আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাম্রাজ্যবাদের ভাড়াটে মানবতাবাদীরা কোথায়?



সাম্রাজ্যবাদের ভাড়াটে মানবতাবাদীরা কোথায়? ৩২ বছরের বামফ্রন্ট রাজত্বে কংগ্রেস ও তার গর্ভজাত দল তৃণমূল এরাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গকে একসময় পাঞ্জাব, কাশ্মীর, বিহার, উত্তর প্রদেশসহ বহু রাজ্যের সাথে তুলনা করেছে। পরবর্তীতে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম নিয়ে সারা ভারতসহ আন্তর্জাতিক স্তরের প্রচার করেছে (ইনটারনেটের মাধ্যমে) পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট রাজত্বে মানবাধিকার রক্ষার প্রশ্নে। তাঁদের এই কান্নায় যোগ দিয়েছেন ২০০৭-এর ১৪ই মার্চের পর মার্কিন প্রশাসন। মার্কিন প্রশাসনও পশ্চিমবঙ্গে মানবাধিকার নিয়ে চিন্তিত যেমন চিন্তিত এরাজ্যের এন জি ও পুষ্ঠ মানবতাবাদীরা এবং যারা পরবর্তীতে এরাজ্যে তৃণমূলের কৃপায় হয়েছেন পঞ্চাশ হাজারি। এই সমস্ত মানবতাবাদীদের কাছে সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক পিপলস ট্রাইবুন্যাল অন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড জাস্টিস ফর কাশ্মীর দাবি করেছে এক নিরপেক্ষ তদন্ত এবং সেটা হলো উত্তর কাশ্মীরে নিদর্শনহীন গণকবরের।

এব্যাপারে সম্প্রতি শ্রীনগরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডক্টর অঞ্জনা চ্যাটার্জি (অধ্যাপক কালচারাল ও সোসাল অ্যান্থোপলজি বিভাগ, কালিফোর্নিয়া সেন্টার ফর ইন্টিগ্র্যাফ স্টাডিজ) যিনি এই সংস্থার কনভেনর বলেছেন ২৭০০ অজানা এবং নিদর্শনহীন (‘Unknown, unmarked mass graves’) গণকবর যেখানে প্রায় ২৯০০টি দেহ যা প্রায় ৫৫টি গ্রামে (বান্দিপোরা, বারামুল্লা এবং কুপওয়ারা জেলায়) পাওয়া গিয়েছে। এই প্রতিনিধিদল রাজ্য এবং জাতীয় হিউম্যান রাইটাস কমিশনকে জানিয়েছেন এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাকে জানিয়েছেন। আরও বীভৎস তথ্য বলছে ১৫৪টি কবরে ২টি করে দেহ, ২৩টি কবরে ২টির বেশি দেহ (দেহর সংখ্যা ৩ থেকে ১৭)। এই গণকবর মানবতা-বিরোধী, যুদ্ধে নিহত মানুষদেরও আইন সংক্রান্ত নিয়মের বিরোধী। এই রিপোর্ট আরও বলেছে যে, এই শবদেহগুলি গোপনে কবর দিয়েছে ঐ রাজ্যের পুলিস।

এই হিউম্যান রাইটস গ্রুপ মন্তব্য করেছেন “Our findings and very Preliminary evidence point to the severity of existing conditions”। তথ্য আরও বলছে, ১৯৮৯ থেকে ঐরাজ্যের যে আট হাজার মানুষকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তার সঙ্গে এই গণকবরের সংখ্যার সাদৃশ্য আছে। এই গ্রুপের পক্ষ থেকে যে বিস্ফোরক মন্তব্য করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে ‘‘আমরা লক্ষ্য করছি রাষ্ট্রসঙ্ঘ ও তার অধীন দেশসমূহ ভারতের কাশ্মীর রাজ্যের সামরিক অভিযান ছাড়া সবশেষে এই আন্তর্জাতিক গ্রুপ যে মন্তব্য করেছেন তার ইংরাজী বক্তব্যই তুলে ধরলাম “The Independent group alleged that the violence and militarization in Kashmir, Between 1989 and 2009, resulted in over 70,000 deaths, including through extra judicical or “Fake Encounter” Executions, custodial brutality and other means.” (উপরোক্ত তথ্য সূত্র : দ্য হিন্দু, ৪ঠা ডিসেম্বর ২০০৯, তৃতীয় পৃষ্ঠা)। পশ্চিমবঙ্গের গজিয়ে ওঠা ভাড়াটে মানবতাবাদীদের বলি যে একটু কাশ্মীর ঘুরে এসে এসব তথ্য নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরে বা নন্দীগ্রামে গিয়ে একটু পা ছড়িয়ে কেঁদে নিন না, সঙ্গে হাফডজন তৃণমূখপত্র ও কলকাতা-আনন্দ দৃশ্য মাধ্যমকে সঙ্গে রাখুন। আপনাদের যাতায়াতের বন্দোবস্ত তো রেলে এখন বিনা পয়সায়।

