আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এনজিও : জংগীবাদের অন্যতম আশ্রয় !



বাংলাদেশে বেশ কিছু এনজিও এখন ওয়াচলিষ্টে। বলা হচ্ছে ,এনজিওর একটা বিশেষ মহল অনেক অর্থ ঢালছে বাংলাদেশে মৌলবাদের বিস্তারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর জানিয়েছেন , যে কারো একাউন্ট সরকার জব্দ করার এখতিয়ার রাখে । এবং করবেও । পড়ুন এই রিপোর্ট টি ... তালিকায় বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট আরও ১০০ এনজিও ৩৩৩ এনজিওর নিবন্ধন বাতিল শরিফুল হাসান | তারিখ: ০৪-০৮-২০১০ প্রথম আলো বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি (বিসিডব্লিউএস) নামে একটি বেসরকারি সংস্থার নিবন্ধন বাতিল করেছে এনজিও-বিষয়ক ব্যুরো।

সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পোশাক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে ইন্ধন ও শ্রমিক অসন্তোষে মদদ দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধন বাতিল করা হয় গত জুনে। ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালে কর্মজীবী মায়েদের শিশু পরিচর্যার একটি প্রকল্পের অনুমোদন নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ বছর পর এনজিও ব্যুরোতে নবায়নের কথা থাকলেও সংস্থাটি তা করেনি। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি রাষ্ট্রবিরোধী কাজে জড়িয়ে পড়ে বলে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা জানতে পারে। পরে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া যায়।

গত চার মাসে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট এ রকম ৩৩৩টি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) নিবন্ধন বাতিল করেছে এনজিও-বিষয়ক ব্যুরো। দীর্ঘদিনেও সনদ নবায়ন না করার কারণেই মূলত নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যুরোর উপপরিচালক জাফর উল্লাহ খান। গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে তিনি জানান, একইভাবে আরও শতাধিক এনজিওর নিবন্ধন বাতিলের প্রক্রিয়া চলছে। খুব শিগগির এগুলোর নিবন্ধন বাতিল হবে। এনজিও খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার অংশ হিসেবেই এগুলোর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ব্যুরোর একাধিক কর্মকর্তা জানান, বছরের পর বছর ধরে এনজিওগুলোর সামগ্রিক কার্যক্রম তদারক করা হচ্ছিল না। এ কারণেই ব্যুরো প্রতিষ্ঠার পর ১৯ বছরে মাত্র ৫৬টি এনজিওর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু এক বছর ধরে সার্বিকভাবে এনজিওগুলোর তদারকির চেষ্টা চলছে। সেটি করতে গিয়ে দেখা যায়, বছরের পর বছর ধরে নিবন্ধন ছাড়াই এনজিওগুলো চলছে। এর পরই সেগুলোর নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়।

ব্যুরোর একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, নিবন্ধন বাতিল হওয়া এনজিওগুলোর কার্যক্রম নিয়ে নানা প্রশ্ন ছিল। দীর্ঘদিনেও এগুলো নিবন্ধন নবায়ন করায় আদৌ সেগুলো চলছে কি না, কিংবা কীভাবে চলছে, তা জানা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া বিদেশ থেকে টাকা এনে কে কোন খাতে খরচ করছে, তাও অস্পষ্ট ছিল। এ কারণেই কয়েক দফায় চিঠি দিয়ে এগুলোর নিবন্ধন বাতিল করা হয়। বিদেশি সাহায্যপুষ্ট এনজিওগুলো দ্য ফরেন ডোনেশনস (ভলান্টারি অ্যাক্টিভিটিজ) রেগুলেশন রুলস, ১৯৭৮ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ২০০১ সালের ২৯ মে জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী চলে।

