আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্বাচনী শোডাউনে এবার হেলিকপ্টার

আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এরই মধ্যে নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় হেলিকপ্টার নিয়ে শোডাউন করতে শুরু করেছেন। নির্বাচন এসে গেলে তা অনেক বেড়ে যাবে। বিত্তবান প্রার্থীদের কেউ কেউ বিভিন্ন কাজের অজুহাতে হেলিকপ্টার নিয়ে নির্বাচনী এলাকা ঘুরে আসছেন। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হচ্ছে। আলোচনায় সরগরম হয়ে উঠছে ভোটের বাতাস। সম্ভাব্য প্রার্থীদের আরও অনেকে এলাকায় শোডাউন করতে এরই মধ্যে হেলিকপ্টার কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। সর্বশেষ ১৭ আগস্ট ময়মনসিংহের ভালুকায় দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ভাগ্নে সরকারি দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী নজরুল ইসলাম খান বাবুল হেলিকপ্টার নিয়ে শোডাউন করেন। এ নিয়ে ভালুকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। উৎসুক জনতা একনজর হেলিকপ্টার দেখতে সেখানে ভিড় করে। আমাদের ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, বাবুল চার ঘণ্টার জন্য আরএনআর এভিয়েশন থেকে হেলিকপ্টারটি নিয়েছেন। তিনি জানান, ঈদের পর ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে তীব্র যানজট ছিল। যানজট এড়িয়ে এলাকায় যেতেই তিনি হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন। এর আগে ৩ আগস্ট সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী, মাদারীপুর-৩ (কালকিনি) আসনের এমপি সৈয়দ আবুল হোসেন আরএনআর এভিয়েশনের একটি হেলিকপ্টার ভাড়া নিয়ে কালকিনি যান। জাতীয় পার্টির মহাসচিব, বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনের এমপি এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার সম্প্রতি দুবার ভাড়া করা হেলিকপ্টার নিয়ে নিজ নির্বাচনী এলাকায় যান। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান রাজধানীতে নির্বাচন করলেও তিনি মাঝেমধ্যে নিজের কোম্পানির হেলিকপ্টার নিয়ে নোয়াখালীতে গ্রামের বাড়িতে যান।

পর্যবেক্ষকরা জানান, দেশের প্রত্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় যখন হেলিকপ্টার চক্কর দিয়ে নির্দিষ্ট কারও বাড়ির পাশের মাঠ স্পর্শ করে তখন সারা এলাকায় ঔৎসুক্যের সৃষ্টি হয়। ভোটের প্রচারণায় এটি একটি নতুন মাত্রা যোগ করে। জানা গেছে, এলাকার মানুষের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করতেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা হেলিকপ্টার নিয়ে নিজেদের নির্বাচনী এলাকা সফর করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হেলিকপ্টার একটি দামি ও আকর্ষণীয় বাহন হওয়ায় এর প্রতি সাধারণ মানুষের অন্য রকম আগ্রহ রয়েছে। যে কোনো এলাকায় হেলিকপ্টার নিয়ে কেউ গেলে সেখানে উৎসুক জনতা ভিড় জমায়। এতে সাধারণ মানুষ প্রভাবিতও হয়। শুধু তাই নয়, নিজেদের সমর্থন বাড়াতেও তা সহায়তা করে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সাধারণত দৃষ্টিসীমার খুব কাছ দিয়ে হেলিকপ্টার উড়ে গেলে গ্রামের মানুষ উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ফলে তা অনেক দিন তাদের স্মৃতিতেও থাকে। এ জন্য নিজেদের সমর্থন বাড়াতে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা এই কৌশল বেছে নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। যেসব নেতা রাজধানী ঢাকা বা বিভাগীয় শহরে বসবাস করেন অথচ তাদের অধিকাংশের নির্বাচনী এলাকা প্রত্যন্ত অঞ্চলে, তারা যানজট এড়িয়ে ভোটারের সংস্পর্শে যেতে এবং কম সময়ে আবাসস্থলে ফিরে আসতে হেলিকপ্টার বেছে নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

