গেরিলা কথাবার্তা
১.
পঞ্চম সংশোধনী অনিবার্য ছিল, জিয়া না হলে অন্য কাউকে এর দায় নিতে হত। বিশেষত চতুর্থ সংশোধনীর পর এর কালো অংশগুলো বাতিল করার দায়। পচাত্তরের পনেরই আগষ্ট দুঃখজনকভাবে শেখ মুজিবশাহীর পতনের পর যে রাজনৈতিক ও পদ্ধতিগত শূন্যতা রাষ্ট্রে বজায় ছিল, জিয়া এবং পঞ্চম সংশোধনী তার মধ্যে একটি ব্রীজ। যা বহুদলীয় গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ তৈরী করেছে এবং আওয়ামীলীগসহ দেশের বর্তমান সব রাজনৈতিক দল এই সংশোধনীর বেনিফিশিয়ারী এবং তাদের বৈধতাও এখান থেকেই। হাইকোর্ট তাই এই অনিবার্যতাকে 'বাতিল' ঘোষণা করতে পারে নাই- যদিও 'অবৈধ' ঘোষণা কিছু বিভ্রান্তি তৈরী করেছে।
এতে এই ব্রীজকে অস্বীকার ও 'অবৈধ' বলা হয়েছে। তাহলে একটির অবৈধতা তার পরবর্তী সব সরকারের বৈধ হওয়ার পক্ষে অন্তরায়। এমনকি বর্তমান সরকারের বৈধতাও। শেখ মুজিবশাহির পতনের পর এই চতুর্থ সংশোধনীর কালো অংশটুকু বাতিলের দায় তাইলে বৈধভাবে কে নিতে পারত? এই রায়ের ভিত্তিতে এই তর্ক এখন চলতে পারে। আইন শাস্ত্রের একটা বিখ্যাত মেক্সিম হলো, 'সেই রায় রায় নয় যা বলবৎযোগ্য নয়'।
ফলত দেখা যায়, হাইকোর্টের এই রায়ে চতুর্থ সংশোধনীর কালো অংশ বাতিল এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রসহ পঞ্চম সংশোধনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোই বহাল রাখা হয়েছে 'স্টেট অব নেসেসিটি'র কথা বলে। শুধু পূর্ববর্তী ব্রীজটাকে বৈধতা দেওয়ার অংশটি ছাড়া। এটি তাই একটি কন্ট্রোভার্শিয়াল রায় হয়েই থাকলো।
২.
দৃশ্যত, পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে জিয়াউর রহমান এর ক্ষমতাকালকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হলেও, এই রায়ে বিএনপির জন্য শুভ বিষয় আছে। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রশ্নে হাইকোর্ট এর সিদ্ধান্তমূলক অবস্থান।
অন্য বিষয়গুলোতে সংসদ আইন প্রণয়ন করতে পারে- এমন পরামর্শ দিলেও জাতীয়তাবাদ প্রশ্নের এই মিমাংসার পর আওয়ামীলীগের 'বাঙালী জাতীয়তাবাদী' ধর্মাবলম্বীরা অখুশি হবে- এবং বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পরও এই দলটির দলীয় শ্লোগানে দেশকে স্রেফ 'বাংলা' অভিহিত করাটারে প্রশ্ন করা যাবে। আদালতের এই রুলিং এর পর আওয়ামীলীগের 'জয় বাংলা' শ্লোগান আদালত অবমাননা, নাকি 'রাষ্ট্রদ্রোহিতা'- এমন প্রশ্নও দলীয় প্রপাগাণ্ডায় অথবা রাজনৈতিকভাবেই তুলতে পারে বিএনপি। কেননা, দুই গ্রুপই এক্ষেত্রে আদালতকেই ঈশ্বর ভাবেন।
৩.
তবে আমরা পূর্বেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে সামনে নিয়ে আসা খুব জরুরী মনে করেছি, সেটি হল সামাজিক, রাজনৈতিক ও ইতিহাস বিতর্কের মিমাংসা এবং কোর্ট কাছারির মিমাংসার বিষয় আশয়ের মধ্যে স্পষ্ট একটি পার্থক্য বোঝার জরুরত- যেখান থেকে বিশেষায়িত এখতিয়ারগুলিকে চিহ্নিত ও রাজনৈতিক বিষয়াবলির থেকে আলাদা করার গুরুত্ব বুঝা যাবে। এই জায়গা থেকে পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা, স্বাধীনতার ঘোষক মিমাংশা, জাতীয়তাবাদ এইসব বিতর্কে কোর্ট-কাছারির অংশগ্রহণ এবং রায় এবং এর এখতিয়া আদৌ কোর্ট-কাছারি রাখে কিনা এই প্রশ্নটি উঠবে।
এ প্রসঙ্গে আমার অতীতের একটি পোষ্টের বরাত দিচ্ছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।