আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলাম কি নেদারল্যান্ডের জন্য হুমকি?



মিয়া মুস্তাফিজ রেডিও নেদারল্যান্ড ওর্য়াল্ডওয়াড এর টেলিভিশন স্টুডিও সরগরম হয়ে উঠেছে। টকশো ধারণ করা হচ্ছে। বিষয় ‘ইসলাম কি নেদারল্যান্ডের জন্য হুমকি, ? মডারেটর জর্জিয়ান সাংবাদিক টামার কিকাসেসবেলী। অতিথি আলোচন তিন সাংবাদিক। বাংলাদেশের মিয়া মুস্তাফিজ, ঘানার সাদা অঊকু, ইন্দোনেশিয়ার গালু।

কথা হচিছলো পক্ষে বিপক্ষে। যুক্তি তর্ক । টিউলিপের দেশ নেদারল্যান্ড অধিক পরিচিত হলান্ড নামে। ১৬ হাজর স্কোয়ার মাইলের ছোট এই দেশটিতে অধিবাসী ১৬ মিলিয়ন যা হলান্ডকে দিয়েছে ইউরোপের সবচেয়ে গণবসতির দেশের খেতাব । সরকারী হিসেবে হলান্ডে মুসলিম আছে এক মিলিয়ন।

বেশির ভাগ মুসলিম তুর্কি এবং মরক্কান। এছাড়াও ইরাক,ইরান,আফগানিস্তান,সোমালিয়া এবং সাবেক ডাচ কলোনী সুরিনাম থেকে আসা। দেশটির বড় শহর আমাসটারডাম,রটারডাম,হেগ এবং ইউট্রেক্টে বেশির ভাগ মুসলিম বাস করে। ১৯৬০ এবং ১৯৭০ সালের ডাচ অভিবাসী নীতি মুসলিমানদের নেদারল্যান্ডে আসার পেছনে বড় অবদান রাখে । পরবর্তীতে দেখা যায় কাজের সন্ধানে আসা সুমলমানরা পরিবার নিয়ে আসতে শুরু করে।

৯০ পরবর্তী ডাচ সরকার অভিবাসী আইনে কড়াকড়ি আরোপ করে। যার মুল সুর অভিবাসী আর নয়। ইসলাম এবং মুসলিম বর্তমান সময়ে ডাচ্ মিডিয়ার অন্যতম আইটেম। ইউরোপ কিংবা পশ্চিমা দুনিয়ার কথা বাদই দিলাম,হলান্ডে কেন ইসলাম নিয়ে এত কথা ? যে টকশোর কথা বলা হলো তা ছিলো সাংবাদিকতা ট্রেনিংয়ের অংশ। কিন্তু বিষয় নির্ধারণ করা হয় সমসাময়িক কোন ইস্যু নিয়ে।

হলান্ডে মুসলিম এবং ইসলাম ইস্যু প্রাদপদিপে চলে আসে ২০০৪ সালে ডাচ নেতা গ্রীট উইলডারস এর Party for Freedom নামে ইসলাম বিরুধী দল ঘোষণা এবং তার ইসলাম বিরুধী প্রচার চালানের মধ্য দিয়ে। ৪৬ বছর বয়সী এই ডাচ নাগরিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে ইসরাইলের মুসাব কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত থাকেন দুবছর বছর এবং নিজেকে তৈরী করেন ‘ইসরাইলের সত্যিকারের বন্ধু’ । গত ২৫ বছরে তিনি ইসরাইল গেছেন ৪০ বার । গ্রীট উইলডারস তার ইসলাম বিরোধী সিনেমা ফিতনা হাতে দেখাচ্ছেন ইসলামী জোয়ার ইউরোপের সমাজ ব্যবস্থা বা সভ্যতা ভেংগে দিচ্ছে। তার একটাই দাবী হলান্ডে আর মুসলিম আসতে পারবেনা ।

তিনি বলেন “একশ বছর আগে হলান্ডে মুসলিম ছিলো ৫০ জনের মতো আজ এক মিলিয়নের উপরে, এর শেষ কোথায় ” ? ডাচ টিভি চ্যানেল ‘Nederland 2' বলেছে গ্রীট উইলডারস এর পার্টিকে আমেরিকার ইসরাইল পন্থীরা অনেক বড় আর্থিক সহযোগীতা করছে। উইলডার্সের ইসলাম বিরোধী দল ঘোষনার পর থেকে ইসলাম হলান্ডে এবং পশ্চিমা মিডিয়ার অন্যতম সংবাদ আইটেম হয়ে উঠে। গ্রীট উইলডারস কী বলেন তাই যেন খোরাক গণমাধ্যমের। মুসলিম সমাজের ধর্মীয় অনুভুতির উপর আঘাত এবং সাম্প্রদায়িক বৈরীতা উস্কে দেওয়ার অভিযোগে তাকে আইনের মুখোমুখখী হতে হয় আমসটারডামের কোর্টে হাজির হয়ে । বৃটিশ সরকার তাকে অবাঞ্ছিত ব্যাক্তি আখ্যায়িত করে ২০০৯ সালে বৃটেনে প্রবেশ বন্ধ করে।

