আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গোপন প্রিয়ার প্রেমপত্র

সাগর সরওয়ার

হিসাব করে দেখলাম ২২ বছর আগে আমি ক্লাশ এইটে পড়তাম। ১৯৮৮ সাল। হিসাবটা কি ভুল হলো? মনে হয় না। স্কুলে থাকতেই আমার পড়ার অভ্যাসটা ছিল খুবই বেশি। ভাগ্য ভালো আমার বাবা- মা আমাকে স্কুলের বই এর বাইরে অন্য বই পড়তে কখনোই নিষেধ করতো না।

নবাবপুরে আমাদের বাসা। পুরোনো ঢাকা। কান্দুপট্টির খুব কাছে আমাদের সেই বাসা। সেই কান্দুপট্টি আজ নেই। ভয়ে ভয়ে সকলের অগোচরে সেই কিশোরকালে কত যে কান্নি মেরে সেই পতিতালয়ের মেয়েদের দেখেছি, তা হিসাব করে বলতে পারবো না।

এক সময় সেটি আমাদের কাছে ডাল ভাত হয়ে গেলো, সেদিকে আমি বা আমরা চেয়েও দেখতাম না। তারপরও তো এক সময় সেটি উঠে গেলো, সেই স্থানে হলো স্টিলের দোকান, খাবার হোটেল, হার্ডওয়ার আর রঙের দোকান। পতিতালয়টি নেই, স্মৃতি আছে, থাকে। যাহোক ক্লাশ এইটে পড়ার সময় স্কুলের সময়ের পর আমার সময় কাটতো ওসমানি উদ্যানের মহানগর লাইব্রেরিতে। আর যখন স্কুল থাকতো না, তখন বাংলাবাজার।

বাংলাবাজারে ঢোকার আগেই জগন্নাথ কলেজের উল্টোদিকেই পুরানো বই এর বাজার। এখন আছে কি? জানা নেই। সেখানেই আমি কাটাতাম অদিকাঙম সময়। কম দামে ভালো বই। মাঝে মাঝে মনে হত অনেক দামী বই কেবল অনেক সময ধরে দেখছি বলে, আমাকে কম দামেই দিয়ে দিত দোকানিরা্ এদের কেউ ছিল আমার মামা, কেউ ভাই আবার কেউবা দাদা।

সেই মামা, ভাই আর দাদারা এখনো কেমন আছি জানিনা। এতো লোকের মধ্যেও একজন আমার বেশ কাছের ছিল। জগন্নাথের গেটের ঠিক উল্টোদিকে দুটি পত্রিকার দোকান। একটি সামনে, আরেকটি পাশের হোটেলের সঙ্গে লাগোয়া। দ্বিতীয় দোকানটি চালাতো এক বৃদ্ধ লোক।

শুকনো কাঠির মতো। চোয়ালের হাড় হাড্ডি কেবল চামড়ার সঙ্গে লেগে আছে। স্কুল থেকে কলেজ, তারপর জগন্নাথ। অনেকে টিপ্পনি কেটে বলতো, আমি নাকি বই পড়তেই বাংলাবাজারের পাশে জগন্নাথে ভর্তি হয়েছিলাম। বেশ কয়েক বছরে সেই লোকটির সঙ্গে আমার দারুন সখ্যতা হয়ে গেলেো।

আমার চাচা হয়ে গেলো সে। সেই পত্রিকার দোকানে একটা বই বেশ ভালো বিক্রি হতো। বইটির নাম গোপন প্রিয়ার প্রেমপত্র। ইচ্ছে ছিল চাচার দোকান থেকে সেই বইটি একবার পড়ে নেবো। কিন্তু পারিনি, পড়িনি।

আচ্ছা কি আছে সেই বই এ। চাচাকে জিজ্ঞাস করলে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া সেই যুবক কখনোই সেই প্রশ্ন করতে পারেনি দোকানি চাচাকে। আজ সেই বই, সেই দোকানি চাচার কথা খুব মনে পড়ছে। সেই চাচার নাম যেন কি? নিজের কাছে নিজেই প্রশ্ন করলাম... উত্তর এলো, সাগর তুমি সেই চাচার নাম জানো না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.