মার্কিন বন্ধুদের নেবেন। তৃণমূল-মাওবাদী যেখানে একাত্ম বাংলাতে একটি অতি জনপ্রিয় প্রবাদবাক্য হলো, ‘‘খাল কেটে কুমির আনা। ’’ খালের শান্ত পরিবেশে যে ইকোসিস্টেম গড়ে ওঠে সেখানে হঠাৎ ভয়ঙ্কর কুমিরের আবির্ভাবে শান্ত পরিবেশ অশান্ত হয়ে ওঠে। ইকোসিস্টেমের মধ্যে একটা আস্থিরতাকে কেন্দ্র করে আসে পরিবর্তন। রাজ্য রাজনীতিতে এরূপ একটি তথাকথিত ‘পরিবর্তনের’ বাতাবরণ তৈরি করার জন্য রাজ্যের একমাত্র বিরোধীদল তৃণমূল কংগ্রেস এখানকার শান্তি, সম্প্রীতি, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধুলায় মিশিয়ে দিয়ে চারিদিকে সন্ত্রাস, বিশৃঙ্খলা ও অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য নকশালপন্থী মাওবাদীদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে তাদেরকে বাংলায় প্রবেশের পথ করে দিয়েছে।

বিস্তীর্ণ জঙ্গল মহলের তিন জেলায় বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া তৎসহ বীরভূম, বর্ধমান, হুগলী, পূর্ব মেদিনীপুর ও দুই ২৪ পরগনায় মাওবাদীরা তৃণমূলের সহযোগিতায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন থেকে ২০০৯ ১লা নভেম্বর পর্যন্ত তৃণমূল-মাওবাদী সন্ত্রাসে ৩২৬ জন বামপন্থীকর্মী ও নেতৃত্ব নির্মম নৃশংসভাবে নিহত হয়েছেন। শুধু তাই নয় তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে ২০০৯ এর ৩রা মার্চ থেকে ১৬ই মে নির্বাচন পর্যন্ত ২৮ জন এবং ১লা নভেম্বর পর্যন্ত ১০১ জন বামপন্থীকর্মী নেতৃত্বকে মাওবাদীদের হাতে মরতে হয়েছে। বাংলার মসনদ দখল তথা ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে পৌঁছানোর জন্য যাঁরা সঙ্কীর্ণ স্বার্থের বশবর্তী হয়ে বাংলায় খাল কেটে কুমির আনলেন তাঁরা আগে না বুঝলেও এখন তাঁদেরকে বুঝতে হবে স্বার্থের পারস্পরিক সংঘাতে কুমির কত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। শত্রু মিত্র ভেদাভেদ জ্ঞান আর তার তখন থাকে না, সবাইকে সমানভাবে আঘাত হানতে উদ্যত হয়।

ধনুক নিসৃত তীর বুমেরাং হয়ে নিজের দিকে ফিরে আসে। ০১.১০.০৯ তারিখে আনন্দবাজার পত্রিকাতে কিষেনজী ওরফে কোটেশ্বররাও এর উক্তি, ‘‘নন্দীগ্রামে এস ই জেড তৈরির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের কর্মীরা সামনের সারিতেই ছিল। ওড়িশাতেও টাটাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছি আমরা। ’’ আবার ২৩শে নভেম্বর একটি ইংরাজী দৈনিক ‘ট্রাবলড টাফ’ শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘‘নন্দীগ্রামে যুবকদের অস্ত্রপ্রশিক্ষণ এবং ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটিকে অস্ত্র সরবরাহ প্রভৃতিখাতে মাওবাদীরা ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। রনজিত পাল, সোমেন-এর মতো প্রথমসারির মাওবাদী নেতারা নন্দীগ্রামে থেকে সংগঠন তৈরি করেছে।