পরে অবশ্য তার উপর থেকে অবরোধ তুলে নেয়া হয়। কিন্তু এতে করে তার সর্ম্পকে এবং তার কর্মকান্ড সর্ম্পকে প্রচারণা আরো বেড়ে যায়। আমরা সাধারণ ডাচ নাগরিকের সাথে কথা বলেছি। তারা বলছেন “ ইসলাম আমাদের জন্য কোন কষ্টের বা ভয়ের কারণ নয়। ইসলাম আসলে কোন সমস্য নয় , হাতে গুণা কিছু মুসলিম সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করছে তা ইসলামের উপর বর্তালে চলবেন।

ঐ রকম খারাপ লোক খ্রীস্টান ধর্ম বা অন্য ধর্মের মধ্যেও আছে ” । অন্যদিকে দেশটির সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন ইসলাম যে আসলে হলান্ডের সামাজিক,ব্যাক্তি কিংবা রাজনৈতিক জীবনে পরিবর্তন আনছেনা তা কিন্তু নয়। বর্ধমান বিশাল এই জনগোষ্টীর উপস্থিতি দিন দিন লক্ষকরা যাচ্ছে। তাদের পোশাক আলাদা,তাদের ধর্মীয় আচার আলাদা যা কিনা দীর্ঘ দিনের ডাচ্ সমাজে পরিবর্তন আনছে। এই পরিবর্তন অনেকের কাছে ভয়ের কারণ।

হলান্ড এমন একটি দেশ যে দেশে পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি গোষ্টীর সম্মিলন হয়েছে। রটারডাম শহরটিতে দেড়শর বেশী জাতি বসবাস করে। সহিঞ্চুতা,এবং ব্যাক্তি জীবনে সাধীনতা ডাচ সমাজ বা রাষ্ট্রিয় জীবনের ভিত্তি । অথচ ইসলামের প্রতি শুন্যতম সহিঞ্চুতা নেয় গ্রীট উইলডারর্সের। ইসলাম এবং মুসলিমকে নিয়ে তার নেতবাচক প্রচারণায় মুসলমানদের প্রতি ডাচদের খারাপ ধারণা বেড়ে যাচ্ছে ।

দেশটির স্যোসাল এন্ড কালচারাল ব্যুরোর ২০০৫ রির্পোটে বলা হয় শ্রম বাজারে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে মুসলিমরা বৈশম্যের শিকার হচ্ছেন। European Commission against Racism and Intolerance (ECRI) এর রির্পোটে বলা হয়েছে নেদারল্যান্ডে মুসলমানে উপর ডাচদের নেতিবাচক ধারণার কারণ ১/১১ আমেরিকার হামলা,বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস,নৈরাজ্য,সাম্প্রদায়িকা বেড়ে যাওয়া এবং মুসলমানদের হাতে ডাচ চলচ্চিত্র নির্মাতা থিও ভ্যান গফের খুন হওয়া। অন্যদিকে ইউরোপ এবং আমেরিকার ইসলাম এবং মুসলিমদের উপর গবেষণা ও সংবাদ সংস্থা ইউরো ইসলাম বলছে হিজাব পড়া,নারী মুক্তি,সমকামীদের প্রতি সম্মান এবং সহনশীলতা,বলার স্বাধীনতা ইত্যাদী বিষয়ে ইসলামের মতাদর্শ যা মুসলমানদের প্রতি ডাচদের বির্তক বাড়ায়। বৈচিত্রময় জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে ডাচ সমাজকে (Multicultural ‍Society) নিয়ে ডাচরা গর্ব করতো। আর এখন পরিস্থিতি ভিন্ন।

