো মনিটরিং করা হচ্ছে। তাছাড়া চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের অ্যাকাউন্টও মনিটরিং করা হচ্ছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.