এতক্ষণ ধরে জামার দোকানে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে প্রিয়তী। পছন্দই হচ্ছেনা কিছু। এমন সময় খুব পরিচিত গলা শুনে ফিরে তাকালো প্রিয়তী। একটা মেয়ে আর একটা ছেলে এসে ঢুকেছে দোকানটায়। ছেলেটার দিকে চোখ পড়তেই প্রিয়তী অনুভব করলো তার পুরো চেহারা রক্তশূন্য হয়ে যাচ্ছে।
অদ্ভুত কিছু অনুভূতি একসাথে এসে খেলে গেল মনে। চোখের সামনে খেলা করে গেল অনেকগুলো চেহারা, আর অনেক স্মৃতি।
চোখের সামনে প্রিয়নকে দেখেও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিল না প্রিয়তীর। এই একজন মানুষের সামনে যেন পড়তে না হয় সেজন্য ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার পর ভার্সিটির কোন বন্ধুবান্ধবের সাথে কোন যোগাযোগ রাখে নি প্রিয়তী। কিন্তু প্রিয়নকে সামনে দেখে বরং অনেক ভালো লাগা খেলে গেল তার মনে।
ভার্সিটি জীবনে প্রিয়তীর সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিল প্রিয়ন। সেই বন্ধুত্ব ভালোবাসায় মোড় নিতেও সময় লাগেনি। কিন্তু তারপরেই সব উলটপালট হয়ে গেছে। সপ্তাহের ৪ দিনই দেখা যায় ধুন্দুমার ঝগড়া চলছে। শেষে দুজনে মিলেই শেষ করে দিয়েছিল সম্পর্কটাকে।
শুরুটা যেমন হয়েছিল নিরবে নিভৃতে, শেষটাও হল তেমন।
প্রিয়তী ভার্সিটি থেকে বের হয়েছে বছর দুয়েক। এখন একটা ছোট চাকরী করছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে বলে পড়াশুনা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ফ্যামিলি থেকে বিয়ে করার জন্য চাপ শুরু হয়ে গেল। প্রিয়তীর কি হল নিজেও জানে না।
সব অসহ্য লাগতে শুরু করলো। মনে হল, তার পক্ষে অন্য কাউকে বিয়ে করাটা ঠিক সম্ভব নয়। বাসার চাপটা মেনে নিতে পারলো না বলে ঝগড়া করে বেরিয়ে এল বাসা থেকে। এখন একটা কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে থাকে সে। সারাদিন কাজে কর্মে সময় চলে যায়, কিন্তু সন্ধার পরে একা রুমে নিঃসঙ্গতা যখন ভর করে, মাঝে মাঝে মনে হয় বাবা-মার কাছে আবার চলে যাবে, খুব ইচ্ছে হয় মাঝে মাঝে প্রিয়নকে ফোন করতে।
তার এত ভাল বন্ধু ছিল... আজ বন্ধুত্বের দাবি নিয়েও কি একটা ফোন করা যায় না?
আজ দুবছর পর প্রিয়ন তার সামনে দাঁড়িয়ে। মেয়েটি কে? বেশ সুন্দরী মেয়েটি। প্রিয়নের স্ত্রী? বিয়ে করে ফেলেছে প্রিয়ন? কথা বলবে এগিয়ে গিয়ে? নাকি বলাটা উচিৎ হবে না? যদি তার স্ত্রী হয়... কি বলবে এককালের ভালো বন্ধু? মনের মধ্যে একগাদা প্রশ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো প্রিয়তী। সে কি বেড়িয়ে যাবে দোকান থেকে? ঠিক তখনই প্রিয়নের গলা শুনতে পেল,”প্রিয়তী না? কিরে হাওয়া হয়ে গেলি একেবারে? আছিস কেমন?” প্রিয়তী ফিরে তাকাল প্রিয়নের দিকে। হালকা করে হাসলো।
“ভালোই আছি। তোর কি খবর?” “হুম, ভালো”- বললো প্রিয়ন। “পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি”-বলে হাসিমুখে পাশের মেয়েটার দিকে তাকাল প্রিয়ন “আমার ছোট বোন। নিষাদ। ” হঠাৎ করে প্রিয়তীর মনে হল বুকের ভেতরে কোথায় যেন একটা আনন্দের হিল্লোর বয়ে গেল।
হেসে পরিচিত হল নিশাদের সাথে। “তারপর?”- জিজ্ঞেস করলো প্রিয়ন “বিয়ের দাওয়াতটাও দিলি না। এই তোর বন্ধুত্ব?” কেন যেন তার মুখ ফুটে বেরোল না সে বিয়ে করেনি। প্রিয়তী পালটা প্রশ্ন করলো, “তুইও তো জানাস নি। ” নিশাদ হেসে বললো “ভাইয়া বিয়ে করলে তো জানাবে।
সবাই এত করে বলছে, তাও রাজি হচ্ছে না। “ প্রিয়তী অবাক হয়ে তাকালো প্রিয়নের দিকে। তবে কি... ঠিক তখনই বেজে উঠলো মুঠো ফোন। প্রিয়নকে যেতে হবে। আর কথা হল না।
বিদায় নিয়ে হাটতে শুরু করলো প্রিয়ন আর তা বোন। প্রিয়তীর খুব ইচ্ছে হল সেই পুরোতন নামে ডাকে... কিন্তু তাদের পথ যে আলাদা। তারাই দুবছর আগে সেই আলাদা আলাদা পথ বেছে নিয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।