আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাড়াটে বর


মাঝেমধ্যে তিনি বর সাজেন। তবে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে নব পরিণীতাকে ঘরে না এনে বরং তাঁর বাড়িতেই জামাই আদরে কাটান কয়েক দিন। তারপর তালাক দিয়ে পত্রপাট বিদায় নিয়ে ফিরে আসেন নিজ বাড়িতে। বিয়ে ও তালাক দেওয়ার ফাঁকে গুণে নেন তার প্রাপ্য মজুরি। আসলে তিনি ভাড়াটে বর, তিনি হিল্লে বিয়েতে বরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।

নাম মো. নুরজামাল। বয়স প্রায় ৭০। এ পর্যন্ত ভাড়াটে বর হিসেবে বিয়ে করেছেন দুই ডজন। অবশ্য মিথ্যে বিয়ের ফাঁকে সত্যিকারের বিয়ে করেছেন দুবার। এক স্ত্রী মারা গেছেন, অন্যজন এখনো বর্তমান।

নুরজামালের বাড়ি ছিল ধরলা পাড়ের চন্দনপাটে। ধরলা সব কিছু গিলে খাওয়ার পর আশ্রয় নিয়েছেন সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের তালুককালোয়া গ্রামের একটি রাস্তার ওপর। আট ফুট দৈর্ঘ্য ও ছয় ফুট প্রস্থের একটি ঝুপড়িতেই তাঁর সংসার। এখন দিনমজুরি করেন। তবে কাজ মেলে না প্রতিদিন।

তাই অনাহার লেপ্টে আছে জীবনের সঙ্গে। নুরজামাল জানান, একসময় তিনি ভাড়াটে বর হিসেবে মাঝেমধ্যে 'খ্যাপে' যেতেন। বিয়ের পর দু-তিন দিন শাহী খানাপিনা আর আনন্দে কাটত। ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা হাদিয়া গুণে নিতেন। উপরি হিসেবে লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি উপহার মিলত।

একসময় বাইন তালাক দিয়ে সটকে পড়তেন কন্যার বাড়ি থেকে। তখন রাগের মাথায় তালাক দেওয়া আগের স্বামীর সঙ্গে আবার বাস করতেন হিল্লের স্ত্রী। তিনি জানান, এখন আর হিল্লে বিয়ের জন্য ডাক পড়ছে না। তাঁর ধারণা, বয়স হয়েছে বলে কদর কমে গেছে তাঁর। তাই এখন ১০০ টাকা হলেই তিনি বর সাজতে রাজি।

কিন্তু তার পরও কেউ ডাকে না। স্মৃতির দরজা খুলে দিয়ে তিনি অকপটে জানান, মানুষের অনুরোধ আর নিজের প্রয়োজনে তিনি হিল্লে বিয়ের বর সেজেছেন। তিনি বলেন, 'হামার দ্বারায় অনেক মানষের উপকার হইছে। ভাঙা সংসার জোড়া নাগছে। হামার অনেক ছওয়াব হইছে।

' তিনি আরো জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকে তাঁকে ডেকে নিয়ে যেত। খাতিরতোয়াজ করত। এখন বুড়ো হয়েছে বলে কেউ খবর নেয় না। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, একমাত্র ছেলে চাচার বাড়িতে থাকে ভিনগ্রামে। এখন স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে কোনো রকমে দিন কেটে যাচ্ছে তাঁর।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.