এলাকার স্থানীয় যুবকদের একটি দল মাওবাদী কর্মীতে পরিণত হয়েছে। ’’ যৌথবাহিনীর সাঁড়াশী আক্রমণে মাওবাদীরা যখন অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করছে তখন কিষেনজী মমতাদেবীকে রাজ্যের ‘ভাবী মুখ্যমন্ত্রী’ ঘোষণা করে যৌথবাহিনীর আক্রমণের বিরুদ্ধে তাঁকে কেন্দ্রে চাপ তৈরি করার অনুরোধ করছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মমতা ব্যানার্জি-মনমোহন সিং-এর মধ্যে গোপন আলোচনা যাইহোক অদ্যবধি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রশ্নে মাওবাদীরা একটি প্রধান বাধা এবং যৌথবাহিনীর অভিযান চলছে। জেল থেকে তিন মাওবাদী উগ্রপন্থী চণ্ডী সরকার, সব্যসাচী গোস্বামী, জাকির হোসেন মমতা ব্যানার্জিকে খোলা চিঠি লিখে জানিয়েছেন, ‘‘মাওবাদীদের সাহায্য ছাড়া নন্দীগ্রামে তৃণমূল কি ১১ মাস অবরোধ চালিয়ে যেতে পারতো’’? নেত্রী নীরব। তৃণমূল কর্মী, মাওবাদী অস্ত্র প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত রাধেশ্যাম গিরি, গৌরহরি মণ্ডল, মাওবাদী স্কোয়াড সদস্য প্রকাশ মণিয়াম এখন জেলে।

বাড়ির লোকজন অনশনের মাধ্যমে মমতা ব্যানার্জি ও শি‍‌শির অধিকারীদের কাছে তাদের মুক্তির দাবি জানালে তাঁরা নীরব ও মৌন। বন্দী মুক্তি কমিটির নেতা পূর্ণেন্দু বসু, মহাশ্বেতী দেবী, সুজাত ভদ্ররাও নীরব। স্বভাবতই এই নীরবতা থেকেই হয়তো মনোমালিন্য। তাই উদ্ধত আচরন ও দুর্নীতির কারণে ২২শে সেপ্টেম্বর সোনাচূড়ার পঞ্চায়েত প্রধান নিশিকান্ত মণ্ডলকে মাওবাদীদের হাতে গুলি খেয়ে মরতে হয়। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতেই নেত্রী এই দোষ সি পি আই (এম)-র ঘাড়ে চাপিয়েছেন।

যারপরনাই এক মহিলাসহ তিন সি পি আই (এম) কর্মীকে পুলিস গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু ‘‘ঢিল মারলে পাটকেলটা খেতে হয়। কুমিরকে ঢোকালে তার কামড় খেতেই হবে। ’’ নেত্রীর প্রিয় কাগজে হেডিং হয়েছে, ‘‘তৃণমূল নেতাদের খুনের হুমকি দিলো মাওবাদীরা। ’’ কেন্দেমারি পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান শেখ সাহাউদ্দিন, সোনাচূড়ার তৃণমূল নেতা খোকন শীট, গড়চক্রবেড়িয়ার তৃণমূল কর্মী শেখ লাল্টুকে পুলিসের চরবৃত্তির অভিযোগে খুনের হুমকি দিয়ে লিফলেট ছড়িয়েছে মাওবাদীরা।

তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুরের সাধারণ সম্পাদক মামুদ হোসেনের প্রতিক্রিয়া ‘‘আমরা এই লিফলেট এর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। ’’ গুরুত্ব দেবেন কেন? সে রকম কিছু ঘটলে সি পি আই (‌এম)-র ঘাড়ে দোষ চাপাতে তো কোন বাধা নেই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.