ওই আইনে বলা আছে, নিবন্ধনের তারিখ থেকে পাঁচ বছর পর প্রতিটি বেসরকারি সংস্থাকে নিবন্ধন নবায়নের আবেদন করতে হবে। এনজিও-বিষয়ক ব্যুরোর উপপরিচালক জাফর উল্লাহ খান প্রথম আলোকে জানান, একটি এনজিওর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নিবন্ধন। আইন অনুযায়ী পাঁচ বছর পরপর নবায়নের আবেদন করতে হয়। আবেদনের সঙ্গে এনজিওটির পাঁচ বছরের কার্যক্রম, বার্ষিক প্রতিবেদন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। এগুলোর ওপর একটি এনজিওর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নির্ভর করে।

কাজেই যারা আবেদন করে না, তাদের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, মেয়াদহীন এক হাজারেরও বেশি এনজিওর তালিকা করে গত বছরের ডিসেম্বরে তাদের চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে নবায়ন না করার কারণ সম্পর্কে লিখিতভাবে জানতে চাওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, এই সময়ের মধ্যে জবাব দাখিল করা না হলে এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হবে।

ওই চিঠির পর অনেক এনজিও দ্রুত নবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করলেও অনেক এনজিও ব্যুরোর সঙ্গে যোগাযোগই করেনি। ব্যুরোর এক কর্মকর্তা জানান, যেকোনো এনজিওর নিবন্ধিত হওয়ার পর প্রতিবছর বার্ষিক (কাঠামোগত উন্নয়ন) প্রতিবেদন ও পাঁচ বছরের নিরীক্ষা (্আর্থিক রিপোর্ট) প্রতিবেদন ব্যুরোতে জমা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বাতিল হওয়া এনজিওগুলো সেগুলো জমা দেয়নি। ফেডারেশন অব এনজিওস ইন বাংলাদেশের (এফএনবি) পরিচালক তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, অনেক এনজিওর নিবন্ধন বাতিল হয়েছে বলে তাঁরাও জানতে পেরেছেন। নবায়ন না করার কারণে নিবন্ধন বাতিল করা হচ্ছে।

তবে অনেকেই অভিযোগ করেছেন, তাঁরা এক বছর আগে টাকা জমা দিলেও তাঁদের এনজিওর নিবন্ধন নবায়ন করা হয়নি। কেন এনজিওগুলো নিবন্ধন নবায়ন করতে চায় না—জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম বলেন, মূলত যারা বিদেশি সাহায্য পাচ্ছে না কিংবা সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও পাচ্ছে না, তারা আসলে ১০ হাজার টাকা দিয়ে নিবন্ধন নবায়ন করতে চায় না। বিদেশি সাহায্য পেলে হয়তো করত। কিন্তু আজকাল বিদেশিরা সরাসরি টাকা দেয় না। এ কারণেই অনেকের হয়তো টাকা খরচ করে নবায়নের আগ্রহ থাকে না।

ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ: অনেক এনজিওর অভিযোগ, নিবন্ধন বা নবায়ন নিয়ে ব্যুরোতে মূলত লেনদেন চলে। ব্যুরোর কিছু কর্মচারী ঘুষ ছাড়া নবায়নের কাজ করতে চান না। তাই অনেক এনজিও চাইলেও নিবন্ধন নবায়ন করতে পারছে না। জয়পুরহাটের রুরাল অ্যাডভান্সমেন্ট কাউন্সিলের (আরএসি) নির্বাহী পরিচালক আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে জানান, নবায়নের জন্য যা দরকার, তার সবকিছু তিনি জমা দেওয়ার পরও এক কর্মচারী তাঁর কাছে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। ওই কর্মচারী বলেন, ‘টাকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে।

আমি টাকা না দিয়ে একজন সহকারী পরিচালককে ঘটনাটি জানাই। তিনি ওই কর্মচারীকে বকাঝকা করেন। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় ওই কর্মচারী ও তাঁর লোকজন আমাকে মারধর করেন এবং আমার কাছে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেন। ’ এফএনবির পরিচালক তাজুল ইসলাম জানান, আরও অনেক এনজিও তাঁদের কাছে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ করেছে। যেসব এনজিওর নিবন্ধন বাতিল: নিবন্ধন বাতিল হওয়া এনজিওগুলোর মধ্যে এমনও আছে, যেগুলোর নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হয়েছে এক থেকে দেড় দশক আগে।