ভাড়ায় হেলিকপ্টার : জানা গেছে, রাজনৈতিক নেতারা এসব হেলিকপ্টার বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে ভাড়া নেন। আবার কারও কারও নিজেদের মালিকানায় হেলিকপ্টার রয়েছে। তা নিয়ে তারা নির্বাচনী এলাকায় যাতায়াত করছেন। দেশে বেসরকারি অন্তত আটটি কোম্পানির নিজস্ব হেলিকপ্টার রয়েছে। তবে এসবের অধিকাংশ নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া বর্তমানে বেসরকারি খাতে তিনটি কোম্পানি বাণিজ্যিকভাবে হেলিকপ্টার ভাড়া দিয়ে থাকে। এগুলো হলো স্কয়ার গ্রুপের স্কয়ার এভিয়েশন, সিকদার গ্রুপের আরএনআর এভিয়েশন ও মেজর (অব.) মান্নানের সাউথ এশিয়ান এভিয়েশন লিমিটেড। এর বাইরে মেঘনা গ্রুপের হেলিকপ্টারও ভাড়া দেওয়া হয়। জানা গেছে, নতুন আরও কয়েকটি কোম্পানি এভিয়েশন ব্যবসা শুরু করতে সরকারের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে।

জানা গেছে, হেলিকপ্টার ব্যবহারে অন্যান্য বাহনের তুলনায় সরকারের রাজস্ব আদায়ও বেশি হয়। হেলিকপ্টার ভাড়া নিতে হলে মোট ভাড়ার সঙ্গে আরও ১৫ শতাংশ ভ্যাট নগদে পরিশোধ করতে হয় ব্যবহারকারীকে, যা সরাসরি সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হয়।

হেলিকপ্টারের ভাড়া : স্কয়ার এভিয়েশনের ৬ আসনের হেলিকপ্টারের ভাড়া ঘণ্টায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ ছাড়া আসা-যাওয়া প্রতিবারে ভ্যাট ১৫ শতাংশ। গন্তব্যে এক ঘণ্টা অবস্থান করলে গুনতে হয় আরও ১০ হাজার টাকা। সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইনসের ৩ সিটের হেলিকপ্টারের ভাড়া ঘণ্টায় ৫৫ হাজার টাকা। রয়েছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। যাওয়া-আসা করলে কিছু ছাড় দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে ভাড়া ৯৯ হাজার টাকা। সঙ্গে ভ্যাট ১৫ শতাংশ। কোথাও অবস্থান করতে হলে প্রথম ঘণ্টায় ৩ হাজার, পরের ঘণ্টা ৫ হাজার টাকা। নূ্যনতম ৩০ মিনিটের জন্য ভাড়া নিতে হবে। সিকদার গ্রুপের আরএনআর এভিয়েশনের ৭ সিটের হেলিকপ্টার ভাড়া ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। সঙ্গে ভ্যাট ১৫ শতাংশ। ৩ সিটের ভাড়া ঘণ্টায় ৭২ হাজার টাকা। ১ ঘণ্টা অবস্থান করলে দিতে হবে ৭ হাজার টাকা। প্রতিদিন তাদের চারটি হেলিকপ্টার চলাচল করে।

বাড়ছে ব্যবহার : হেলিকপ্টারের বাণিজ্যিক ব্যবহার বাড়ছে। দিন দিন বাড়ছে যাত্রীসংখ্যাও। আগে করপোরেট কোম্পানিগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তা এবং তাদের ক্রেতারা এই সেবা নিলেও এখন সমাজের উচ্চবিত্তদের মধ্যেও হেলিকপ্টার ভ্রমণে আগ্রহ বাড়ছে। চড়া দামে টিকিট কেটে হেলিকপ্টার ব্যবহার করছেন তারা। আগামী কয়েক মাসে নির্বাচনী শোডাউনের ক্ষেত্রে ব্যাপক হারে হেলিকপ্টারের ব্যবহার হবে বলে আশা করছেন হেলিকপ্টার কোম্পানির সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে বিদ্যমান হেলিকপ্টার কোম্পানিগুলো আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। নতুন কয়েকটি কোম্পানিও নির্বাচনী ডামাডোলের আগেই সরকারের অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.