এক জরিপে বলা হয় ১৯৯০ সাল থেকে অভিবাসীদের প্রতি গুরুত্বপুর্ণ একটি অংশের নেতিবাচক মন্তব্য এসেছে। ডাচ জনসংখ্যার অর্ধেকে মনে করে দেশে অনেক বেশী মুসলিম হয়ে গেছে এবং তারা বহিরাগতদের পরিবেষ্টিত পরিবেশ চাইনা। তিন ভাগের একভাগ অখুশি হবে যদি তাদের সন্তান অভিবাসীকে সংগী হিসেবে বেচে নেয়। অন্য একটি জরিপে বলা হচ্ছে ৫৩ শতাংশ ডাচ ভয় পায় এই ভেবে যে কোন একদিন মুসলমানরা নেদারল্যান্ডে সন্ত্রাসী হামলা করবে। ৪৭% ডাচ ভয় পায় এই ভেবে যে নেদারল্যান্ড একদিন ইসলামিক আইনে পরিচালিত হবে।

মুসলিমদের প্রতি বড় অভিযোগ হচ্ছে তারা যেহেতু নেদারল্যান্ডে এসেছে তাহলে তাদের এই সমাজের সংস্কৃতি রপ্ত করে সেভাবে চলতে হবে। কিন্তু মুসলমানরা তাদের ইসলামী সংস্কৃতিতেই চলতে প্রতিঙ্গাবদ্ধ। এছাড়া অনেক মুসলিম রমনী আছেন যারা ডাচ ভাষা রপ্ত করতে চাইনা। ডাচ ভাষা জানা না থাকলে চাকরি পাওয়ার জন্য বড় একটা বাধা রয়ে যায়। গ্রীট উইলডারস আজ একা নন, মুসলমানদের বিরোদ্ধে সোচ্ছার প্রতিবাদীদের কাতারে রয়েছেন রাজনিতিক মার্কো পসটর,যস্ট আর্ডম্যান্স,হিলব্র্যান্ড নাউজিন,প্রফেসর হারম্যান পিলিপস,ইরানি রিফিউজ আইনের প্রফেসর আফসিন ইকোয়াব,প্রফেসর পল ক্লিটার ।

গ্রিক ওয়াল্ডরের দল Party for Freedom গতবছর জুনে হলান্ডের জাতীয় নির্বাচনে ১৫০ আসনের মধ্যে ২৪ আসনে জয়ী হয়েছে। নতুন একটি পাটিরও বিশাল জয়কে ওয়াশিনটন পোস্ট Shocking result বলে অভিহিত করলেও এই জয় গ্রীট উইলডার্সের দলকে নেদারল্যান্ডের তৃতীয় শক্তিশালী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এতে করে প্রতিয়মান হয় যে ডাচরা ইসলাম এবং মুসলিম বিরোধী হয়ে উঠছে। তবে এটা ঠিক যে ডাচ মুসলমানরা সামাজিকভাবে যেমন একটা অবস্থান করে নিয়েছে আবার রাজনৈতিক জীবনেও তাদের অবস্থান তৈরী হচ্ছে। অক্টোবর ২০০৮ ডাচ মুসলমানদের বড় অর্জন বলে ধরে নেয়া হয়।

এক মরক্কান মুসলিম রাজনিতিক আহমেদ আবু তালিবের রটারডাম শহরের মেয়র নিবার্চিত হওয়া মুসলমানদের জন্য টানিং পয়েন্ট। ২০০৬ এর লোকাল ইলেকশনে হেগ শহর ভিত্তিক ইসলামিক ডেমোক্রেটিন পার্টি একটি আসন পায়। ২০০৯ এ নেদারল্যান্ডস মুসলিম পার্টি ঘোষণা দেয় যে তারা লোকাল নির্বাচনে দেশের বড় বড় শহর যেমন আমাসটারডাম,হেগ এবং রটারডামে প্রার্থী দিবে। নেদারল্যান্ডে ইসলাম শিক্ষার জন্য ৩৭ টি ইসলামিক প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রটারডাম শহরে একটি মুসলিম মাধ্যমিক স্কুল আছে । প্রায় সব কটি শহরে রয়েছে মসজিদ।

সাগর খান নামের এক বাঙ্গালী যিনি ১২ বছর ধরে হলান্ডে বসবাস করছেন তার মতে মুসলমান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে কারণ তাদের জন্মহার বেশী এবং আগামী ১০ বছর শেষে হলান্ডে মুসলমানদের অবস্থান অনেক শক্ত হবে। তার মতে হলান্ডে মুসলানদের প্রতি যে নেতিবাচক প্রচারণা চালনো হচ্ছে তা রাজনৈতিক কারণে । এছাড়া বিশ্বব্যাপী ইসলামের বিরোদ্ধে যারা সোচ্চার তারাই এর কলকাড়ি নাড়ছে। তার মতে মুসলমানরা হলান্ডে অনেক বড় ক্ষমতার অধিকারী হবে তা কিন্তু বেশী দুরে নয়। Geert Wilders Speaks: Anti-Koran Film "Fitna" (Part 1 of 2)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.