পল্লী প্রগতি সংস্থা, রুরাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার, রুরাল ইকোনমিক অ্যান্ড সোস্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট, স্কটিশ কেয়ার বাংলাদেশ, সাঁওতাল উন্নয়ন সংস্থা, পাইওনিয়ার সমাজকল্যাণ পরিষদ, প্রত্যয়, উদ্যম বাংলাদেশ, প্রগতিশীল সমাজকল্যাণ ও পরিবার পরিকল্পনা সমিতি, সমাজদর্পণ, উইমেন ওয়েলফেয়ার অরগানাইজেশন, মানিকগঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন ফর সোস্যাল সার্ভিস, সোস্যাল প্রোগ্রেস সার্ভিস, রুরাল রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার, প্রয়াস, রজনীগন্ধা প্রভৃতি এনজিওর নিবন্ধন বাতিল হয়েছে সপ্তাহখানেক আগে। ইসলামী সমাজকল্যাণ সমিতি, সেবা সোসাইটি, সম্প্রীতি, মডেল বাংলাদেশ, মুক্তির ডাক, গোলাম মাওলা ফাতেমা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট, হাক্কুল ইবাদ, খলিফা ফাউন্ডেশন, আলামীন ও বায়তুল আমান ট্রাস্টের মতো অনেক এনজিওর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে গত মাসের মাঝামাঝি। এনজিওগুলোর বক্তব্য: নিবন্ধন বাতিল হওয়া বিসিডব্লিউএসের নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আকতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘শ্রমিক আন্দোলনে উসকানি দেওয়ার কারণে আমাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু আপনি শ্রমিকনেতাদের কাছে যান। তাঁরা কেউ বলতে পারবেন না যে আমরা কখনো তাঁদের বেআইনি কাজ করতে বলেছি।

আমরা আদালতে একটি রিট করেছি। এনজিও-বিষয়ক ব্যুরোতে রিভিউ আবেদনও করেছি। ’ কর্মজীবী মায়েদের শিশু পরিচর্যার কথা বলে নিবন্ধন নিয়েছিলেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই কাজের জন্য বিদেশি অর্থসহায়তা পেয়েছিলাম। কিন্তু তাই বলে অন্য কোনো কাজ করা যাবে না, এমন কোনো আইন তো কোথাও নেই। ’ সোশ্যাল অর্গানাইজেশন ফর মুভমেন্ট অ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্ট নলেজের পরিচালক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার এনজিওর নবায়নের জন্য চিঠি দেওয়া হয় মাস চারেক আগে।

কিন্তু আমি নবায়ন করতে যাইনি। কারণ আমরা জেনেছিলাম সমাজসেবায় নিবন্ধন থাকলে আর নিবন্ধনের দরকার নেই। ’ কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার বাংলাদেশের উপপরিচালক আহসান রাকিব বলেন, ‘বিদেশ থেকে টাকা আসবে, এমন আশায় ব্যুরোতে নিবন্ধন নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আর টাকা পাচ্ছি না। তাই নিবন্ধন করা হয়ে ওঠেনি।

’ ডেভেলপমেন্ট ফোরামের প্রধান জাকারিয়া রায়হান জানান, এখন আর তাঁদের কার্যক্রম নেই। তাই নিবন্ধন করতে যাননি। সোস্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট, হিউম্যান হেলথ ফাউন্ডেশন, হিউম্যান ওয়েলফেয়ার সোসাইটিসহ কয়েকটি এনজিওর নির্বাহীরা প্রথম আলোকে জানান, ব্যুরোতে নিবন্ধন করতে অনেক ঝামেলা। কিন্তু সেই তুলনায় বিশেষ কোনো সুবিধা পাওয়া যায় না। তাই তাঁরা নিবন্ধন করেননি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.